ঠাকুরগাঁওয়ে বিলুপ্তির পথে শিলপাটা

ঠাকুরগাঁওয়ে রান্নায় রসদ জোগানো বিভিন্ন মসলা মিহি বা গুড়া করার জন্য একসময় শিলপাটার বিকল্প বলতে কিছু ছিল না। প্রতিটি পরিবারে এ শিলপাটার ব্যবহার ছিলো ব্যাপক। সময়ের বিবর্তন ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রবাহে ধীরে ধীরে কমতে থাকে শিলপাটার ব্যবহার।

ঠাকুরগাঁওয়ে শিলপাটা এখন বিলুপ্তির পথে। কেবল মসলাই নয়, মেহেদি পাতা বাটা থেকে শুরু করে নানান ধরণের খাবারের ভর্তা বাটার কাজটিও সারা হতো শিলপাটায়। বর্তমানে বাসাবাড়িতে শিলপাটার খুব একটা ব্যবহার চোখে না পড়লেও বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠানে বাবুর্চির গ্রুপে আসা মহিলারা এসব অনুষ্ঠানের রান্নার মসলা শিলপাটাতেই বাটাবাটি করে থাকে। আর তাই এসব অনুষ্ঠানের খাবারের স্বাদই ভিন্ন। অথচ শিলপাটায় বাটা মসলার স্বাদ আধুনিক সমাজের অনেকেই ভুলে গেছেন। শিলপাটার বদলে এখন ব্ল্যান্ডার মেশিনেই চলে মসলা বাটার কাজ। আর প্যাকেট মসলাতো আছেই। শিলপাটার ব্যবহার কমে যাওয়ার পাশাপাশি পাটা ধারকাটা কারিগরদের জীবিকার পথও অনেকটা রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছে।

আর যারা আছে তারা মানবেতর জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনরকমে টিকে রয়েছে। আদা, হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, জিরা, পেয়াজ বাটার জন্য শিলপাটা ছাড়া আর কোন উপকরণ ছিলো না। শত ব্যস্ততায় ঘরের গৃহিণীরা চুলোয় রান্না শুরুর আগে শিলপাটায় মসলা বাটাবাটির কাজটি সেরে নিতেন। প্রতিটি ঘরে শিলপাটার ব্যবহার ছিল সচল। সময়ের বিবর্তনে এখন রান্নায় প্যাকেটের গুঁড়ো মসলা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। শিলপাটায় মসলা বাটার কথা ওঠলে ভ্রু কুঁচকে ওঠেন গৃহিনীরা।

ঠাকুরগাঁও গ্রাম-গঞ্জে ও শহরের নিম্নবিত্ত পরিবারে এখনো শিলপাটার ব্যবহার রয়েছে। আর মধ্যবিত্ত ও অভিজাত পরিবারে বাজারের প্যাকেট মসলা আর আদা, পেঁয়াজ, রসুন, জিরা পিষানোর জন্য ইলেকট্রনিক্স ব্ল্যান্ডার মেশিন শিলপাটার জায়গা দখল করে নিয়েছে। শিলপাটায় একসময় মেহেদি পাতা বাটা হতো। এখন সেটিও টিউব মেহেদীর দখলে। এদিকে ঠাকুরগাঁও দেড় শতাধিক হার্ডওয়ার দোকানের মধ্যে ১০/১৫টি দোকানে শিলপাটা চোখে পড়বে। হার্ডওয়ার দোকানিরা জানান শিলপাটার চাহিদা কমে যাওয়ায় এটি এখন আর সব দোকানে খুব বেশি একটা রাখা হয় না।
অন্যদিকে একসময় ঠাকুরগাঁও প্রতিনিয়ত দেখা মিলতো শিলপাটা ধারকাটা কারিগরদের। হাতুড়ি, ছেনি নিয়ে এসব কারিগররা বিভিন্ন বাড়ির সামনে গিয়ে হাকডাক তুলতো পাটা খোদাইবেন-ডেকছির কাছা লাগাইবেন । এখন আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। শিলপাটা ধারকাটা কারিগরদের অনেকেই মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। ঠাকুরগাঁও সদর মুন্সিপাড়া বাসিন্দা বিজলি শিলপাটা ধারকাটা কারিগর মতিন, হোসেন, সুলতান জানান, আগে পাটা খোদাই কাজের কদর ছিল এখন কমে গেছে। অনেকেই এ কাজ ছেড়ে যুগালী, ইট ভাঙার কাজ করছে। কেউ কেউ বাপ-দাদার এ পেশায় টিকে থাকলেও মানবেতর জীবন পার করছে।

জানুয়ারী, ১২, ২০২১ at ১৩:১৪:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এএ/এমএমআর