ঝিনাইদহে টাকা ছাড়া মিলছে না বিনামুল্যের বই

ঝিনাইদহে টাকা না দিলে পাওয়া যাচ্ছে না মাদ্রাসার সরকারী বই। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা অভিযোগ করেন, সেশন ফি ও ভর্তি ফিসহ নানা অজুহাতে নেওয়া হচ্ছে এ টাকা। আর পুরাতন বই জমা দিতে না পারলে বই প্রতি নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। সদর উপজেলার ঘোড়শাল হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা গিয়ে মিলেছে এমন তথ্য। জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন তদন্ত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। আর অভিযুক্ত সুপার বলছেন- টাকা দিয়ে বই বিতরনের বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভর্তি ফির টাকা ছাড়া আর কিছু নেওয়া হচ্ছে না। এ দিকে আজ শিক্ষা অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দু সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ভুক্তোভোগি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানান, উৎসব ছিলো বিনামুল্যে বই পাওয়ার। আর নতুন বই পাওয়ার আনন্দে এসেছিলো ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ঘোড়শাল হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। সে আনন্দে ভাটা পড়ে মাদ্রাসার সুপার মোঃ ওয়াজেদ আলী যখন জানান, সরকারী বই নিতে হলে ভর্তি ফির টাকা দিতে হবে। তা না হলে কোন সরকারী বই দেওয়া হবে না। তখন দরিদ্র অনেক শিক্ষার্থী টাকা পরিশোধ করতে না পেরে নতুন বই নিতে পারেনি বলে তারা অভিযোগ করেন। অনেকে আবার দাবিকৃত ৩৫০ থেকে ৭৫০ টাকা পরিশোধ করে মাদ্রাসা থেকে নিয়েছে নতুন বই। আবার মাদ্রাসা কতৃপক্ষ পুরাতন বই জমা দেওয়া বাধ্যতামুলক করে একটি বই হারিয়ে গেলে তার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে ৫০ টাকা।

গত শনিবার মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, সাংবাদিকের ক্যামেরা দেখে মাদ্রাসার সুপার ওয়াজেদ আলীসহ অনান্য শিক্ষকেরা দ্রুত টাকা লুকিয়ে ফেলে অপ্রস্তুত হয়ে যান। তখন কয়েকজন বই নিতে আসা শিক্ষার্থী থাকলেও তাদেরকে কৌশলে পাঠিয়ে দেন তারা।

আর ঘোড়শাল গ্রামের কৃষক নুর ইসলামের ৭ম শ্রেনীর মাদ্রাসার ছাত্রী রিতু সাড়ে তিনশত টাকা পরিশোধ করেই পেয়েছেন নতুন বই । অপরদিকে, হত দরিদ্র ইসাহাকের ৮ম শ্রেনীর কন্যা শান্তা টাকা দিতে না পারার কারনে নতুনবই থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে তারা জানান। এ টাকা নেওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে এলাকার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা সুপারসহ জড়িতদের তদন্ত করে শাস্তি চেয়েছেন ।আরও শিক্ষার্থীরা জানান, টাকা হলে স্যারেরা নতুন বই আমাদের দিচ্ছে না। বলছে টাকা দেও, নতুন বই নেও।

আর অভিযুক্ত সুপার ওয়াজেদ আলী জানান, টাকার বিনীময়ে বই বিতরণ অস্বীকার করে বলেন, বিনামুল্যে বই দেওয়া হচ্ছে। ভর্তি ফির টাকা নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ভুল বুঝে এমন রটাচ্ছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পারভেজ মাসুদ লিল্টন জানান, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন যারা করছে তাদের চিন্থিত করে তদন্ত করে শাস্তি চেয়েছেন। সট-২, পারভেজ মাসুদ লিল্টন, চেয়ারম্যান, আর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাফফর হোসেন পলাশ জানান, শিক্ষা অফিসের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে জড়িত সুপারসহ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি সহ দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে ; আমরা তিনদিনের ভিতরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবো।

অপরদিকে, জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, ঘোড়শাল হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় টাকা ব্যাতিত বই দিচ্ছে না সে বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছি। প্রমানিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানুয়ারী, ০৪, ২০২১ at ১৭:২০:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/জেপি/এমআরএইস