কাদের ভাই নেই; বদি ভাই বেঁচে থাকবেন চিরকাল

অভিনেতা আবদুল কাদের মারা গেছেন। ঢাকা রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার ২৭শে ডিসেম্বর, ২০ সকাল ৮ টা ২০ মিনিটে। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহির রাজিউন) ফিরলেন না এবার আর পর্দার জনপ্রিয় ’দুলাভাই’ বা সেই কালজয়ী চরিত্র ‘বদি’ দর্শকদের মাঝে। ফিরলেন না পরিবারে, ফিরলেন না দপ্তরে হাসিমুখ নিয়ে।

দীর্ঘদিন ক্যান্সার এবং পরবর্তীকালে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ছাড়লেন এপারের বন্ধন। তাকে নিয়ে অসংখ্য মানুষের সহস্র স্মৃতি। তেমনই একজন হানিফ সংকেত। হানিফ সংকেত নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলেন এভাবে।

“প্রায় পঁচিশ বছর ধরেই তিনি ‘ইত্যাদি’র অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্ব ‘মামা-ভাগ্নে’র ‘মামা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি নিজে যেমন এই চরিত্রটিকে ভালোবাসতেন, তেমনি দর্শকদের কাছেও প্রিয় ছিলো এই ‘মামা’ চরিত্রটি। অত্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক ও সুশৃঙ্খল জীবন-যাপন করতেন কাদের ভাই। দেখে কখনও মনেই হয়নি এত বড় একটি রোগ তাঁর শরীরের এতটা ক্ষতি করে ফেলেছে। গত ৩০ অক্টোবর প্রচারিত ‘ইত্যাদি’ই ছিলো কাদের ভাইয়ের জীবনের শেষ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটির ধারণের সময়ই কাদের ভাইকে কিছুটা অসুস্থ ও মলিন দেখাচ্ছিলো।

আগের সেই উচ্ছ্বাস ছিলো না। ধারণ শেষে যাবার সময় বলেছিলেন তাঁর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। দোয়া চাইলেন। এরপর হঠাৎ করে শুনলাম তিনি চেন্নাইয়ের হাসপাতালে। ভিডিও কলে কথা হলো। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, নাকে অক্সিজেন মাস্ক। কাদের ভাইয়ের এই চেহারা দেখবো কখনও কল্পনাও করিনি। আমাকে দেখে আবেগে কেঁদে ফেললেন। এরপর চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে নামার পর আবার কথা হলো। বললেন, ‘দেশের মাটিতে এসেছি, দোয়া করবেন যাতে আবার একসাথে কাজ করতে পারি।’ আবারও সেই কান্নাভেজা কণ্ঠ। আরো ৬টি মাস বাঁচতে চেয়েছিলেন কাদের ভাই কিন্তু মৃত্যু তাকে সে সুযোগ দেয়নি। এত দ্রুত যে তিনি এতটা অসুস্থ হবেন এবং আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন তা কল্পনাও করিনি।

অভিনেতা আবদুল কাদের ১৯৫১ সালে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আবদুল জলিল ও আনোয়ারা খাতুনের সন্তান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন তিনি। কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষকতা দিয়ে। তারপর ১৯৭৯ সাল থেকে ‘বাটা’ কোম্পানিতে চাকরি করেন। সেখানে ছিলেন ৩৫ বছর।

হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিক নাটকে ‘বদি’ চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক পরিচিতি পান আবদুল কাদের। জনপ্রিয় এই অভিনেতা একইসঙ্গে টিভি নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্র ও সিনেমায় অভিনয় করেছেন। দেশের অন্যতম পরিচিত মঞ্চ নাটকের দল ‘থিয়েটার’র সদস্য হয়ে দলটির ৩০টি প্রযোজনায় অভিনয় করেছেন তিনি। যেগুলোর মধ্যে পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়; তোমরাই; স্পর্ধা; মেরাজ ফকিরের মা; দুই বোন এবং এখনো ক্রীতদাস উল্লেখযোগ্য। অভিনয় করেছেন সবসময় একজন হাসিখুশী মানুষ হিসেবে। ফিরে আসবেন না আমাদের সকলের প্রিয় অভিনেতা আব্দুল কাদের কিন্তু তিনি বেঁচে থাকবেন সকলের মাঝে “বদি” ভাই হিসেবে চিরকাল।

লেখক সাংবাদিক
মোঃ ফিরোজ খান,
ঢাকা, বাংলাদেশ