কোটচাঁদপুরে ডাক্তার ফাহিমের উত্থান ও সার্জন বনে যাওয়ার নেপথ্যের গল্প!

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ক্লিনিকে প্রসূতি মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বেরিয়ে আসছে ডাক্তার ফাহিম উদ্দীনের উত্থান ও সার্জন বনে যাওয়ার নেপথ্যের গল্প। সেই সাথে আসছে তার নানা অনিয়মের চিত্র।

গত ৪ নভেম্বর কোটচাঁদপুৃর নার্সিং হোমে ডাঃ ফাহিম উদ্দীন অঞ্জনা (২২) নামের এক প্রসূতিকে সিজারিয়ান অপারেশন করেন। ছাড়পত্র নিয়ে ওই গহবধূ বাড়িতে যাওয়ার দুই দিন পর তিনি আবারও অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়।

এর এগারো দিনের ব্যবধানে পৌর শহরের বড়বামনদাহ গ্রামের মিতা নামে আরো এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরো তিন পরিবার। যা গত ২৪ নভেম্বর দেশ দর্পণসহ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর থেকেই বেরিয়ে আসছে ডাঃ ফাহিমের নানা অনিয়মের চিত্র।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ডাঃ ফাহিম উদ্দীন ২০০০ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এম.বি.বি.এস পাশ করেন। এরপর তিনি দেশের বেশ কয়েকটি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন। পরবর্তিতে ২০০৫ সালের দিকে কোটচাঁদপুর কর্ণফুলী ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে চাকুরী নেন। পরিচিতি পায় আল্ট্রাসনোগ্রাম ডাক্তার হিসাবে। শক্ত করতে থাকে নিজের অবস্থান। চালতে থাকেন তার কুট-কৌশল।

কর্ণফুলী থেকে বের হয়ে এক সহকারীকে সাথে নিয়ে নিজেই বনে যান ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিক। প্রসার ঘটে ডায়াগনষ্টিক ব্যবসার। এতেও সন্তুষ্ট নয় ডাঃ ফাহিম। অধিক লাভের আশায় ওই প্রতিষ্ঠান ছাড়তে তাল-বাহানা শুরু করেন।

অবশেষে ২০১৮ সালের দিকে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানকে মাঝপথে রেখে নিজের পাওনা বুঝে নিয়ে ছিটকে পড়েন। এরপর শুরু হয় কোটচাঁদপুর শহরের বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে তার পদচারণা। এ সব প্রতিষ্ঠানে তিনি আল্ট্রাসনো গ্রাম ও সিজারিয়ান অপারেশনসহ বিভিন্ন ধরণের অপারেশন করতে থাকেন।

এদিকে, কোটচাঁদপুরে ক্লিনিক গুলোয় সার্জনের চাহিদা থাকায় অল্প দিনেই বনে যান সার্জন। সম্প্রতি ডাক্তার ফাহিম উদ্দিনের সিজারিয়ান অপারেশন করা প্রসূতি রোগীর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া একই অপারেশন করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আরো তিনটি পরিবার।

সূত্র জানায়, প্রকাশ না হওয়া আরো অনেক ভুক্তভোগী আছে যারা ডাক্তার ফাহিমের শিকার হয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে তার এইসব অপারেশন করার বৈধতা নিয়ে। জনমনে প্রশ্ন একজন মেডিসিন আলট্রাসনোগ্রাম করা ডাক্তার এনেসথেসিওলজিষ্ট (অজ্ঞান ডাক্তার) ছাড়া কিভাবে অপারেশন করে!

আর এ ভাবে কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে বীরদর্পে কোটচাঁদপুর-মহেশপুর উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে করে যাচ্ছেন অপারেশন। অনিয়মের মাধ্যমে নিজের অবস্থান শক্ত করে রোগী ও তার স্বজনদের সঙ্গে অসদাচরণ করা তার নিত্ত-নৈমত্তিক ঘটনা।

এই ঘটনায় সিভিল সার্জন অফিস একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও তদন্তের আগেই তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন হয়। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।