সিরাজগঞ্জে পৌরসভা নির্বাচনে সম্ভাব্য মেয়র-প্রার্থীরা গণসংযোগে ব্যস্ত

শীতকে অপেক্ষা করে সিরাজগঞ্জের ৭টি পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে। ৭টি পৌরসভার মধ্যে শাহজাদপুর পৌরসভার তফসিল ঘোষণা হয়েছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর এই পৌরসভার নির্বাচন হবে। নির্বাচন উপলক্ষে পৌর এলাকায় নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে-ময়দানে ও পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন দোকান-পাঠ, মার্কেটে সাধারণ মানুষদের সাথে আগাম দেখা করে প্রচার-প্রচারনায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। অনেকেই ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়, উঠান বৈঠক ও কর্মী সমাবেশসহ নিজের ছবি সম্মিলিত লিফলেট নিয়ে ব্যাপক গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সমর্থন আদায়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। আর ভোটাররা বলছেন, পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই তারা এবার বেছে নেবেন। সবচেয়ে বেশি দৌড় ঝাপ চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে। কোনো কোনো পৌরসভায় মেয়র পদে ৬-৭ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে নেমেছেন। মনোনয়ন পেতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও বসে নেই। বাড়ীতে বাড়ীতে ভোট চাচ্ছেন। ক্ষমতাশীনরা কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতাদের সঙ্গে লবিংয়ের পাশাপাশি এলাকায় ওয়ার্ড ভিত্তিক চালাচ্ছেন গণসংযোগ। সেই সাথে বসে নেই বর্তমান মেয়ররাও। বর্তমান মেয়ররা নিজেদের বিগত বছরের অর্জনের ফিরিস্তি তুলে ধরে আগামী নির্বাচনে সমর্থন চাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। সম্ভব্য প্রার্থীদের প্রতিযোগিতা চলায় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে নেতাকর্মীদের মধ্যে তত উৎসাহ বাড়ছে। সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: আবুল হোসেন বলেন, জেলায় ৭টি পৌরসভার মধ্যে শাহজাদপুর পৌরসভা বাদে বাকি ৬টি পৌরসভায় সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। বর্তমান মেয়রদের মেয়াদের পাঁচ বছর শেষ হতে যাওয়ায় এসব পৌরসভায় আগামী ডিসেম্বরে ভোটের কথা রয়েছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

সিরাজগঞ্জ পৌরসভা : এই পৌরসভাকে নাগরিকদের নিরাপত্তাসহ মাদক ওসন্ত্রাসমুক্ত একটি নানন্দিক পৌরসভা গড়ে তুলতে মনোনয়ন প্রত্যাশী মেয়র প্রার্থীরা মাঠে দৌড় ঝাপ শুরু করেছেন। বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন পৌরবাসীদের। প্রতিশ্রুতিতে রয়েছে পৌরসভা দুর্নীতিমুক্ত, পরিচ্ছন্ন, জবাবদিহিমুলক পৌরসভা গড়ে তুলতে। সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে পৃথক পৃথকভাবে গণসংযোগ ও মতবিনিময়ের মধ্যদিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। ১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা। পৌর এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ১,১৫,৬৩৭ জন। পুরুষ ৫৬,৯২৯ জন ও মহিলা ৫৮,৭০৮ জন। ক্ষমতাশীন দলের মেয়র প্রার্থী ৭ জন। প্রার্থীরা হলেন, জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ্ব এ্যাড. কে.এম হোসেন আলী হাসান, সহ-সভাপতি ও বর্তমান মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা, সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা হাজী ইসাহাক আলী, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ তালুকদার, সাবেক ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র ও জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম আহম্মেদ, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক দানিউল হক দানি মোল্লা। বিএনপি’র প্রার্থী ৫ জন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন, জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুর কায়েস সবুজ, রাশিদুল হাসান রঞ্জন, মুন্সি জাহিদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান, জেলা যুবদলের সভাপতি মির্জা আব্দুল জব্বার বাবু এর নাম জানা গেছে। অন্য দলের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারনাসহ কোন গণসংযোগ দেখা যায়নি। তবে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি।

তাড়াশ পৌরসভা : প্রথম পৌরসভা নির্বাচনে এই পৌরসভার চিত্রও একইরকম। সবজায়গাতেই ভোটের হাওয়া। এখানকার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গণসংযোগ করছেন। নির্বাচিত হলে এ পৌরসভাকে মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলার আশার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন মেয়র প্রার্থীরা। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌর এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ১০.৮৫০ জন। পুরুষ ৫.৩০০ জন ও মহিলা ৫.৫৫০ জন। ক্ষমতাশীন দলের মেয়র প্রার্থী ৭ জন । মেয়র প্রার্থীরা হলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হক, সাধারণ সম্পাদক, সনজিত কর্মকার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রজত ঘোষ, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাাদক ও সদর িউপি চেয়ারম্যান বাবলু শেখ, মৎস্যজীবি লীগের সভাপতি আরিফুল ইসলাম, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী বিদ্যুৎ ও তাড়াশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক মির্জা শামসুল ইসলাম। অরদিকে উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব আব্দুল বারিক খন্দকার ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মুনসুর রহমান বাচ্চু।

বেলকুচি পৌরসভা : বেলকুচি পৌরসভার বাজার-পাড়া-মহল্লায় মেয়র প্রার্থীদের পদচারণায় উৎসব মুখর পরিবেশে গণসংযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। আর যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত ভোটাররা। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌর এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ৫৭,৫৯৭ জন। পুরুষ ২৯,৯৯২ জন ও মহিলা ২৭,৬০৫ জন। ক্ষমতাশীন দলের মেয়র প্রার্থী ৩ জন । মেয়র প্রার্থীরা হলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আশানুর বিশ্বাস, পৌর আওয়ামীলীগের সদস্য আব্দুল মজিদ খান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক সাজ্জাদুল হক রেজা। এখন পর্যন্ত কোন দলের প্রচার-প্রচারনা দেখা যায়নি।

রায়গঞ্জ পৌরসভা: পৌর নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যাচ্ছে রায়গঞ্জ পৌরসভায়। একদিকে প্রার্থীরা চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা, অন্যদিকে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় চলছে প্রার্থী নির্বাচনে ভোটারদের আলোচনা। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌর এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ১১.৮০০ জন। পুরুষ ৫,৭২৫ জন। মহিলা ৬,০৭৫ জন। ক্ষমতাশীন দলের মেয়র প্রার্থী ৪ জন। প্রার্থীরা হলেন, উপজেলা আ’লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র আব্দুল্লাহ আল-পাঠান, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক আখসারুল আলম খোকন, পৌর আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মাহমুদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এম.এম হাসানুজ্জামান সুলতান।বিএনপি’র প্রার্থী হলেন, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম। (সতন্ত্রপ্রার্থী) সাবেক মেয়র মোঃ মোশারফ হোসেন এর নাম পাওয়া গেছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত অন্য কোন দলের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারনাসহ গণসংযোগ দেখাযায়নি।

শাহজাদপুর পৌরসভা : প্রথম ধাপে নির্বাচন আগামী ২৮ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণা হওয়ায় এই পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিটি পাড়া মহল্লা সরগরম হয়ে ওঠেছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায়। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌর এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ৫৪,৬০২ জন। পুরুষ ২৭,৫২২ জন ও মহিলা ২৭,০৮০ জন। ক্ষমতাশীন দলের মেয়র প্রার্থী ৮ জন। প্রার্থীরা হলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র হালিমুল হক মিরু, সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুস্তাক আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ আব্দুস সালাম বেপারী, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তরু লোদী, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম শাহু, পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মাহবুবে ওয়াহিদ শেখ কাজল, কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্য-নির্বাহী সদস্য আব্দুর রহিম। বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী ৪ জন। প্রার্থীরা হলেন, শাহজাদপুর পৌর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক ইমদাদুল হক নওশাদ, যুগ্ম-আহবায়ক আলহাজ্ব মোঃ আইয়ুব আলী, উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল ইসলাম রাজা, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মাহমুদুল হাসান সজল। বাংলাদেশ ইসলামী যুব আন্দোলন শাহজাদপুর উপজেলা শাখার সভাপতি মুহাম্মদ ইমরান খন্দকার।

কাজিপুর পৌরসভা : শীতকে উপেক্ষা করে নির্বাচনী মাঠে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কাজিপুর পৌরসভার মেয়র প্রার্থীরা। উঠান বৈঠক ও কর্মীসভাসহ দিন-রাত ভোটারদের কাছে কাছে ছুটে চলছেন। ভোটারদের হাতে হাত মিলিয়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিসহ গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌর এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ১২.৬৩৩ জন। পুরুষ ৬,১০২ জন ও মহিলা ৬.৫৩১ জন। ক্ষমতাশীন দলের মেয়র প্রার্থী ৩ জন । মেয়র প্রার্থীরা হলেন, বর্তমান মেয়র হাজী নিজাম উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সাজেদুল করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক হান্নান তালুকদার, স্থানীয় স্কুল শিক্ষক ফরিদ মাস্টার ও আমিন সরকার। এখন পর্যন্ত এই পৌরসভায় অন্য কোন দলের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারনাসহ কোন গণসংযোগ দেখা যায়নি।

উল্লাপাড়া পৌরসভা : এই পৌরসভায় থেমে নেই পৌর নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারনা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। উল্লাপাড়া পৌরসভা ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌর এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩৭,১০২ জন। পুরুষ ১৮,৬০১ জন ও মহিলা ১৮,৫০১ জন। ক্ষমতাশীন দলের মেয়র প্রার্থী ৭ জন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন, পৌর আ’লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র এস.এম নজরুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আরজু, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মাহবুব সারোয়ার বকুল, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আরিফুল ইসলাম উজ্জ্বল, উপজেলা আ’লীগের সদস্য জাহিদুজ্জামান কাকন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম, সাবেক কাউন্সিলর আহসান আলী সরকার। এখন পর্যন্ত এই উপজেলায় অন্য কোন দলের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারনাসহ কোন গণসংযোগ দেখা যায়নি।জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান বাচ্চু জানান, এই পৌরসভায় বিএনপির সমর্থক বেশী রয়েছে, আশা করি দল যাকে মনোনয়ন দিবে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে এবং তিনি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হবেন। জেলা আওয়ামীলীগের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি আলহাজ্ব এ্যাড. কে.এম হোসেন আলী হাসান বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে, তাকে জয়ী করার জন্যই আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে। জেলা আওয়ামীলীগের (ভারপ্রাপ্ত) সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, কেন্দ্র থেকে পৌরসভা নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে দলের অনেকেই মনোনয়নের আশায় মাঠে সরব হয়েছেন। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার জন্যই কাজ করবে নেতাকর্মীরা। দলের বাহিরে কেউ না।