ফুটবল ঈশ্বর নেই!

চির ছুটিতে চলে গেলেন ফুটবলের ঈশ্বর ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা। বুধবার আর্জেন্টিনার তিগ্রেতে নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। আর্জেন্টিনা ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তার মৃত্যুতে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ গভীর শোক প্রকাশ করে দেশটিতে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন।

মাঠে ফুটবল ছাড়ার পর কয়েকবার মৃত্যুর দুয়ারে চলে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের আকুতিতে সৃষ্টিকর্তা জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ৩০ অক্টোবর ৬০তম জন্মদিন ঘুরে এলেন জিমনাশিয়া ক্লাব থেকে। তারপর হঠাৎ হাসপাতালে। মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হলো। পুনর্বাসন কেন্দ্রে ফিরলেন। সেখানেই হার্ট অ্যাটাক। আর্জেন্টিনার দৈনিক ক্ল্যারিন খবর দিলপৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা। আর ফিরবেন না আর্জেন্টিনার ফুটবল ঈশ্বর। গোলার্ধের উল্টো দিকে, হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা এই বাংলাদেশের অগুণতি মানুষের মনে ফুটবলের নেশা জাগানো ‘রাজপুত্র’ চিরবিদায় নিয়েছেন।

কয়েক সপ্তাহ আগে অবসাদ, অ্যানিমিয়া এবং ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ নিয়ে বুয়েন্স আইরিসের লা প্লাতার একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিন পর দেখা গিয়েছিল, তার মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। সেজন্য বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল। নভেম্বরের শুরুতে সেখানেই ম্যারাডোনার জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছিল। ১৪ দিন আগে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন।

সেই সময় তার এজেন্ট জানিয়েছিলেন, নিজের রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইচ্ছুক তিনি। হাসপাতাল থেকে নেওয়া হয়েছিল একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে। সেখানেই গতকাল হার্ট অ্যাটাকের খবর দেওয়া হয় হাসপাতালে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছেও যায়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।

২৫ নভেম্বর। চলে যাওয়ার জন্য এই দিনটাই ঠিক করে রেখেছিলেন ডিয়েগো! ২০১৬ সালের এই দিনেই তো চলে গিয়েছিলেন ফিদেল ক্যাস্ত্রো। কিংবদন্তির এই কিউবান নেতাকে পিতা মানতেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তাকেও ফুটবলপাঠ দিয়েছিলেন তিনি।

আর্জেন্টিনোস জুনিয়রের হয়ে ১৬ বছর বয়সে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। জাদুকরী বাঁ পায়ে মাতিয়েছেন বার্সেলোনা, নাপোলি, সেভিয়া ও নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজ ক্লাব। তবে ম্যারাডোনা অমর হয়ে আছেন আর্জেন্টিনার জার্সিতে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে তার নেতৃত্বে দ্বিতীয় বিশ্বকাপের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। সেই বিশ্বকাপের পরই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ম্যারাডোনার অমরত্ব। সেই টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যারাডোনার দুটো গোলের কথা ফুটবল ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। প্রথমটি ‘হ্যান্ড অব গড’। রিপ্লেতে দেখা গিয়েছিল ম্যারাডোনার হাতে লেগে বল জালে জড়িয়েছিল। তবে সেই ম্যাচেই তার পরের গোল ছিল চোখজুড়নো। একের পর এক ফুটবলারকে কাটিয়ে গোল করেছিলেন তিনি, যা মুগ্ধতায় চিরভাস্বর ফুটবলপ্রেমীদের মনে।

পরের বিশ্বকাপেও দলকে ম্যারাডোনা নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। ১৯৯৪-এর যুক্তরাষ্ট্রের সেই বিশ্বকাপে ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়ার পর তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। ড্রাগের কারণে দীর্ঘ সময় ভুগতে হয়েছিল তাকে। ওজনও বেড়ে গিয়েছিল। মদ্যপানে আসক্তির জন্যও সমস্যায় পড়েছিলেন তিনি।

ইতালির নাপোলিকে আশির দশকে একাই টেনে তুলেছিলেন ম্যারাডোনা। দিয়েছিলেন লিগ শ্রেষ্ঠত্ব, যা এখনো মনে রেখেছে ক্লাবটি। ওই শহরে ম্যারাডোনা মানেই ঈশ্বর। তাদেরই একজন বর্তমান দলের খেলোয়াড় লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে বলেন, ‘আমি নাপোলিয়ান, নাপোলিতে আমার জন্ম, একজন নাপোলিয়ান হিসেবে আমার ফুটবল ঈশ্বর একজনইতিনি হলেন ম্যারাডোনা, ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা!

কে সেরা পেলে নাকি ম্যারাডোনা এই বিতর্কে বিভক্ত সারা বিশ্ব। ২০০০ সালে এক অনলাইন জরিপে শতাব্দীর সেরা ফুটবলার হয়েছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। পেলে গতকাল বলেছেন, ‘বন্ধু, তোমার সঙ্গে একদিন স্বর্গে ফুটবল খেলব।’ ‘ফুটবল ঈশ্বর’ ব্রহ্মা- ছেড়ে ঈশ্বরের কাছে চলে গেছেন। তবে তিনি অমর হয়ে থাকবেন কোটি ভক্তের হৃদয়ে।

২৬ নভেম্বর, ২০২০ at ১১:৫৪:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেরু/এমএআর