দিনাজপুরে সুগন্ধী কাটারী ধান আবাদে কৃষকদের উৎসাহ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে

দিনাজপুর শস্য ভান্ডারের অপরিসীম স্থান। এখানে অন্যান্য শস্যের চেয়ে ধানের বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। সেই দিক থেকে এবার দিনাজপুর আমন মৌসুমে ধানের আশানারুপ ফলন লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু লক্ষ্য করা গেছে দিন দিন এই জাতের ধান চাষ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। কাটারী ধানের জন্য দিনাজপুর এক সময় বিখ্যাত ছিল। বর্তমানে এই ধানের চাষ দিনাজপুর ছাড়া অন্য কোন জেলায় আবাদ খুবই সামান্য। দিনাজপুর জেলায় বিভিন্ন জাতীয় কাঠারী ধানের সমাহার দেখা যায়, স্থানীয় কাটারী, জিরা কাটারী, ফিলিপাইন কাটারী, জটা কাটারী, চিনি কাটারী, বেগুন বিচি ও কালোজিরা। এই জাতীয় ধান স্থানীয় কাটারী নামে পরিচিতি। দিনাজপুর তিনটি উপজেলায় কাটারী ধানের চাষাবাদ বেশী। বিশেষ করে দিনাজপুর বিরল উপজেলা, সদর উপজেলা ও চিরিরবন্দর উপজেলায় এই ধানের চাষাবাদ হচ্ছে।

আরও পড়ুন:
লালপুরের আব্দুলপুর সরকারী কলেজের ৬ তলা ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন
ঠাকুরগাঁওয়ে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামুলক কর্মসুচি
কোটচাঁদপুরে ভূল অপারেশনে প্রসূতির মৃত্যু অভিযোগ

কৃষি সম্প্রসারন অফিসের তথ্য অনুসারে জেলায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার ৩৪৮ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৬ হাজার ৬২১ হেক্টর জমিতে চিকন ধানের ব্রী-৩৪ চাষাবাদ আর ১ লক্ষ ৫১ হাজার ০৮৭ হেক্টর জমিতে মোটা ধানের ব্রী-৫১,৫২ চাষাবাদ হয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে জেলায় সুগন্ধী কাঠারী ধানের চাষ ২৮৭০ হেক্টর জমিতে। দিনাজপুর জেলায় মোট আমন ধানের উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ১২ লক্ষ ১১ হাজার ৫৬৯ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চিকন ধান ব্রী-৩৪ উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ৯ লক্ষ ১১ হাজার ৭১৩ মেট্রিক টন আর মোটা ধান ব্রী-৫১,৫২ উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ২ লক্ষ ৯২ হাজার ৫৯৭ মেট্রিক টন। কাঠারী ধানের ক্ষেত্রে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭২৫৯ টন।

কৃষি সম্প্রসারন অফিসের তথ্য অনুসারে আরও এক নজরে দেখা যায়, ১৯১৭-১৯১৮ অর্থ বৎসরে দিনাজপুর জেলায় স্থানীয় কাটারী ৩১২০ হেক্টর জমিতে, ১৯১৮-১৯১৯ অর্থ বৎসরে ৩০০৪ হেক্টর জমিতে ও ১৯১৯-১৯২০ অর্থ বৎসরে ২৮৭০ হেক্টর জমিতে চাষ আবাদ হয়েছে।
দিন দিন কৃষকরা কাটারী ধান আবাদে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। ৪ নং শেখপুরা ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের চিড়াকুটির পাড়ায় কৃষক চিত্তরঞ্জন বলেন, চার বিঘা জমিতে কাটারী ধান আবাদ করেছি। ধানের সুরক্ষার জন্য বেশী পরিমানে বালাই নাশক ঔষুধ দিতে হয়েছে তাছাড়া ফলন কম প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ১৬ মন ধান পেতে পারি। যে পরিমান খরচ হয়েছে তাতে লাভ কম।

নিশ্চিন্তপুর গ্রামের ভাটপাড়ার আরেক কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, রোগবালাই বেশী হওয়াতে খরচও বেশী। ফলন কম। ধানের বীজ সরবরাহ কম। কৃষি অফিস থেকে এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয় নাই।

এই বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের জেলার উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ তৌহিদুল ইকবাল বলেন, স্থানীয় কাটারী ধানের চেয়ে ব্রী-৩৪ ধান অনেক ফলনশীল। স্থানীয় কাটারী ধান চাষে কৃষকের উৎপাদন খরচ উঠে না এবং রোগবালাই বেশী। যেখানে বিঘা প্রতি স্থনীয় কাটারী ১৪ মন থেকে ১৬ মন হয় সেখানে ব্রী-৩৪ ধান বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ২৮ মন পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাছাড়া বাজারে দামের ক্ষেত্রেও সমান মূল্য। কৃষকরা লাভের আশায় জমি চাষ করে। কৃষকদের উৎপাদনের খরচ উঠতে হবে। বর্তমানে কৃষকরা এই ধান চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে না ।

২৩ নভেম্বর, ২০২০ at ১৮:৫৫:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/পিআরজে/আরএইচ