কালীগঞ্জের অগ্রণী ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতি : তিন কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংক শাখার সাময়িক বরখাস্তকৃত ম্যানেজার শৈলেন বিশ্বাস, ক্যাশ অফিসার আব্দুস সালাম ও অস্থায়ী মাঠ সহকারী আজির আলীর বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশের সব স্থল ও বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে এ সংক্রান্ত বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

ব্যাংকটির সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক শৈলেন কুমার বিশ্বাস, অফিসার ক্যাশ আবদুস সালাম ও অস্থায়ী মাঠ সহকারী আজির আলী জাল কাগজপত্র তৈরি করে মৃত ব্যক্তি, শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও প্রবাসীসহ শত শত মানুষের নামে কৃষি ঋণ তুলে আত্মসাৎ করেন। ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ঘটনা প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হওয়ায় ওই তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরমধ্যে মাঠকর্মী আজির আলীকে অব্যহতি দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে তারা ঝিনাইদহের সিনিয়র সাংবাদিক আসিফ কাজল ও যুগান্তরের কালীগঞ্জ প্রতিনিধি শাহরিয়ার আলম সোহাগের নামে আদালতে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন।

এ ঘটনার পর ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বৃহস্পতিবার অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের জগন্নাথ বিশ্বাসের ছেলে শৈলেন ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই শাখা ম্যানেজার পদে যোগ দেন। তার বিরুদ্ধে আগেও নানা অনিয়ম-অভিযোগের তদন্ত হয়েছে।

এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোঠায় ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর কালীগঞ্জ শাখায় অফিসার ক্যাশ পদে যোগ দেন হরিণাকু- উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামের আবদুস সালাম। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার বিরুদ্ধে রাজশাহীতে খুন, চাঁদাবাজী, অপহরণ ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা থাকার পরও কি ভাবে তিনি ব্যাংকের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় চাকরী পেলেন তা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।

রাজশাহীতে তিনি বাইট্টা সালাম নামে পরিচিত ছিলেন বলেও জানা গেছে। চাকরী পাওয়ার পর তাকে ঋণ শাখার দায়িত্ব দেয়া হয়। ব্যাংক ম্যানেজার শৈলেন ও সালাম প্রতারক আজির আলীকে সাথে স্থানীয় একটি সুদে চক্রের সহযোগিতায় তারা জালিয়াত সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। কৃষকসহ কাল্পনিক গ্রহীতাদের নামে কাগজপত্র তৈরি করে এবং ভুয়া স্বাক্ষর করে তারা লাখ লাখ কৃষিঋণ উঠিয়ে আত্মসাত করেন।

এ ঘটনা চলাকালিন ব্যাংকের একাধিক এজিএম ও ডিজিএমও শাখা পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু কারও চোখে জালিয়াতির বিষয়টি এতদিন ধরা পড়েনি। শৈলেন বিশ্বাসকে চুয়াডাঙ্গায় বদলি করা হলে শাখায় নতুন ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগ দেন এসপিও নাজমুস সাদাত। তিনি যোগদানের পর ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে টাকা আত্মসাতের মহাজালিয়াতির খবর।

২০২০ সালের ২২ জুন যোগ দিয়ে নাজমুস সাদাত খাতা-কলমে ঋণ বিতরণের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল খুঁজে পাননি। একই বছর ৩০ সেপ্টেম্বর জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক শেখ দীন মহম্মদ শাখাটি পরিদর্শন করেন। কয়েকজন ঋণগ্রহীতার কাছে তিনি ফোন করলে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রকৃত ঘটনা জানতে পারেন। একই দিন আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে লাখ লাখ টাকার হিসাবের গরমিল বেরিয়ে আসে।

ঝিনাইদহ জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক শেখ দীন মহম্মদ বলেন, এলাকার ১১শ’ কৃষকের মাঝে পৌনে ৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। কত কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে তা অডিট শেষে জানা সম্ভব হবে। জড়িতরা গোপনে ২৭ লাখ টাকা ব্যাংকে ফেরতও দিয়েছেন। এদিকে গত বুধবার ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে এসএমই ঋণ বিতরণ মনিটরিং কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় শেখ দীন মহম্মদ ঘটনাটি জানান। একই সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পার্থ প্রতিম জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে গুরুত্ব সহকারে ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।

১৯ নভেম্বর, ২০২০ at ১৯:০৮:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/বিএইচ/এমএআর