পুলিশের খাতায় পলাতক লেবু-নছির: সিআইডিকে ধোকা দিতেই বাদী সেজেছে পর্ব-২

গায়ে এসিড ও পেট্টোল দিয়ে আগুন লাগানোর পর বাঁচার চেষ্টায় লেবুর ডান হাত ধরলে লেবু আবারো আগুনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এতে হত্যাকারী লেবুর ডান হাত পুড়ে যায়… মারা যাওয়ার আগে মায়ের কাছে শেষ কথা শাপলার

সিআইডিকে ধোঁকা দিতে বাদী সেজেছে লেবু-নছির

এমন ঘটনা ঘটেছে জয়পুরহাট জেলার কালাই থানার মোলামগাড়ীহাট গ্রামে। বগুড়ার মোকামতলার লেবু কর্তৃক হত্যার শিকার শাপলা খাতুনের মা ফিরোজা বেগমের দায়ের করা শাপলা হত্যা মামলা সূত্রে জানা যায়, বাদী হত্যার শিকার শাপলা খাতুনের মা ফিরোজা বেগম হত্যাকারী লেবু গংদের ভয়ে থানায় মামলা করতে না পেরে, বগুড়া জেলা ক অঞ্চল বিজ্ঞ আদালতে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এর ৭/৪(১) ধারা অনুযায়ী অপহরণের পর এসিড নিক্ষেপের মাধ্যমে মৃত্যু ঘটানোর অপরাধে লেবুকে প্রধান আসামী ও জয়পুরহাটে শাপলা হত্যার মামলার ভূয়া বাদী লেবুর বাবা নছির উদ্দিনকে দ্বিতীয় আসামী করে ৮ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। পরে বিজ্ঞ আদালতের আদেশ পেয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলা নথিভূক্ত হয়। মামলা নম্বর ২২/৩৮৫, তারিখ ০৮/৬/ ২০০৩। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে মামলার দায়িত্ব পান এসআই মফিজ-১।

যেভাবে শাপলাকে হত্যা করে লেবু:
হত্যার শিকার শাপলার মায়ের দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, লেবু ও তার সহযোগীরা এলাকায় দাঙ্গাবাজ, সন্ত্রাসী এমন কোন কাজ নাই যা তারা করতে পারে না। আসামী লেবুর বিরুদ্ধে জয়পুরহাট জেলার কালাই থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা নং ২২৭/২০০০, মামলা নং ১২৩৯/২০০৩ ও প্রকাশ্যে বেলা তিনটার সময় হাকিম হত্যাসহ বহু মামলা রয়েছে। আসামী লেবু মিয়ার স্ত্রী সন্তান রয়েছে। স্ত্রীর নাম পারমিনা ও ছেলের নাম পারভেজ। তারাও মাদক ব্যবসায় জড়িত।

বাদিনীর ১৪ বছরের নাবালিকা মেয়ে শাপলা খাতুনকে আসামি লেবু ও তার সহযোগিরা অপহরণ করে নিয়ে গেলে বাদিনী তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৯/(১)/৩০ ধারায় (প্রথম অপহরণ) মামলা দায়ের করেন। ঐ মামলায় আসামি লেবু পুলিশে গ্রেপ্তার হয়ে হাজতে যায় এবং ভিকটিম শাপলা খাতুন তার মা বাদিনী ফিরোজা বেগমের জিম্মায় গ্রহণ করে।

লেবু মিয়া ঐ শাপলা অপহরণ মামলায় দীর্ঘ দিন হাজত বাসের পর জামিন পায়। লেবু জামিনে থাকা অবস্থায় লেবু ও তার সহযোগিরা শাপলাকে ধর্ষণ বা অনৈতিক কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ২০০৩ সালের জুলাই মাসের ৪ তারিখ সোমবারে (২৮/০৪/২০০৩-সোমবার) আবারো অপহরণ করে নিয়ে যায়।

ঘটনার পর বাদিনীর কন্যা শিল্পী খাতুন ও জামাতা যোগাযোগ করলে আসামী লেবুরা জানায়, অপহরণ মামলা আপোষ মূলে নিষ্পত্তি করলে শাপলাকে ফেরৎ দিবে। এ অবস্থায় বাদিনী আপোষের চেষ্টা করার সময় লেবু শাপলাকে ফুসলাইয়া বিয়ের প্রলোভন দিয়ে আটকে রাখে।

এ অবস্থায় লেবু শাপলাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। অপহরণের শিকার শাপলা খাতুন কিছু বুঝে ওঠার আগেই, অপহরণের ৪ দিনের মাথায় ২০০৩ সালে মে মাসের দুই তারিখ শুক্রবার (০২/০৫/২০০৩-শুক্রবার) রাতে লেবু শাপলাকে ঘরের দরজায় খিল না লাগিয়ে আলগাভাবে রাখতে বলে কাজ আছে বলে বাইরে যায়। শাপলার চোখে ঘুম চলে আসে। কিছুক্ষণ পড়ে শাপলাকে এসিড দিয়ে ঝলসে মারার জন্য লেবু বোতলে করে এসিড এনে অন্য আসামিদের সহযোগিতায় শাপলার শরীরে এসিড নিক্ষেপ করে, শাপলা জেগে ওঠতেই অন্য আসামিরা শাপলার বিছানায় পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিলে শাপলার বিছানা জ্বলে ওঠে ও শাপলার পড়নের কাপড়ে আগুন লেগে যায়।

ঐ সময় শাপলা চিৎকার দিয়ে বিছানা থেকে উঠতে গেলে আসামি লেবু তার ডান হাত দিয়ে ধরে শাপলাকে আবারো আগুনের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এতে লেবুর ডান হাতে আগুনে কিছুটা ঝলসে যায়। এসময়, শাপলা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিলে সাক্ষীসহ আশে-পাশের লোকজন ছুটে আসে। লোকজন দেখে আসামিরা পালিয়ে না গিয়ে অভিনয় করে শাপলাকে চিকিৎসার জন্য জয়পুরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার ডাক্তাররা দগ্ধ শাপলাকে রংপুর হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়।

ডাক্তারদের পরামর্শ মতে শাপলাকে রংপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শাপলার মা বাদিনী ফিরোজা বেগম, মেয়ে শিল্পী খাতুন ও তার স্বামী আতাউর রহমান রংপুর মেডিকেলে ছুটে যায়। তখন আক্রান্ত শাপলা খাতুন মারা যাওয়ার আগে, তাঁর মা, বোন ও দুলাভাইসহ অন্যদেরকে তাকে হত্যাচেষ্টার উপরোক্ত ঘটনাটি নিজ মুখে বলে।

রংপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় টানা ৯ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জালড়ে অবশেষে মে মাসের ১০ তারিখ শনিবার (১০/০৫/২০০৩-শনিবার) তারিখ ভোর ৬টা ৩৫ মিনিটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শাপলা। বাদিনী বলেন, আসামি লেবু একজন স্বর্ণকার। তার দোকানের স্বর্ণ গোলানো এসিড ও পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে অন্য আসামীদের সহযোগিতায় শাপলাকে হত্যা করে।

আসামি লেবু ও অন্যরা ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ শাপলা হত্যার ঘটনায় সাক্ষী দেয়ার সাহস পাচ্ছেন না। মেয়ে শাপলাকে হারিয়ে বাদীনি মা ফিরোজা বেগম মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায়, মেয়ের চিকিৎসার কাজে ব্যস্ত থাকায় ও মেয়ে হত্যার ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ায় মামলা দায়ের করতে কিছুটা বিলম্ব হয়।

এদিকে, পূর্বপরিকল্পিতভাবে শাপলাকে হত্যা করে হত্যার দায় থেকে বাঁচতে জয়পুরহাটের কালাই থানায় আসামি লেবু তার বাবাকে বাদি বানিয়ে শাপলাকে পুত্র বধূ দাবী করে আশে-পাশের ও ভিন্ন জেলার নীরিহ-নিরপরাধ লোকদের আসামি করে প্রথমে হত্যাচেষ্টা ও পরে হত্যা মামলা দায়ের করে (মামলা নম্বর-জি.আর-১৫১/২০০৩)।

১৭ বছর পর মামলাটি সিআইডি তদন্তের দায়িত্ব পেলেও লেবুর বাবা নছির উদ্দিন শাপলা হত্যার ভূয়া বাদি সেজে থাকায় বাপ-ছেলে লেবু নছির হত্যা করেও দেদারসে মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে। স্থানীরা লেবু -নছিরের গ্রেফতার ও ফাঁসি দাবী করেছেন।