সেই স্বচ্ছল গৃহবধূর নামে চাল তোলার ঘটনায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সেই স্বচ্ছল পরিবারের গৃহবধূ রুবিনা খাতুনের নামে ভিজিডির চাল তুলে আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত দৌলতপুর উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম বাবুর নামে আদালতে মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের (দৌলতপুর) আদালতে এ মামলা করেন গৃহবধূ রুবিনা খাতুনের ছোট ভাই মুন্না। আদালতের বিচারক এনামুল হক মামলাটি আমলে নিয়ে এজাহারভুক্ত করার জন্য দৌলতপুর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম বাবু ওই ইউনিয়নের শিতলাইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা স্বচ্ছল ব্যবসায়ী পরিবারের গৃহবধূ রুবিনা খাতুনের ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করে তার নামে একটি ভিজিডি কার্ড তৈরি করেন। চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম বাবু রুবিনার ভিজিডি কার্ডের বিপরীতে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বরাদ্দ হওয়া সরকারি চাল নিয়মিত আত্মসাৎ করেন। কিন্তু রুবিনা খাতুন এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না।

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে কানাঘুঁষা শুরু হলে দৌলতপুরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী আব্দুস সালামের স্ত্রী রুবিনা খাতুন (৪৫) স্থানীয় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তার নামে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ভিজিডি কার্ড ইস্যু করা রয়েছে। তার কার্ড নম্বর ৫১। সেই কার্ডে নিয়মিত চাল উত্তোলন হয়ে আসছে।

এ ঘটনায় গৃহবধূ রুবিনা খাতুনের পক্ষে তার ছোট ভাই মুন্না মঙ্গলবার চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এজাহারভুক্ত করার জন্য দৌলতপুর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।

দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহুরুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, মামলার কোনো নথি আদালত থেকে এখনো থানায় আসেনি। তবে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রুবিনা খাতুনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন রন্টু জানান, দুস্থদের সরকারি সহায়তার ভিজিডি কার্ড তার মায়ের নামে ইস্যু করায় এতে তাদের পরিবারের সম্মানহানি ঘটে। এই ভিজিডি কার্ডের বিষয়ে তারা কিছু জানতেনও না আবার এ ধরনের সহায়তা তারা কখনো প্রত্যাশাও করেন না। তারা নিজেরাই দুস্থ, অসহায় মানুষজনকে সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতা করেন। ফলে সরকারি চাল উত্তোলনের খাতায় নাম দেখে তারা রীতিমতো অবাক হয়েছেন।

এ ব্যাপারে রিফায়েতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম বাবু বলেন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তর থেকে ভিজিডি কার্ডের জন্য তথ্য চাওয়া হয়। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য একত্রে বসে ১০১ জনের তথ্য পাঠাই। তবে এর মধ্যে চার জনের ইতোপূর্বে ভিজিডি কার্ড থাকায় সংশোধনের জন্য বলে মহিলা বিষয়ক দপ্তর। পরে সেটা সংশোধন করে পাঠিয়েছি। এ ক্ষেত্রে কোনো চাল আত্মসাতের প্রশ্নই ওঠে না। আসন্ন ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য নিজের বিরোধী পক্ষের ইন্ধনে এই মামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেন চেয়ারম্যান বাবু।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিজিডি কার্ডের শিকার স্বচ্ছল গৃহবধূ রুবিনা খাতুনের স্বামী আব্দুস সালাম একজন প্রতিষ্ঠিত তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী। তাদের মাঠে রয়েছে অন্তত ৩০ বিঘা জমি। পরিবারে নেই কোনো অভাব অনটন। নেই কোনো রাজনৈতিক ঝুট ঝামেলা। কিন্তু গৃহবধূ রুবিনার নামে ভিজিডি কার্ড ইস্যু করে চাল উত্তোলন করা হলেও এতদিন কিছুই জানতেন না তারা। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আইনের আশ্রয় গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ভিজিডি কার্ড বিতরণে নানা অনিয়ম আর জালিয়াতির কারণে ইতোপূর্বে কয়েকজন চেয়ারম্যান ও মেম্বারের নামে আদালতে মামলা হয়েছে। এর বাইরে বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনেও বিভিন্ন ইউনিয়নের ভিজিডি কার্ডে অনিয়মের ঘটনায় জমা পড়া অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে। তৃণমূলের এসব জনপ্রতিনিধিদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ঘিরে বেশ আগে থেকেই জেলাজুড়েে আলোচনায় রয়েছে দৌলতপুর উপজেলা।

নভেম্বর, ১৭.২০২০ at ২৩:৩০:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআরএস/তআ