পুলিশের খাতায় পলাতক লেবু-নছির : দাপটে করছে মাদক ব্যবসা, মিথ্যা মামলায় সর্বশান্ত ৯ পরিবার

হত্যাকারী বাদী সেজে সিআইডির নাকের ডগায় অথচ তাদের কুটকৌশলে ১৭ বছরে আট পরিবার সর্বশান্ত হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে গ্রেপ্তার হচ্ছে না মূূলহোতা লেবু-নছির। দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের রমরমা ব্যবসা।

জয়পুরহাটের কালাই থানার মোলামগাড়ীহাটে এ চাঞ্চল্য ঘটেছে।

জানায়, মোলামগাড়ীহাটের নছির উদ্দিন ওরফে বাতিয়া ওরফে লছির ডাকাতের ছেলে দুধর্ষ সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ী ও দুই হত্যা মামলার আসামী লেবু মিয়া ওরফে সাজু ২০০২ সালের শেষ দিকে বগুড়ার মোকাতলা থেকে শাপলা খাতুন নামে এক নাবালিকাকে অপরহণ করে।

মেয়ের মা ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে লেবুর বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা করলে লেবু গ্রেপ্তার হয়ে হাজতে যায়। এসময়, শাপলাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে জামিন চায়। জামিনে বেরিয়ে এসে শাপলাকে আবারো অপরহণ করেই হত্যা করে। এতে, শাপলার মা বাদী হয়ে আবারো বগুড়ায় লেবু ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে আবারো হত্যা মামলা দায়ের করে। সেই থেকে লেবু পলাতক।

এদিকে, লেবুর বাবা নছির উদ্দিন ছেলেকে হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে নিজে বাদী হয়ে প্রতিবেশিদের আসামী করে জয়পুরহাটে হত্যা মামলা দায়ের করে। সেই থেকে ভোগান্তি আর হয়রানীতে নয়টি পরিবার। ১৭ বছর মিথ্যা মামলার ঘানি টানতে গিয়ে সর্বশান্ত পরিবারগুলো।

২০১৮ সালের ৮ নভেম্বরে মামলার পুনরায় তদন্ত করতে আদেশ দেয় বিজ্ঞ আদালত। ২০১৯ সালের দুই জানুয়ারি প্রতিবেদন দিতে সিআইডিকে আদেশ বিজ্ঞ আদালত।

কয়েকবার মামলার সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলি হয়ে নতুন কর্মকর্তা আসলেও আলোর মুখ দেখেনি প্রতিবেদন। এখনো জানেন না এজাহারভূক্ত স্বাক্ষীরা।

এরই মধ্যে শাপলা হত্যা মামলার স্বাক্ষীরা জয়পুরহাটের কালাই থানার দায়ের হওয়া মামলার স্বাক্ষীরা মিথ্যা মামলা উল্লেখ করে কোর্টের মাধ্যমে লেবু মিয়ার বিরুদ্ধে এফিডেফিট করে দিয়েছেন। এদিকে পুলিশের খাতায় পলাতক থাকলেও দাপটের সাথে মাদক ব্যবসা করছে লেবু মিয়া।

২০০৩ সালের আগে থেকেই মাদকসহ বহু মামলায় পলাতক লেবু মিয়া ওরফে সাজু আহমেদের বাড়ী জয়পুরহাট জেলার কালাই থানার মোলামগাড়ীহাটে। সে ঐ গ্রামের আলোচিত নছির উদ্দিন ওরফে বাতিয়া ডাকাতের ছেলে। প্রকাশ্য দিবালোকে কালাইয়ে হাকিম হত্যাসহ লেবুর বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলা চলমান।

মামলার এজাহার সূত্রে জানায়, ২০০২ সালের শেষের দিকে বগুড়ার শাপলা খাতুনকে অপরহণ করে জেল খাটে লেবু মিয়া। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে জেল থেকে জামিনে বের হয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে ২০০৩ সালের শুরুতে শাপলাকে হত্যা করে। আর হত্যার দায় থেকে বাঁচতে পাড়া-প্রতিবেশি ও বগুড়া জেলাসহ ৯জনকে আসামি করে মামলা করে লেবুর বাবা নছির উদ্দিন।

আবার অন্যদিকে, শাপলার মা ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে লেবুকে প্রধান আসামি করে বগুড়ায় হত্যা মামলা করে। সেই মামলা থেকে বাঁচতে আবারও শাপলার আরেক বোন রানুকে কৌশলে অপহরণ করে লেবু মিয়া।

 

পরে, ফুসলিয়ে বিয়ের নাম করে লেবু মিয়া ভুয়া নাম সাজু আহমেদ দিয়ে ভূয়া কাবিন করে বিয়ে করেছে বলে জানতে পেরেছে শাপলার পরিবার। এক অডিও রেকর্ডে শাপলার বড় বোন শিল্পী বলেন, শাপলার মতো রানুকেও মেরে ফেলবে লেবু মিয়া

এই ভয়ে শাপলার মা বা বোন লেবুর বিরুদ্ধে আর কোথাও অভিযোগ দায়ের করেন নি।(অডিও রেকর্ড)। শাপলা ও হাকিম হত্যাকারী লেবুর দায়ের করা মিথ্যা মামলায় মোলামগাড়ীহাট, কাদিরপুর ও বগুড়াসহ নিরাপরাধ ৯ পরিবার সর্বশান্ত।

শাপলার বড় বোন বলেন, শাপলা হত্যার মামলা থেকে বাঁচতে রানুকে তুলে নিয়ে গেছে লেবু। লেবু মামলা থেকে উদ্ধারের পর রানুকেও মেরে ফেলবে শাপলার মতো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাপলার বোন শিল্পী আরো বলেন, লেবু শাপলাকে অপহরণের পর হত্যা করেছে।

এখন রানুকেও তুলে নিয়ে গেছে। রানুকেও হত্যা করেছে কিনা জানিনা। তবে, রানুকে যেন শাপলার মতো হত্যা না করে সেই ভয়ে আমরা রানুর বিষয়ে লেবুর বিরুদ্ধে কোথাও কোন অভিযোগ করিনি। লেবু শাপলাকে কিভাবে হত্যা করেছে মারা যাওয়ার আগে শাপলা নিজ মুখে আমাদের বলে গেছে আমরা সেই ভাবেই লেবুর বিরুদ্ধে বগুড়ায় মামলা করেছি-বলেন শাপলার বোন শিল্পী।

কিন্তু লেবু নিজেকে শাপলার স্বামী দাবী করে জয়পুরহাটে নীরিহ মানুষদের আসামি করে মিথ্যা মামলা দেয়ায় এই মামলা থেকে আমরা ন্যায় বিচার পাবো কী-না সন্দেহ। আমি চাই আমার বোন হত্যার প্রকৃত আসামী লেবু মিয়ার ফাঁসি হোক এবং জয়পুরহাটে লেবুর দায়ের করা মিথ্যা মামলা বাতিল করে নীরিহ মানুষদের মুক্তি দেয়া হোক।

স্থানীয়রা জানান, মূলত শাপলাকে হত্যার পর থেকেই লেবু পলাতক। আর সেখান থেকেই লেবুর উত্থান শুরু। শাপলা হত্যা মামলায় পলাতক থাকা অবস্থায় লেবু মিয়া ২০০৯ সালে বেলা তিনটার সময় কালাই থানা থেকে অí দূরে হাকিম নামে আরও একজনকে হত্যা করে। মাদকসহ সব হত্যা মামলায় লেবু আজও পলাতক।
Pj‡e……..