সরকারি ওষুধ মিলল ভাগাড়ে

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ মিলেছে পরিত্যক্ত ভাগাড়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাদ্দ দেয়া সরকারি এসব ওষুধ সাধারণ রোগীদের মাঝে বিতরণ না করে ভাগাড়ে ফেলে দেয়া হয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় এই ওষুধ ফেলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এতদিন তা রোগীদের মাঝে দেয়া হয়নি কেন- এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তারা।

রবিবার (১৫ নভেম্বর) রাতে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাউন্ডারির ভেতরের একটি পরিত্যক্ত ভাগাড়ে রোগীদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ ওষুধ পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিনামূল্যের এসব ওষুধ সময়মতো না দিয়ে সাধারণ রোগীদের বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে আনতে বাধ্য করা হয় বলে আগত রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান। বিনামূল্যের সরকারি এই ওষুধ ভাগাড়ে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় উৎসুক লোকজন সেখানে ভিড় করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হওয়া উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়নের হরিণগাছি গ্রামের বৃদ্ধ লুৎফর রহমান বলেন, আমি গত তিনদিন ধরে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। আমাকে দিনে একটি লাল আর একটি নীল রঙয়ের বড়ি দেয়া হয়। এর বাইরে ডাক্তারের কাগজ (প্রেসক্রিপশন) অনুযায়ী অন্য ওষুধগুলো বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।

শুধু একজন লুৎফর রহমানই নন, এখানকার সব রোগীকেই বাইরের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে আনতে হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাথে যোগসূুত্র রয়েছে এমন কিছু ওষুধ ব্যবসায়ী ও তাদের নিয়োজিত দালাল চক্রের মাধ্যমে সাধারণ রোগীরা ওষুধ কিনে নিয়ে ব্যবহার করতে বাধ্য হন বলে অহরহ অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনেই এই ওষুধ ফার্মেসিগুলো অবস্থিত। ফলে খুব সহজেই তারা দালালদের মাধ্যমে রোগীদের ভেড়ান নিজেদের ফার্মেসিতে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় সরকারি ওষুধ ও স্যালাইন সরবরাহ থাকলেও কর্তৃপক্ষ সেখানে আগত ইনডোর ও আউটডোর রোগীদের ওষুধ ও স্যালাইন সরবরাহ নেই বলে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত সামনের ফার্মেসিগুলো থেকে সাধারণ রোগীদের তা কিনে আনতে বাধ্য করা হয়। অথচ গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল নির্বোধ মানুষের কাছে সরকারিভাবে সরবরাহ করা ওষুধ এবং স্যালাইন এসব ফার্মেসি থেকে বিক্রি করা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অর্থলোভী ব্যক্তিরা ফার্মেসিগুলোতে সরকারি ওষুধ, স্যালাইন গোপনে সরবরাহ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে সরকারি বরাদ্দের বিপুল পরিমাণ ওষুধ ভাগাড়ে পড়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর ইনচার্জ বজলুর রহমান বলেন, আমি ওষুধের হিসাব রাখি না। এসব ওষুধের হিসাব স্যারের (স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) কাছে থাকে। এর বাইরে তিনি এ ব্যাপারে আর কিছুই বলতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন গণমাধ্যমকে জানান, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে ওষুধগুলো ফেলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু রোগীগের জন্য সরকারি সাপ্লাইয়ের ওষুধ রোগীদের মাঝে সময়মতো না দিয়ে এখন তা মেয়াদ উত্তীর্ণ বলে ফেলে দেয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

এ ছাড়া মেয়াদ উত্তীর্ণ এসব ওষুধ স্বাস্থ্যবিধিসম্মতভাবে নষ্ট না করে ভাগাড়ে ফেলে জনস্বাস্থ্যকে আরো ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হলো কিনা- এমন প্রশ্নেরও সঠিক জবাব আসেনি এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মুখ থেকে।

প্রসঙ্গত, দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ নিয়ে অনিয়ম ছাড়াও রোগীদের মাঝে খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রেও রয়েছে ব্যাপক নয়ছয়। অন্যদিকে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক থাকা সত্ত্বেও তাদের ঠিকমতো কর্মস্থলে পাওয়া যায় না। তারা বাইরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে এখানকার গরিব, অসহায় ও সাধারণ রোগীরা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে বিড়ম্বনার শিকার হন। যা এখন অনেকেরই গা সওয়া হয়ে গেছে।