জীবন-সুফিলে রঙিন বাংলাদেশ

দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে মাঠের লড়াইয়ে ফুটবলাররা কতটা মানিয়ে নিতে পারেন, সে নিয়ে খানিক শঙ্কা ছিল। তবে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফেরার দিনে সব শঙ্কাই উড়িয়ে দিয়েছে জেমি ডের শিষ্যরা। নাবিব নেওয়াজ জীবন, মাহবুবুর রহমান সুফিলের গোলের বাংলাদেশের এই ফেরাটা হয়েছে উৎসবে রঙিন।

শুক্রবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নেপালকে ২-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমার্ধে জীবনের গোলের পর দ্বিতীয়ার্ধে সুফিল ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। বেশ কিছু ভালো সুযোগ নষ্ট না হলে ব্যবধান হতে পারতো আরো বড়।

এক সময় নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় ছিল অনুমিত। বলে-কয়ে হারানো যেত। তবে এখন আর সেই চিত্র নেই। সব প্রতিযোগিতা মিলে যেমন সবশেষ তিন ম্যাচেই নেপালের কাছে হেরেছিল ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নরা। সবশেষ জয়টি এসেছিল ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে। অর্থাৎ পাঁচ বছর পর নেপালের বিপক্ষে জয়ের মুখ দেখল জামাল-জীবনরা।

নেপালের বিপক্ষে শেষ তিন হার খুব পীড়া দিচ্ছিল বাংলাদেশকে। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া তো এভাবে বলেছেন, ‘সবাই বলে তোমরা নেপালের কাছে তিন ম্যাচ হেরেছ। সেটা আমার মাথায় আছে…।’

কোচ জেমি ডে অবশ্য প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে ফিরে মানিয়ে নিতে পারাটাকেই বড় করে দেখছিলেন। এদিনের ম্যাচ শেষে অবশ্য জামাল-জেমি দুই জনের প্রত্যাশাই পূরণ হয়েছে বলতে হবে।

তবে জেমি ডে নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ দুটিকে ডিসেম্বরে হতে যাওয়া কাতারের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতি হিসেবেই নিয়েছেন। অন্তত বাংলাদেশের এদিনের খেলার ধরনে তা পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে দলের সবাইকে পরখ করতে দেখতে চেয়েছেন তিনি। তাই তো জামাল ভূইয়া, তপু বর্মনদের মতো খেলোয়াড়দেরও তিনি পুরো ৯০ মিনিট খেলাননি। দলের এক নম্বর গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাকে তো স্কোয়াডেই রাখেননি ইংলিশ কোচ।

নেপাল দলটাও পুরো শক্তির দল নিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশে। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় একাধিক ফুটবলার রেখেই বাংলাদেশে আসে দলটি। এখানে এসেও একজন করোনা পজিটিভ হন। সব মিলে এই নেপালের বিপক্ষে জয়টা আসলে প্রত্যাশিতই ছিল। তবে বাংলাদেশ নিজেদের ফুটবল শৈলীতে সেই প্রত্যাশিত জয়টাকে আরো বেশি আনন্দময় করেছে।

এদিন ম্যাচের ১০ মিনিটেই লিড নেয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। আবাহনী লিমিটেডের দুই তারকা সাদ উদ্দিন ও নাবিব নেওয়াজ জীবনের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া থেকে আসে গোলটি।

ডান প্রান্তে থেকে দুই ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে দারুণভাবে ক্রস করেন সাদ। ছোট বক্সের ভেতরে দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন জীবন।

উইংয়ে প্রথমার্ধ জুড়ে সাদ উদ্দিন ছিলেন দারুণ। ৩২ মিনিটে তার ক্রস থেকে আরো একটি ভালো সুযোগ পান জীবন। কিন্তু ঠিকভাবে বল পোস্টে রাখতে পারেননি। মেরেছেন বাইরে দিয়ে।

এর আগে ম্যাচের ২৩ মিনিটে বিশ্বনাথের লম্বা থ্রো থেকে ডি বক্সে দারুণ এক হেড করেছিলেন তপু। তবে সেটি চলে যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে। তাই প্রথমার্ধে ব্যবধানটা ১-০ গোলের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ।

স্বাগতিকরা প্রথমার্ধে নেপালকে তেমন আক্রমণে ওঠার সুযোগ না দিলেও সেট পিচ আদায় করে নিচ্ছিল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বাংলাদেশ যেন কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে স্বাগতিক রক্ষণে চাপ তৈরি করে নেপাল। ৫৬ মিনিটে ডি-বক্সে রবিশংকর ভালো সুযোগও পেয়ে যান। কিন্তু পোস্টে রাখতে পারেননি।

এরপর বাংলাদেশ দলে একাধিক পরিবর্তন আনেন জেমি ডে। মানিক মোল্লা ও জামাল ভূঁইয়াকে তুলে নিয়ে ফাহাদ ও সোহেল রানাকে নামান। পরে জীবনকে তুলে নিয়ে নামান বিপলুকে। তার আগে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সুমন রেজাকে তুলে নিয়ে সুফিলকে মাঠে নামান। সেই সুফিলের পায়েই এসেছে দলের দ্বিতীয় গোল।

ম্যাচের ৭৭ মিনিটে তপু বর্মনের ফ্রি কিক কর্নারের বিনিময়ে বাঁচান নেপাল গোলরক্ষক। পরের মিনিটেই নিশ্চিত গোল থেকে দলকে রক্ষা করেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। লম্বা থ্রো থেকে দারুণ সুযোগ তৈরি করেছিল নেপাল।

৮০ মিনিটে সুফিল দেখার মতো গোল করলে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। সতীর্থের পাস ধরে বাঁ-প্রান্ত দিয়ে দারুণ গতিতে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন সুফিল। গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়ান। নেপাল ডিফেন্ডারদের করার ছিল না কিছুই।

লিড বাড়ানোর পর একাদশে আরো এক পরিবর্তন আনেন জেমি। ডিফেন্ডার তপু বর্মনকে তুলে নিয়ে ইয়াসিন খানকে মাঠে নামান। বাকি সময়টাতে অবশ্য বাংলাদেশ আর গোল আদায় করতে পারেনি। নেপালও পারেনি ব্যবধান কমাতে।

করোনা পরবর্তী ‘নিউ নরমাল’ সময়ে ইউরোপে ফুটবল ফিরেছিল আগেই। এই ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশও প্রবেশ করল ‘নিউ নরমাল’ ফুটবলে। বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচটি করোনা বিরতির পর দক্ষিণ এশিয়াতেই প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ।

‘মুজিববর্ষ ফিফা আন্তর্জাতিক ফুটবল সিরিজ’-এ মঙ্গলবার দ্বিতীয় ও শেষ প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।

১৩ নভেম্বর, ২০২০ at ২০:০৫:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেরু/এমএআর