সড়কের উপরে মাছ বাজার, নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় ভোগান্তি ক্রেতা-বিক্রেতার

সড়কের উপরে মাছ বাজারে হরেক রকমের দেশী বিদেশী প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। নামে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ঢল। প্রতিদিন সকাল হলেই জমে উঠে এ মাছ বাজার। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট-পলাশবাড়ী সড়কের উপরে মাছ বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগম। তরতাজা ভাল মানের মাছ এবং দাম কম পাওয়ায় এই বাজারে মাছ কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে মাছ ব্যবসায়ীরা এবং সাধারণ মানুষ। এখানে নির্দিষ্ট কোন মাছ বাজারের জায়গা নাই, কোন ঘর বা সরকারি সেট নাই। ভোগান্তিতে পড়তে হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের, এমনটিই অভিযোগ মাছ ব্যবসায়ীদের।

সকালে ঘোড়াঘাট মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি-বিদেশি এবং দেশীয় প্রজাতির বহু প্রকার মাছ উঠেছে এই মাছ বাজারে। বাজারে আকর্ষণীয় হিসাবে ছিলো বড় রুই, কাতল, পাঙ্গাস, সিলভারকাপ, তেঁলাপিয়া। এছাড়াও মলা-ঢেলা, পুটি, কই, মাগুর, টেংরা ইত্যাদি।

মুলত ঘোড়াঘাটের মাটি লাল, আর লাল মাটির মাছের স্বাদ হয় মিষ্টি। পূর্বে একসময় এই মাছ বাজার ছিলো জমজমাট। কিছুদিন আগে মাছের সরবরাহ কম থাকায়, মাছ বাজারটি ভেঙে পড়ে। বর্তমান পূর্বের ন্যায় আবার জমে উঠেছে এই বাজারে মাছের বেচা-কেনা। এখন উপজেলায় বিভিন্ন খালে-বিলে, পুকুরে মাছের চাষ করছে মাছচাষীরা। এছাড়াও ঘোড়াঘাটের উপর দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদীর শাখা, আর এই শাখা নদীতে জেলেরা প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরছেন। বর্তমান নদীতে সবসময় পানি থাকায় মাছের বিচরণ রয়েছে। নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন শত শত জেলেরা। আর এই সব স্থান থেকে মাছ ধরে ঘোড়াঘাট বাজারে মাছ নিয়ে ভিড় করছেন তারা।

খুচরা মাছ ব্যবসায়ী নুকুল কুমার দাস বলেন, আমরা এখানকার মাছ আড়ৎ থেকে মাছ ক্রয় করে বিক্রি করেছি, আজ বড় পাঙ্গাস মাছ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে কিনে তা বিক্রি করেছি ৯০ থেকে ১শ টাকা কেজি দরে, ছোট পাঙ্গাস ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি, রুইমাছ ১৪০ টাকা কেজি দরে নিয়ে তা বিক্রি করেছি ১৬০ টাকা, তেলাপিয়া ১১০ টাকা করে নিয়ে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করেছি।

খুচরা ব্যবসায়ী রঞ্জন দাস বলেন, আমার নিকট আড়াই কেজি ওজনের কাতলা মাছ ৩শ টাকা দরে বিক্রি করেছি, আমার কিনা আছে ২শ ৫০ টাকা দরে। বড় সিলভার কাপ মাছ ১৬০ টাকা কিনে তা বিক্রি করেছি ১৮০ টাকা দরে।

মাছ কিনতে আসা শামসুল হকের সঙ্গে কথা হয়, তিনি বলেন, সকাল বেলায় মাছ নিতে আসছি। কেন না সকালে নদীর ছোট জাতের মাছ পাওয়া যায়। নদীর মাছের স্বাদ আলাদা। আমি ২০০ টাকা কেজি দরে মলা মাছ নিয়েছি। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থেকে পাইকারী মাছ কিনতে আসা রেজাউল করিমের সাথে কথা হয়, তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে এই বাজারে পাইকারী মাছ নিতে আসি। ঘোড়াঘাট মাছবাজারে অন্য এলাকার চেয়ে মাছের দাম কম আছে এবং এখানকার মাছের স্বাদ ভাল।

উপজেলার কামদিয়া এলাকা মাছচাষী রসুল মিয়া বলেন, আমার তিনটি পুকুর আছে। এই পুকুরে আমি প্রায় সব প্রকার মাছ চাষ করে থাকি। এখন বর্তমান সপ্তাহে একবার করে পুকুর থেকে মাছ তুলি এবং মাছ বাজারে এনে পাইকারী দেয়।

আড়ৎদার ছাবিবর ও ওলি রহমান বলেন, সকাল ৬ টা থেকে শুরু হয় মাছ কেনা-বেচা। তা বেলা ১১ টা পর্যন্ত বেচা-কেনা হয় পাইকারী বাজারে। তবে খুচরা বাজারে সারাদিন কেনা-বেচা হয় মাছ। তারা আরও বলেন, রাস্তার সাথে আমাদের এই মাছের বাজার। এখানে কোন ঘর বা সরকারি বাজার সেট নেই। যার কারণে আমাদের অনেক কষ্ট করে ব্যবসা করতে হয়। প্রতিনয়ত রোদ, বৃষ্টি, ঝড় আর শীতের সাথে লড়াই করে ব্যবসা করতে হয়।