খেজুরের ভেজালমুক্ত গুড়-পাটালি উৎপাদনের শপথ নিলেন যশোরের ৭০ জন গাছি

খেজুরের ভেজালমুক্ত গুড়-পাটালি উৎপাদনের শপথ নিলেন যশোরের কেশবপুর উপজেলার ৭০ জন গাছি (গাছ থেকে রস-গুড়ের উৎপাদক)। সোমবার সকালে কেশবপুরের ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন পরিষদ চত্ত্বরে কৃষি কমপ্লেক্স মিলনায়তনে ‘বিশুদ্ধ খেজুর গুড় উৎপাদন বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও উপকরণ বিতরণ’ অনুষ্ঠানে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে গাছিরা এই শপথ নেন।

যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে গাছিদের এ শপথ বাক্য পাঠ করান।

যশোরের পাঁচ তরুণ উদ্যোক্তার অনলাইন বাজার ‘কেনারহাট’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সহযোগিতা দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের এলজিএসপি প্রকল্প-৩।

অনুষ্ঠানে গাছিরা হাত তুলে বলেন, ‘আমরা খেজুরের রস-গুড়-পাটালিতে কোনো ধরণের ভেজাল দিবো না। কাউকে ভেজাল দিতেও দেবো না। এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’

কেশবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, স্থানীয় সরকার বিভাগ যশোরের উপ-পরিচালক হোসাইন শওকত, কেশবপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা ফ্যাসিলেটেটর আবদুল হালিম, ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এসএম আনিছুর রহমান, সাতবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান শামসুদ্দীন, কেশবপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জয়দেব চক্রবর্ত্তী প্রমুখ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কেনারহাটের সহ-উদ্যোক্তা নাহিদুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে কেশবপুরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা খেজুর গাছ থেকে নিরাপদ রস সংগ্রহ, গাছ ব্যবস্থাপনা, গুড় তৈরি করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গাছিদের প্রশিক্ষণ দেন।

এ সময় তিনি কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্যে পর্ব-পশ্চিম দিক করে গাছ তুলতে হবে। যাতে তোলা অংশে সরাসরি রোদ না লাগে। নিপা ভাইরাস ঠোকাতে রসের ঠিলে মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। গুড়ের রঙ পরিস্কার করার জন্যে কোনো ধরণের রাসায়নিক বা চিনি মেশানো যাবে না। গুড়ের আসল রঙ যা-তাই রাখতে হবে।’

পরে যশোরের খেজুরের রস ও গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে কৃষকদের মাঝে উপকরণ বিতরণ করা হয়। উপকরণের মধ্যে ছিলো গাছি দা, ঠুঙি (ঝুড়ি) ও নিপা ভাইরাস প্রতিরোধে রসের ভাড় ঢেকে রাখার জন্যে বিশেষ ধরণের কাপড়।

কেনারহাটের সহ-উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভেজালমুক্ত গুড়-পাটালি গাছিদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে সংগ্রহ করে আনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষের কাছে পাঠানো হচ্ছে। ২০১৮ সাল থেকে গত দুই বছরে িি.িশবহধৎযধঃ.পড়স এই অনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশের অন্তত সাড়ে তিন হাজার মানুষের কাছে দেড় হাজার কেজি বিশুদ্ধ গুড়-পাটালি পৌছে দেওয়া হয়েছে।

বিশুদ্ধ গুড়-পাটালি উৎপাদনের জন্যে এ পর্যন্ত ২০০ গাছিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আয়ের একটি অংশ গাছির সন্তানদের লেখপড়ায় ব্যয় করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে গাছিদের দরিদ্য ও মেধাবী তিন সন্তানের আজীবন শিক্ষার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। গাছিদের উপাদিত বিশুদ্ধ গুড়-পাটালি কিনতে www.kenarhat.com এই সাইড ভিজিট করে অগ্রিম ক্রয় আদেশ দেওয়া যাবে।’