বাড়ির উঠানে বায়োফ্লাক পদ্ধতিতে কৈ আর শিং মাছ চাষ করে পেয়েছেন ব্যাপক সাড়া

যশোরের চৌগাছার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সোহেল হোসেন বায়োফ্লাক পদ্ধতিতে বাড়ির উঠানে মাছ চাষ করে বেশ লাভের আশায় বুক বেধেছেন। ইট দিয়ে তৈরী করা দুই ট্যাংকিতে তিনি ৮০ হাজার কৈ ও শিং মাছ চাষ করেছেন। কোন সমস্যা দেখা না দিলে কয়েক লাখ টাকার মাছ বিক্রি করতে পারবেন বলে মনে করছেন। তাকে অনুসরণ করে ইতোমধ্যে বেশ কয়েক যুবক এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন।

উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের বুন্দলীতলা গ্রামের মৃত মন্টু মিয়ার ছেলে সোহেল হোসেন। পুরাতন মটরসাইকেল বেচাকেনা ও মেরামত করাই তার মুল পেশা। চলতি বছরে সে একটি মাধ্যমে জানতে পারেন বাড়ির উঠানে ট্যাংক তৈরী করে মাছ চাষ করা সম্ভব। দেরি না করে ইট বালু সিমেন্ট নিয়ে এসে বাড়ির উঠানে ৪০ ফুট লম্বা ও ২৬ ফুট আড় আর উচ্চতা হচ্ছে ৪ ফুট দুইটি ট্যাংক তৈরী করেন।

যার এক একটিতে পানি ধরন ক্ষমতা হচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার লিটার। উপজেলা মৎস্য ও যুব উন্নয়ন অফিসের সার্বিক সহযোগীতা নিয়ে তিনি এই কাজ শুরু করেন। ট্যাংক তৈরীর পর মোটর, জেনারটের সহ আনুসাঙ্গিক সব কিছু প্রস্তুত করেন। এরপর দুই ট্যাংকের জন্য কৈ ও শিং দুই জাতের মাছ সংগ্রহ করেন। প্রতিটি ট্যাংকে ৪০ হাজার করে মোট ৮০ হাজার মাছ ছাড়েন।
আরও পড়ুন:
যশোরে ইজিবাইক চোর চক্রের ৮ সদস্য গ্রেফতার
চৌগাছায় জাতীয় বিপ্লাব ও সংহতি দিবস পালিত
বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করল ডিসিশন ডেস্ক

শুকবার যেয়ে দেখা যায় মালিক সোহেল হোসেন ট্যাংকে চাষ করা মাছের খাবার দিচ্ছেন। এ সময় কথা হলে তিনি জানান, বায়োফ্লাক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা খুবই লাভজনক বলে আমি মনে করছি। আমি এখনও মাছ বিক্রি করতে পারেনি, তারপরও যে পরিমান ব্যায় হয়েছে তাতে হিসেব করলে কোন সমস্যা যদি না হয় তাহলে ব্যাপল লাভ হবে। তিনি জানান, ট্যাংক তৈরী থেকে শুরু করে মোটর, মাছ ক্রয়, জেনারেটর, বিদ্যুৎ সব মিলিয়ে তার প্রায় ৩ লাখ ব্যায় হয়েছে। কোন সমস্যা দেখা না দিলে আর মাত্র ৩ মাস পরই মাছ বিক্রি করা যাবে।
সোহেল হোসেন জানান, ১টি ট্যাংকিতে পানি আছে ১ লাখ ২০ হাজার লিটার। এই পানিতে আমি ৪০ হাজার মাছ ছেড়েছি। ২ মাস আগে মাছ ছাড়া, এখন প্রতিটি মাছ খাওয়া উপযুক্ত হয়েছে। প্রতি দিন এই মাছের ২ বার সকাল ও সন্ধ্যায় খাবার দিতে হয়। খাবার হিসেবে নারিস ও কোয়ালিটি কোম্পানির ফিট ব্যবহার করি। দিনে ৮০ হাজার মাছের জন্য তার ব্যায় হচ্ছে ৮শ থেকে ৯০০ টাকা। প্রতি দিন অন্তত একবার করে পানি পরীক্ষা করা হয়। যাতে করে পানিতে খাবার ও অক্্িরজেনসহ প্রয়োজনীয় কোন কিছুরই যেন ঘাটতি না হয়। পানিতে কোন কিছুর ঘাটতি হলে মাছ লাফা লাফি শুরু করে। তখন পানি, মাছ সব কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। পানি, মাছ ও খাবার পরীক্ষা করার জন্য আলাদা আলাদা যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। এ সব পরীক্ষার ঘর দেখলে মনে হবে ছোটখাটো একটি ল্যাব। তিনি বলেন, রাত দিন ২৪ ঘন্টার জন্য ট্যাংকের পানিতে অক্্িরজেন দিয়ে রাখতে হয়। যদি কোন কারনে অক্্িরজেন বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সর্বোচ্চ দেড় ঘন্টার মধ্যে তা ঠিক করতে হয় অন্যথায় মাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। নতুন উদ্যোক্তা সোহেল হোসেন বলেন, মাছ বিক্রির উপযোগী হলে ১৮ থেকে ২০টি শিং মাছে ১ কেজি হবে আর ১০ থেকে ১২টি কৈ মাছে হবে ১ কেজি। বাজার দর ভাল হলে শিং ২শ থেকে ২২০ আর কৈ মাছ ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যাবে। সব মিলিয়ে তিনি বড় ধরনের লাভ হবে বলে আশা করছেন।
উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসে দায়িত্বরত মোরশেদ আলম বলেন, সোহেল হোসেন ব্যবসার পাশাপাশি যে কাজটি করেছেন তা অবশ্যই বেকার যুবক যুবতীদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। অল্প জায়গা ও স্বল্প খরচে সে বড় একটি কাজ করেছেন। সদ্য সমাপ্ত যুব দিবসে তাকে আরও উৎসাহ যোগানো হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য অফিসার এএসএম শাহাজান সিরাজ বলেন, সোহেল হোসেন যে পদ্ধতিতে মাছ চাষ করেছেন তা এ অঞ্চলে একেবারেই নতুন। আমরা সরেজমিন দেখেছি, নিঃসন্দেহে এটি একটি ভাল উদ্যোগ। এই নতুন উদ্যোক্তাকে আমরা সার্বিক সহযোগীতা করে যাচ্ছি।

০৭ নভেম্বর, ২০২০ at ২০:৪০:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমআই/আরএইচ