প্রতিষ্ঠিত না হয়ে বিয়ে না করার শপথ নিলেন ৫৫জন মেয়ে শিক্ষার্থী

শিক্ষা বৃত্তি দিচ্ছে জাপানী এক মহতি নারী

আল্পনা খাতুন, পড়াশোনা করছেন যশোর সরকারি এম এম কলেজ মাষ্টার্স প্রথম বর্ষে। তারই মতো শিলা খাতুন পড়ছেন অর্নার্স ৪য় বর্ষে, সম্পা খাতুন অর্নাস ১ম বর্ষে। আল্পনা, শিলা, সম্পার মতো কালীগঞ্জের ৫৫জন মেয়ে শিক্ষার্থী শপথ নিয়েছেন পড়শোনা শেষ না করার পর কেউ বিয়ে করবেন না। সমাজে তারা প্রতিষ্ঠিত হবে।

এই কারনে তাদের শিক্ষাবৃত্তি দিচেছন জাপানি এক মহতি নারী হিরোকো কোবাইসি। পেশাই ফটোগ্রাফার ও ইকেবান’র (ফ্লাওয়ার অ্যারেঞ্জমেন্ট)শিক্ষক এই নারী নিয়মিত এই ৫৫জন মেয়ের খোজ খবর নিচেছন জাপানে বসেই। আবার অনেক বছর তিনি এই মেয়েদের সাথে এসে দেখা করেন। তার এই কাজটি বাস্তবায়ন করছে জাপান ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড।

এবছর কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ও রায়গ্রাম ইউনিয়নের কলেজ পড়–য়া ৩৪জন এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ২১জন মেয়ে শিক্ষার্থী এই শিক্ষাবৃত্তি পাচ্ছেন। এবং পঞ্চগড় জেলার বোড়া উপজেলায় আরো ৫৫জন মেয়েকে এই বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। আর এই শিক্ষা বৃত্তির শর্ত সমাজের পিছিয়ে পড়া মেয়ে ও পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে না করা।

ক্যাথি বিশ্বাস, বাড়ি নিয়ামতপুর ইউনিয়নের পূর্ব বলরামপুর গ্রামে। পড়শোনা করছেন যশোর সরকারি এম এম কলেজের অর্নাস ২য় বর্ষে। অসহায় ও গরিব পরিবারের সদস্য হওয়ায় পড়াশোনার খরচ পোষাতে হিমশিম খাচ্ছিল পিতা মাতা। গত কয়েক বছর ধরে তিনি এই শিক্ষাবৃত্তি পাচ্ছেন। ক্যাথি জানান, হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড থেকে যে বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে এতে তার সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। কালীগঞ্জ উপজেলার পুর্ব বলরামপুর গ্রামের আরেক শিক্ষার্থী দিপা সরকার। তিনি জানান, পড়াশোনা চালাতে পরিবার হিমশিম খাচ্ছিলো। বিষয়টি জানার পর হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড ওমেন স্কলারশীপে আবেদন করে তিনি বৃত্তি পাচ্ছেন। এই বৃত্তি দিয়ে শিক্ষা উপকরন কিনে থাকেন।

হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের এরিয়া কো অডিনেটর (ভারপ্রাপ্ত) মো: শাহজাহান আলী ,জাপানী ৮৫ বছর বয়সী নারী হিরোকো কোবাইসি এক সময় খুব গরীব ছিলেন। তিনি অন্যের টাকায় পড়াশোনা শেষ করেন। সেই সময় তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যদি কখনো তার সমর্থ হয় তাহলে গরীব মেধাবী মেয়েদের পাশে তিনি দাড়াবেন। গত ২০০৩সাল থেকে তিনি বাংলাদেশে এসে জানতে পারেন এক মেয়ে রেজিষ্ট্রেশন ফি না দিতে পেরে গলাই ফাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এর পর তিনি সেই মেয়ের বাড়িতে যান। এবং স্¦েচ্ছাসেবী সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডকে জানান প্রতি মাসের কালীগঞ্জের গরীব মেয়েদের বৃত্তি দিবেন। সেই থেকে প্রায় ১৬ বছর ধরে তিনি এই বৃত্তি দিচ্ছেন।

তিনি আরো জানান, যে পরিমারের টাকা দেওয়া হয় সেটাতে মেয়েদের হয়তো খুব সামান্য উপকারে আসে। কিন্তু বৃত্তি দেবার উদ্দেশ্য মেয়েরা যেন লেখা পড়া চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং উৎসাহ দেওয়া। একজন স্কুল পর্যায়ের মেয়ে প্রতি মাসে ৩০০ টাকা এবং কলেজ পর্যায়ের মেয়েরা মাসিক ৪০০ টাকা করে বৃত্তি পেয়ে থাকেন। আর এ সকল মেয়েরা ঠিক মতো লেখা পড়া করছে কিনা বা স্কুল কলেজে যাচ্ছে কিনা তা তদারকি করেন হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের স্টাফরা।

গত ২০১৯ সালের ৩রা মার্চ জাপানি এই নারী বাংলাদেশ আসেন। সেই সময় আমরা যদি আলো হই,তুমি আমাদের মোমবাতি এই স্লোগানে বৃত্তিপ্রাপ্ত মেয়েরা তাকে সম্মাননা প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে জাপানী এই নারী হিরোকো কোবায়সি গরীব মেধাবী মেয়েদের হাতে প্রজ্জলিত মোমবাতি তুলে দেন।