জয়পুরহাটে সরকার অননুমোদিত ফাতেমা ধানবীজ কিনে কৃষক সর্বশান্ত

‘আমি গরীব মানুষ। নিজের কোন জমাজমি নাই। এবার ব্রাক অফিস থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। বর্গা নিয়েছি ৬ বিঘা জমি। আশা ছিল, এ ৬ বিঘা জমিতে সরকার অনুমোদিত উচ্চ ফলনশীল ব্রি-৪৯ জাতের ধান করে লাভবান হবো। কিন্তু পুনট বাজারের বীজ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ব্রি-৪৯ জাতের ধানের পরিবর্তে ফাতেমা ধান চাষ করতে উৎসাহ ও পরামর্শ দেয়। এই বলে যে, আমন মৌসুমে ফাতেমা জাতের ধানের বিঘাপ্রতি ফলন হয় ৩০ থেকে ৩৫ মণ পর্যন্ত। তার কথা মতো ফাতেমা ধান চাষ করে এখন নিঃস্ব হয়েছি।’ কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন, উপজেলার গোহারা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক মন্টু ম-ল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেবল মন্টুই নয়, বেশ কিছু ডিলারদের উৎসাহ ও পরামর্শে সরকার অননুমোদিত ফাতেমা ধান চাষ করে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার অন্তত দুইশত জন কৃষক এবার সর্বশান্ত হয়েছে। এক থেকে ৬ বিঘা জমিতে ফাতেমা ধান চাষ করে নিঃশ্ব হয়েছেন এমন ভুক্তভোগী কৃষকের তালিকায় আছেন- উপজেলার উলিপুর গ্রামের হায়াত, একই গ্রামের রহেদ আলী, লুলু মিয়া, হারুন, জাহিদুল ও হায়দার; ভেরে-ী গ্রামের নূর মোহাম্মদ, বাদশা ম-ল, আনোয়ার, বায়জিদ, মাসুদ ও ফরিদুল; থল গ্রামের বেলাল. ঠা-ামিয়া, সামছুল ও তোফাজ্জল; বোড়াই গ্রামের ফেরদৌস, আশরাফ, মুনছুর, তুষার ও নুর মোহাম্মদ; ঝামুটপুর গ্রামের আলাউদ্দিন, মোজাফ্ফর হাজী, এমদাদুল, সামসদ্দিন, সামচের, আইজুল ও মেহেদুল; আঁওড়া গুচ্ছগ্রামের সাইদুর রহমান; তালোড়া বাইগুনী গ্রামের মেহেদুল, এমরান ও জাফরুল; চকমুরলি গ্রামের মোতালেব; এবং খোসালপুর নওপাড়া গ্রামের সরোয়ার ফকির প্রমুখ।

আরও পড়ুন:
বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে একসাথে কাজ করতে হবে: যবিপ্রবি ভিসি
গোটা বিশ্বের দৃষ্টি এখন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে
বেনাপোলে গাঁজা সহ মাদক পাচারকারী আটক

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যেসব বীজ ব্যবসায়ীদের উৎসাহ ও পরামর্শে সরকার অননুমোদিত ফাতেমা ধান বীজ কিনেছেন সে তালিকায় আছেন- উপজেলার বৈরাগীরহাট এলাকার আবু সায়েম ও মুর্শিদ আলম, ঝামুটপুর এলাকার রাইহান আলী, পুনট বাজারের মিজানুর, পাঁচশিরা বাজারের আবু বকর প্রমুখ।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানান, উপজেলার ১৩ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে এবার রোপা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। তন্মধ্যে ৪৫ হেক্টক জমিতে চাষ করা হয় সরকার অননুমোদিত ফাতেমা ধান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নীলিমা জাহান জানান, বীজ সংক্রান্ত বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার এখতিয়ার ‘জেলা বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি’র। তাই তাদেরকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। যেখান থেকে এ বীজ আনা হয়েছে তাকেও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। তবে, এ বিষয়ে জেলা বীজ প্রত্যয় বিভাগের তদারকি করা উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

০৩ নভেম্বর, ২০২০ at ১৯:০৯:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/জেএইচবি/আরএইচ