যশোরে অনলাইন সুধী সংযোগ: প্রিয় শিক্ষকের গল্প শুনতে শুনতে সবাই ফিরে গেলেন শৈশবে

শিক্ষকেরা মানুষ গড়ার করিগর; সমাজ বিনির্মাণ করেন। শিক্ষক একজন ছাত্রের প্রথম নায়ক। কিন্তু প্রিয় শিক্ষক হওয়া অত্যন্ত কঠিন। একজন প্রিয় শিক্ষকের মধ্যে অনেক গুণাবলী থাকে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে শিক্ষার্থীবান্ধব প্রিয় শিক্ষকদের গুণাবলী আরও বেশি বেশি করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বুধবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা’ অনলাইন সুধী সংযোগ যশোর পর্বের অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে সুধী সংযোগ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন যশোরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, ব্যবসায়ী ও সামাজিক নানা শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনেরা। নিজের শৈশবের প্রিয় শিক্ষকদের কথা স্মরণ করতে গিয়ে অনেকে আপ্লুত হয়ে পড়েন।

বুধবার (২১ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে চারটায় ‘অনলাইন সুধী সংযোগ’ শুরু হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর যশোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর যুব কার্যক্রম ও ইভেন্টস বিভাগের প্রধান মুনির হাসান।

তিনি বলেন, দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রিয় শিক্ষকদের খুঁজে বের করে সন্মান জানানোর জন্য আয়োজন করা হচ্ছে ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা’।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আমিরুল আলম খান বলেন, ‘শিক্ষক চিরদিনই শিক্ষক। শিক্ষক আজীবন শ্রদ্ধার। শিক্ষকেরা শুধু শিক্ষকই নন তাঁরা দার্শনিক, বাতিঘর, গাইড এবং রোল মডেল। শিক্ষককে আদর্শবান হতে হবে। কিন্তু যে শিক্ষকের পেটে ভাত নেই, যে শিক্ষক জানেন না অবসরে যাওয়ার কতো বছর পর তিনি অবসর ভাতা পাবেন সে শিক্ষকের পক্ষে প্রিয় শিক্ষক হয়ে ওঠা অনেক বেশি কঠিন। ভালো শিক্ষক হওয়া, প্রিয় শিক্ষক হওয়া সত্যিই অনেক কঠিন।’

২০১৯ সালে প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা পাওয়া শিক্ষক তারাপদ দাস বলেন,‘আমার একজন প্রিয় শিক্ষক বলেছিলেন, শিক্ষকতা পেশায় স্বাচ্ছন্দ নেই। তুমি কেনো এই পেশায় আসবে। আমি স্যারকে বলেছিলাম, আমি ছাত্রদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। তারা যাতে মানুষের সেবা করতে পারে এমন মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। শিক্ষক হয়ে আমি সেটা করতে পেরেছি। এজন্য গতবছর ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা’ পেয়েছি। এ সম্মান শুধু আমার নয় এ সম্মান সমস্ত শিক্ষক সমাজের।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আইপিডিসির হেড অফ ডিস্ট্রিবিউশন রাহাত জামিল, যশোর জেলা শাখার ব্যবস্থাপক জসীম উদ্দীন, বাঁচতে শেখার নির্বাহী পরিচালক ও এশিয়ার নোবেল ম্যাগ সাইসাই পুরস্কার জয়ী ড. আঞ্জেলা গোমেজ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হাবিবা শেফা, সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক যশোরের সভাপতি সুকুমার দাস, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বুলু, ডা. আবদুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের অধ্যক্ষ জেএম ইকবাল হোসেন, সুশাসনের জন্যে নাগরিক-সুজন যশোরের সভাপতি সালেহা বেগম, গ্রামের কাগজের সম্পাদক মোবিনুল ইসলাম, দৈনিক লোকসমাজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনোয়ারুল কবীর নান্টু, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাজেদ রহমান, প্রেসক্লাব যশোরের সাবেক সম্পাদক এসএম তৌহিদুর রহমান, সাংস্কৃতিক সংগঠন তির্যক যশোরের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর দাস রতন, দৈনিক প্রতিদিনের কথা পত্রিকার বার্তা সম্পাদক এইচ আর তুহিন, কবি ও সাহিত্যিক ড. শাহনাজ পারভীন, পাঁচবাড়িয়া-বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী মাহমুদা আক্তার, যশোর শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক পারভীনা খাতুন, মানবাধিকার কর্মী অ্যাড. তাহমিদ আকাশ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে শিক্ষক সম্মাননা নিয়ে ‘আক্তার স্যার’, ‘প্রিয় শিক্ষক সম্মানা ২০১৯ ফিরে দেখা ‘এবং ‘মজুমদার স্যার’ নামে তিনটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন প্রথম আলো যশোর বন্ধুসভার সদস্যরা।

অনলাইনে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করা যাবে www.priyoshikkhok.com এই ওয়েব ঠিকানায়।