দৌলতপুরে ধর্ষণের অভিযোগে একজন গ্রেপ্তার, মাদ্রাসা ছাত্র পলাতক

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় গান শুনে বাড়ি ফেরার পথে স্বামী পরিত্যক্তা এক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত ধর্ষককে গ্রেপ্তার করেছে। সোমবার (১২ অক্টোবর) রাতে উপজেলার ধর্মদহ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে থানায় দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়। গ্রেপ্তার রুস্তম আলীকে বুধবার (১৪ অক্টোবর) জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে উপজেলার জয়রামপুর এলাকায় দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে সুমন রেজা নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দুই সপ্তাহ আগে ধর্ষণ মামলা হলেও অভিযুক্ত আসামি সুমন রেজাকে পু্লিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম ধর্মদহে একটি বাড়ির অাঙিনায় সোমবার রাতে পালা গান অনুষ্ঠিত হয়। সেই গান শুনে সেখান থেকে কয়েক বাড়ি দূরে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন স্বামী পরিত্যক্তা এক নারী (৩২)। আশেপাশের লোকজন গান শেষ করে ফেরার পথে ধর্মদহ মাধ‌্যমিক বিদ‌্যালয়ের পাশে অানেছা খাতুন নামে এক মহিলার বাড়ির কাছে পৌঁছলে তারা ওই বাড়ির ভেতর থেকে নারী কণ্ঠের চিৎকার শুনতে পান।

এ সময় স্থানীয়রা এগিয়ে গেলে অভিযুক্ত ধর্ষক ওই বাড়ি থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। টর্সলাইটের আলোয় পালানো ব্যক্তিকে চিনে ফেলেন তারা। তার নাম রুস্তম আলী (৬০)। তিনি একই গ্রামের চমৎকার মণ্ডলের ছেলে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় বাড়ি ফিরে ‘ধর্ষিত’ নারী তার পিতার কাছে ঘটনাটি খুলে বলেন। পরেরদিন মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরের দিকে ওই নারী বাদী হয়ে রুস্তম আলীর নামে ধর্ষণের অভিযোগ এনে দৌলতপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

স্বামী পরিত্যক্তা দুই সন্তানের জননী ‘ধর্ষণের শিকার’ ওই নারীর পিতা জানান, ওই রাতে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় তেকালা পুলিশ ক্যাম্পের আইসিকে মোবাইল ফোনে ঘটনাটি অবগত করা হয়। স্থানীয় মহিলা মেম্বার আম্বিয়া খাতুনকে জানানো হয়। পরে রাতেই পুলিশ ও জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে তার মেয়ে (‘ধর্ষিতা’) নিজেই ধর্ষণের ঘটনা খুলে বলেন। তবে পুলিশ ঘটনা জানার পরেও সে সময় অভিযুক্ত ধর্ষককে আটক করেনি। ক্যাম্প আইসি বিষয়টি মীমাংসা করে নেয়ার পরামর্শ দেন বলে তিনি জানান।

মহিলা মেম্বার আম্বিয়া খাতুন বলেন, ঘটনাটি শোনার পর রাত ১২টার দিকে আমি সেখানে পৌঁছে দেখি তেকালা পুলিশ ক্যাম্পের আইসিসহ স্থানীয় অনেক মানুষ উপস্থিত রয়েছেন। অভিযু্ক্ত রুস্তমও ছিলেন। সবার সামনে মেয়েটি ধর্ষণের বর্ণনা দেন। কিন্তু অভিযুক্ত রুস্তম আলী তার বিরুদ্ধের এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। আম্বিয়া খাতুন আরো বলেন, স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় ওই মেয়েটি পিতার সঙ্গে মঙ্গলবার সকালে আমার কাছে আসেন। আইনি সহযোগিতার জন্য তাদেরকে চেয়ারম্যানের কাছে যেতে পরামর্শ দেই।

এদিকে ঘটনার রাতে সবকিছু শোনার পরেও ক্যাম্প আইসি তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা ঘটনাটি পুলিশের এড়িয়ে যাওয়ার পেছনে বিশেষ কোনো কারণ ছিল কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তেকালা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (আইসি) এসআই ফসিউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ওপর থানা থেকে যে নির্দেশ এসেছে সেটাই পালন করেছি। নির্দেশের বাইরে কিছু করার সুযোগ ছিল না।

দৌলতপুর থানার ওসি (তদন্ত) নিশিকান্ত সরকার জানান, মঙ্গলবার থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হলে তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত আসামি রুস্তম আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে অভিযোগ স্বীকার করেননি। অভিযোগকারী নারীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুধবার বেলা ১২টার দিকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

এ সময় ওসি নিশিকান্ত সরকার বলেন, ঘটনার দিন রাত ২টা পর্যন্ত অফিসে ছিলাম। পুলিশ ক্যাম্প থেকে এ বিষয়ে আমাকে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। রাতে জানলে তখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম। তবে এটি অাসলেই ধর্ষণ নাকি ধর্ষণের নামে সাজানো ঘটনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। আমরা ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টের অপেক্ষা করছি। এই মুহূর্তে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

অপরদিকে দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের জয়রামপুর এলাকার দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া প্রায় ১৬ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রীর সঙ্গে একই এলাকার সুমন রেজা (২০) নামে এক মাদ্রাসা ছাত্র প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে তাকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত সুমন রেজা জয়রামপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে।

জানা গেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়লে সুমন রেজা ফোন করে ওই ছাত্রীকে বাড়ির বাইরে আসতে বলেন। প্রেমিকের কথায় মেয়েটি বাড়ির পেছনে গেলে সুমন তাকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যান। মেয়েটি প্রথমে বিষয়টি গোপন করে রাখলেও অবশেষে ঘটনার ১০ দিন পর (২৯ সেপ্টেম্বর) তার মাকে জানায়।

এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সুমন রেজার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। মেয়ের বাবা অভিযোগ করে বলেন, মামলার পর দুই সপ্তাহ ধরে সুমন প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু পুলিশ তাকে ধরছে না। আমি একজন দরিদ্র মানুষ। অন্যের ক্ষেতে দিনমজুরির কাজ করি। তিনি অবিলম্বে মামলার অাসামি সুমন রেজাকে গ্রেপ্তারের দাবি করেন।

দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহুরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, মামলা হওয়ার পর থেকে অভিযুক্ত আসামি সুমন পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। তবে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় এখনো তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। খুব শিগগিরই পলাতক মাদ্রাসা ছাত্র সুমন রেজা পুলিশের হাতে ধরা পড়বে বলে আশ্বাস দেন ওসি।