মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প ?

ক’দিন পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। করোনা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি না হলেও বিশ্ববাসীর চোখ ঠিকই আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে রয়েছে। আমাদের এখানে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মঞ্চ পর্যন্ত সবখানে এই নির্বাচন নিয়ে আলোচনা কম হয়না। তাছাড়া, মার্কিন নির্বাচন বিশ্বরাজনীতিতে বেশ প্রভাবও রাখে বৈকি!

দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডেমোক্রেট পার্টির জো বাইডেন ও রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প যিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট উভয়েই জোর নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। করোনা আক্রান্ত হয়েও ট্রাম্প বিভিন্ন প্রচার সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন।

আমেরিকার আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা, কল্পনা-জল্পনা। কে হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখন তা অনেকরই প্রশ্ন। আমেরিকার ভোটাররা ৩রা নভেম্বর নির্ধারণ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তারা আরো চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউজে দেখতে চান কিনা। নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন, যিনি বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনেক বেশি পরিচিত, যদিও তিনি গত শতাব্দীর ৭০-এর দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন।

নির্বাচনের সময় যতোই ঘনিয়ে আসছে জনমত যাচাইকারী কোম্পানিগুলো সারা দেশে লোকজনের পছন্দ অপছন্দ জানতে ততোই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। ভোটারদের তারা প্রশ্ন করছে তারা কোন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে আগ্রহী। আমি নিজেও নিউইয়র্কে বসবাসরত আমার বাবা, মা, ভাই আত্মীয় স্বজনসহ অনেকের সাথে কথা বলে সেখানকার নির্বাচনের পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছি। তারা বলছেন, নির্বাচনে কে জয়ী হবেন সেটা নিশ্চিত হওয়া খুবই টাফ্। কারণ, গতবার হিলারীর এতো সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। অন্যদিকে, মার্কিনীরা বিশ্বব্যাপী নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে সরব থাকলেও নিজেদের দেশে এর বাস্তবায়ন দেখাননা নাকি দেখতে চাননা তা বোঝা বড় মুশকিল!

আমেরিকার নির্বাচনে জনপ্রিয়তার দৌড়ে কোন প্রার্থী এগিয়ে। এ সম্পর্কে বিবিসি তাদের একটি বিশ্লেষণে যেমনটা বলছে, ‘কে কতোটা এগিয়ে আছেন সে বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত জরিপ বা সমীক্ষা থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। তবে এসব জরিপ থেকে নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে আগে থেকে আন্দাজ করা কঠিন।

উদাহরণ হিসেবে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ওই নির্বাচনের আগে জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত জনমত জরিপে এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে তিনি ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি হেরে যান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ নির্বাচনী ব্যবস্থা ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির কারণে এরকম হয়েছে। ফলে বেশি ভোট পেলেই নির্বাচনে জয়ী হবেন সেটা সবসময় নিশ্চিত করে বলা যায় না। এবছর জাতীয় পর্যায়ে যতো জরিপ হয়েছে তার বেশিরভাগ ফলাফলেই জো বাইডেন এগিয়ে আছেন।
গত কয়েক সপ্তাহে যেসব জরিপ হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে বাইডেনের প্রতি সমর্থন ৫০% এর কাছাকছি। কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে এগিয়ে আছেন ১০ পয়েন্টে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত কয়েকদিনে এই দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ের জরিপে দেখা যাচ্ছে, জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন যেখানে ৪৯%, সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পেছনে সমর্থন ৪৫%।
গত নির্বাচনের আগে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প কার অবস্থান কোথায় এই চিত্রটা ততোটা পরিষ্কার ছিলো না। এবার দুই প্রার্থী জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেশি, কোথাও কোথাও ৫% থেকে ১০%। অথচ ২০১৬ সালের জনমত জরিপগুলোতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটনের মধ্যে ব্যবধান ছিলো সামান্য কিছু পয়েন্ট।

গত নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের পরাজয় থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোন প্রার্থী কতো বেশি ভোট পেয়েছেন তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কোন রাজ্যে কোন প্রার্থী বেশি ভোট পেয়েছেন। সাধারণত বেশিরভাগ রাজ্যেই সবসময় একই রকমের ভোট পড়ে। কিছু কিছু রাজ্য আছে যেখানে দুজন প্রার্থীর যে কেউ বিজয়ী হতে পারেন।

এসব রাজ্যেই নির্ধারিত হবে কে নির্বাচনে জয়ী আর কে পরাজিত হবেন। জয় পরাজয়ের যুদ্ধটা হয় সেখানেই আর তাই এসব রাজ্যকে বলা হয় ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেটস।

★লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

১৪ অক্টোবার, ২০২০ at ১৩:২৩:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এআর/এমএআর