ড্রাগনের সাথে সাথী ফসল কুলচাষ, লাভের আশায় কৃষক

যশোরের চৌগাছায় এক কৃষক ড্রাগন চাষের সাথে সাথী ফসল হিসেবে কুলচাষ করে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছেন। ইতোমধ্যে প্রতিটি কুলগাছে ব্যাপক পরিমাণে কুল ধরেছে। সেই সাথে মুল ফসল ড্রাগনও ভাল ভাবেই বেড়ে উঠছে। এক জমিতে একই সাথে দুই ফসলের চাষ দেখে অনেকে খুশি, তারাও সামনের দিনে এ ভবেই চাষ করার চিন্তা করছেন বলে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। এ বছর চৌগাছাতে ১০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ও ৮০ হেক্টর জমিতে কুলচাষ হয়েছে।

উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের আরজী সুলতানপুর গ্রামের মৃত এলাহী মন্ডলের ছেলে কৃষক রবিউল মন্ডল। মুলত কৃষি কাজ করেই তার সংসার চলে। প্রত্যেক বছর ধান পাট চাষের পাশাপাশি নতুন নতুন ফসলের চাষ করে তিনি বেশ সাফল্য পেয়েছেন। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরে গ্রামের মাঠে চৌগাছা-কোটচাঁদপুর মেইন সড়কের পাশে প্রায় দুই বিঘা জমিতে চাষ করেছেন উন্নত জাতের ড্রাগন। ড্রাগন একটি দীর্ঘ মেয়াদি ফসল, গাছে ফল আসতেও বেশ সময় লাগে। এই ভাবনা থেকে তিনি সমুদয় জমিতে রোপন করেন বল সুন্দরী জাতের কুলের চারা। বর্তমানে সমস্ত জমির কুল গাছে ফুল আর ফলে ভরে গেছে। যে পরিমাণ ফল দেখা দিয়েছে তাতে করে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে কুল বিক্রি করেই তার খরচের টাকা উঠে আসবে বলে মনে করছেন।

যেয়ে দেখা যায় কৃষক রবিউল মন্ডল নিবিড়ভাবে তার ক্ষেত পরিচর্চা করছেন। এ সময় কথা হয় কৃষকের সাথে। তিনি জানান, চৌগাছা এলাকাতে ড্রাগন চাষ ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। ড্রাগন চাষ করে কৃষক বেশ লাভবান হচ্ছেন। সেই দিক বিবেচনা করে চলতি বছরে আমি দুই বিঘা জমিতে ড্রাাগন চাষ করি। ড্রাগনের সাথে কুল চাষের মনস্থির করি এবং দু’এক দিনের মধ্যেই সমুদয় জমিতে বল সুন্দরী জাতের কুলের চারা রোপন করি। বর্তমানে সব গাছেই ফল এসেছে। দুই ফসলের জন্য আলাদা আলাদা সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। এ জন্য তেমন কোন সমস্যা হয় না।

কৃষক রবিউল মন্ডল বলেন, ড্রাগনের সাথে কুল চাষ একটি ভাল উদ্যোগ এমনটি মনে করে প্রায় দিনই স্থানীয় অন্য চাষিসহ বিভিন্ন ধরনের মানুষ ক্ষেতে আসছেন এবং ওই সকল কৃষক আগামীতে এ ধরনের চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

তিনি বলেন, বাংলা সনের চৈত্র মাসে ড্রাগন লাগানো হয়। গাছ লাগানোর দেড় বছর পর ড্রাগন ফল দিতে শুরু করে। ২ বিঘা জমিতে ১৭শ ড্রাগন আর ২১৫ পিচ কুলের চারা রোপন করেছেন। প্রতিটি কুল গাছে ব্যাপক পরিমাণে কুল ধরেছে। যদি কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হয় আর যদি কুল উঠার সময় বাজার দর ভাল থাকে তাহলে প্রায় ২ লাখ টাকার কুল বিক্রি হবে বলে তিনি মনে করছেন। চলতি মৌসুমে তিনি ড্রাগনের জমি ছাড়াও প্রায় ৬ বিঘা জমিতে নানা জাতের কুলের চাষ করেছেন। পাশ্ববর্তী গ্রাম থেকে সাথী ফসলের ক্ষেত দেখতে আসা আশরাফুল আলম বলেন, ড্রাগন যেহেতু দীর্ঘ মেয়াদি ফসল, তাই কুল চাষ করে ওই কৃষক ভালই করেছেন। তিনি আগামীতে কৃষক রবিউল মন্ডলকে অনুসরণ করে ড্রাগন ও পেয়ারার চাষ এক সাথে করবেন বলে জানান।

উপজেলা কৃষি অফিসার রইচ উদ্দিন বলেন, চৌগাছাতে ১০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ও ৮০ হেক্টর জমিতে কুলচাষ হয়েছে। ড্রাগনের সাথে কুলচাষ নিঃসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ। কৃষক যাতে এ ধরনের নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করে তার জন্য কৃষি অফিস কাজ করে যাচ্ছে।

১৩ অক্টোবার, ২০২০ at ২১:১৫:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমআই/এমএএস