স্বপ্ন ভাঙ্গছে কৃষকের

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে ফসলী ক্ষেত বিনষ্টের ঘটনা। দূবৃর্ত্তরা রাতের আধারে একের পর এক নৃশংস ভাবে ধরন্ত -ফলন্ত ক্ষেত নষ্ট করছে। কৃষকেরা ধারদেনার মাধ্যমে ফসল চাষ করার পর ভরা ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় তারা একেবারে পথে বসে যাচ্ছেন। রাতের আধারে কে বা কারা লোক চক্ষুর আড়ালে এমন জঘন্যতম কাজটি করছে। যে কারনে ক্ষতিগ্রস্থরা নির্দিষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করতে পারছেন না। ফলে এমন ক্ষতিকর কাজ করেও মনুষ্যত্বহীন দুর্বৃত্তরা থাকছে ধরা ছোয়ার বাইরে। এদিকে প্রায়ই ক্ষেত নষ্টের ঘটনা ঘটায় সবজি ক্ষেতের মালিকেরা রয়েছেন অচেনা এক আতঙ্কে।

ভুক্তভোগী কৃষকদেরসূত্রে জানাগেছে, বিগত কয়েক মাস ধরে শত্রুতা করে মানুষের অগোচরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের সবজি ক্ষেত কেটে সাবাড় করছে। পুকুরে কখনও কীটনাশক দিয়ে আবার গ্যাস বড়ি ব্যবহারের মাধ্যমে মাছ নিধন করছে। কৃষকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করলেও সমাজের গুটি কয়েক দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ দ্বারা স্বপ্ন ভাঙছে তাদের। তারা বলছেন, শত্রুতার মাধ্যমে কৃষকের ভরা ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। এটা মনুষ্যত্বহীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

আবার উপজেলার বড় শিমলা গ্রামের কৃষক নূর ইসলামের ৩৩ শতক জমিতে লাউয়ের গাছ রোপন করেছিলেন। সুন্দর টাল (মাচা) দিয়ে রাখা হয়েছে। টালে ছড়িয়ে আছে গাছগুলোর সবুজ পাতা। দেখলেই যে কারও প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ফুল ও ফল আসতে শুরু করেছিল খেতে। কিন্তু রোববার সকালে লাউ কাটতে গিয়ে দেখা গেল, টাল কিছুটা এলোমেলো, কাছে গিয়ে দেখতে পান লাউয়ের গাছগুলি গোড়া থেকে কাটা। কে বা কারা রাতের আঁধারে এই খেতের প্রায় ২০০টি লাউগাছ গোড়া থেকে দিয়েছে কেটে।

মাঠে লাউয়ের গাছ কাটা দেখতে যিনিই যাচ্ছেন, তিনিই হতবাক হয়ে পড়ছেন। কৃষক নূর ইসলাম বলেন, এবছর তার চাচার নিকট হতে ১ বিঘা জমি লিজ নিয়ে লাউয়ের চাষ করেন। গত ২ মাস আগে এই লাউখেতে বীজ বপন করেন। প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করে সেখানে টাল দেন তিনি। গাছগুলো টালে যাওয়ার পর ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। গাছে লাউও ধরেছিল। প্রতি দুই দিন পর পর লাউ কাটেন।

তিনে আরও বলেন, গত দুই মাস তিনি একটানা এই খেতে পড়ে থেকেছেন। সবকিছু নিজেই তদারকি করতেন। প্রতিটি গাছেই তাঁর হাতের ছোঁয়া রয়েছে। দুই দিন আগেও ৬৫টি লাউ কেটেছিলাম। রোববার সকালে দিকে লাউ কাটতে গিয়ে তিনি দেখতে পান টাল এলোমোলো। প্রথমে ধারনা করেছিলেন গরুতে টাল এলোমেলো করেছে। পরে কাছে গিয়ে দেখতে পান গাছগুলি তরতাজাই রয়েছে। কিন্তু প্রতিটা গাছের গোড়া কাটা। এভাবে ফসলের ক্ষতি করবে তাঁর এমন কোনো শত্রু নেই। তারপরও যারা এটা করেছে, তারা তাঁকে আর্থিকভাবেই শেষ করে দিতে চায় বুঝছেন। তিনি এই বিষয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানান।

যুবলীগ নেতা উপজেলা ভাইচ চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী বলেন, এই ক্ষতি কোনোভাবেই মানা যায় না। গাছগুলো কৃষকের কাছে তাঁর সন্তানের মতো। সেভাবেই তিনি বড় করেছেন। যারা এই ফসলের ক্ষতি করেছে, প্রশাসন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে এটাই সবার প্রত্যাশা।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিকদার মো. মোহাইমেন আক্তার বলেন, কৃষকের ভরা ক্ষেত কেটে দেয়ার মত ক্ষতি পুশিয়ে উঠার নয় ক্ষতে কাটা এটা একটা ফৌজদেরী অপরাদ। তবে কৃষক যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

কৃষকের লাউয়ের গাছ কাটার বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাঃ মাহফুজুর রহমান মিয়া বলেন, কৃষকের অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষেতটি পরিদর্শন করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

১১ অক্টোবার, ২০২০ at ২২:১৬:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/বহ/ইইই