যশোরে বাসে ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে ধুম্রজাল: ধর্ষণ না কি স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক!

যশোরে বাসের মধ্যে তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার ৭ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শনিবার (১০ অক্টোবর) দুপুর দেড়টার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শনিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে যশোরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালতে তাদের সোপর্দ করা হয়। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

এদিকে, ঐ নারী তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করলেও নানা ঘটনাবলী পর্যালোচনা করে পুলিশ বলছে ধর্ষণ নয়, তারা পূর্ব পরিচিত এবং যশোরে তারা এক সাথে হোটেলে খাওয়া ধাওয়ায় করে। প্রধান অভিযুক্ত হেলপার মনিরুল ইসলাম ও ঐ নারী স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক করেছে।
এদিকে কথিত ধর্ষণের ব্যাপারে ঐ নারী প্রধান অভিযুক্ত মনিরুল ইসলামসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। বর্তমানে তিনি যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রথমে এটি গণধর্ষণ বলা হলেও পরবর্তীতে মনিরুল ইসলাম মনিরই ঐ নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।

আটককৃতরা হলো, মামলার প্রধান আসামি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের ওহিদুলের ছেলে ও এমকে পরিবহন বাসের হেলপার মনিরুল ইসলাম (২৮)। বর্তমানে মনিরুল যশোর সদর উপজেলার রামনগর ধোপাপাড়ায় কাঠমিস্ত্রি শহিদুলের বাড়ির ভাড়াটিয়া। অভিযুক্ত মনিরুল এক কন্যাসন্তানের জনক। বাকি ছয় আসামি হলেন- শহরের সিটি কলেজপাড়ার রনজিৎ বিশ্বাসের ছেলে কৃষ্ণ, একই এলাকার সমর সিংহের ছেলে সুবাস সিংহ, শহরের বারান্দিপাড়ার জাবেদুল ইসলাম জাবেদের ছেলে রকিবুল ইসলাম রকিব, শহরের বেজপাড়ার গোলাম মাওলার ছেলে মইনুল ইসলাম মইন ও শহরের পূর্ববারান্দি মোল্লাপাড়ার শফিকুল ইসলাম বাবুর ছেলে শাহিন আহমেদ জনি।

শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়া এলাকার শাহিন হোসেন জনি, সিটি কলেজপাড়ার কৃষ্ণ বিশ্বাস, সুভাষ সিংহ, বারান্দী কাঁঠালতলা বৌবাজার এলাকার রাকিবুল ইসলাম রকিব, বারান্দীপাড়ার কাজী মুকুল এবং বেজপাড়া কবরস্থান রোড এলাকার মঈনুল ইসলাম।

সূত্রে জানা গেছে, এটি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা নয় বরং প্রেমিকের সঙ্গে স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক। এ পর্যন্ত তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যা পেয়েছেন তাতে ঘঁটনাটিকে ধর্ষণ বলা যায় না। ঘটনা জানা জানি হয়ে যাওয়ায় রক্ষাপেতে ঐ তরুনী এখন স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ককে ধর্ষণ বলে চালিয়ে দিচ্ছে।

যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামানের ভাষ্য, ঘটনার দিন রাত দেড়টার দিকে যশোর শহরের বকচর কোল্ড স্টোরেজ এলাকা থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। তার সঙ্গে বাসটির হেলপার মনিরের আগ থেকেই সর্ম্পক ছিল। মেয়েটি মনিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাজশাহী থেকে যশোর আসে। মনিরের গাড়ি সকালের দিকে রাজশাহী থেকে যশোরে ছেড়ে আসে। আর রাজশাহী থেকে বিকেলে ছেড়ে আসা গাড়িতে ওই তরুণী যশোরে আসেন।

মণিহারের সামনে নেমে ওই তরুণী প্রথমে মনিরকে ফোন করে। মনির এসে তাকে নিয়ে স্থানীয় রাজপ্রিয়া হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করে। এরপর তারা দু’জনে বকচর কোল্ড স্টোর মোড়ে এমকে পরিবহনে চলে যায়। কিন্তু মনির এবং ওই তরুণী যখন মণিহারের সামনে কথা বলে তখন তাদের দেখে ফেলে ৬ জন (যাদের আটক করা হয়েছে)। ওই ৬ জন মনিরকে অনৈতিক অবস্থায় ধরার জন্য পরামর্শ করে অপক্ষোয় থাকে।

এক পর্যায়ে রাত একটার দিকে ওই তরুণী মনিরের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার পর প্রথমে সেখানে ঐ ৬ জনের ৩ জন যায় এবং তরুণীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে চায়। কিন্তু তিনি রাজি হননি। এরই মধ্যে অন্য তিনজনও সেখানে হাজির হয়। এসময় মনির এবং তরুণীকে তারা এলোপাতাড়ি মারপিট করে। এসময় মনির দৌড়ে পালিয়ে যায়। মেয়েটি সেখানেই পড়ে থাকে। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে থানা পুলিশ তরুণীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক জাহিদ হাসান হিমেল বলেন, ওই তরুণী শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। তার শরীর থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।

এদিকে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইনসপেক্টর শেখ আবু হেনা মিলন জানান, নির্যাতনের শিকার তরুণী বাদী হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ঘটনার দিন আটক ৭ জনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক আসামিদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। প্রধান অভিযুক্ত মনিরুল ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানা ওই কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, মামলার বাদী ভিকটিম নিজেই।

১০ অক্টোবার, ২০২০ at ১৮:৫০:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/তআ/ইইই