আগুন দিয়ে শিশুকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার তথ্য পাওয়া গেছে

যশোরের ঝিকরগাছা উপ-জেলার বাকুড়া গ্রামে আগুন দিয়ে শিশু আল-আমিন কে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় চাঞ্চাল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। শিশু আল-আমিনের নানি সাকিরন নেছার দিকে গ্রামবাসীর অভিযোগ তীর। একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে দাউদ সরদারকে। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে শিশু আল-আমিন। বাঁচার কোন সম্ভবনার কথা বলেনি চিকিৎসক- জানিয়েছেন সাকিরন নেছা।

শনিবার সকালে বাকুড়া গ্রামের সরোজমিনে গিয়ে গ্রামের অনেক নারী-পুরুষের সাথে কথা হয়। সাংবাদিক এসেছে শুনে আরো অনেকেই উৎসাহী হয়ে এগিয়ে আসেন। এ সময় কথা হয়, গ্রামের সুন্দরী বেগম, আবু সাঈদ, লুৎফর রহমান, শাহাজান আলী, জোহরা বেগম, মিলন কবীর সহ অনেকের সাথে। তারা জানান, দাউদ সরকার একজন ভাল মানুষ। পক্ষান্তরে সাকিরন নেছা বজ্জাৎ শ্রেণির লোক। দাউদ সরদারের দ্বারা আগুন দিয়ে শিশু হত্যার মত জঘন্য কাজ হতে পারে না। ঐ শিশু তার নানীর কাছে থাকে। নানী সাকিরন নেছা যশোরে থাকে। সে বাড়ি এসেছে কিনা তা গ্রামের কেউ জানে না। টাকা আদায় করার জন্য সাকিরন নেছা বাচ্চার গায়ে আগুন দিয়ে নিজের দোষ অন্যেও ঘাড়ে চাপাচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেছেন।

সুফিয়া খাতুন নামের এক গৃহবধু জানান, দাউদ এমন লোক না যে, একটা বাচ্চার গায়ে আগুন দিয়ে তাকে হত্যা করবে। একটা মানুষকে এত বিপদে ফেলানো ঠিক হচ্ছে না। সাকিরন নেছার যে বাড়িতে বাচ্ছাটি পুড়ে গেছে, সেখানে যাওয়ার পর ছুটে আসেন, তার দেবর আব্দুর রহমান, আব্দুর রহিম, জা রোজিনা খাতুন ও প্রতিবেশী শেফালী খাতুন। তারা জানান, রাতে সাকিরন নেছা ও আল-আমিনের চিৎকার শুনে আমরা ছুটে আসি। এসে দ্রুত তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করি। তবে এখানে অন্য কেউ আগুন দিতে পারে কিনা সেই প্রশ্নের জবাবে তারা কোন কথা বলতে নারাজ।

তবে একই মশারীর নিচে থেকে একজন পুড়ে গেছে, অন্যজনের কিছু না হওয়ার কারণে সকলের মনে যথেষ্ট সন্দেহের দানা বেঁধেছে। তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, এ ঘটনায় দাউদ সরদার ৮ মাস জেলে খেটেছে। তার মেয়ে রোকেয়া খাতুন ২৩ দিন জেলে খেটেছে। তার মেয়ে তালাকপ্রাপ্ত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা নষ্ট হয়েছে। তারপরও একের পর এক মামলা দেয়া হয়েছে দাউদ সরদারকে।

দাউদ সরদার বলেন, এ ঘটনা স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করা হয়। সে সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থেকে ৬ লক্ষ টাকা দেয়া হয় সাকিরন নেছাকে এবং মামলা তুলে নেয়ার কথা হয়। কিন্তু টাকা নিয়ে মামলা তুলে নেয়নি সাকিরন। পরে আরো একটি অপহরণ মামলা দেয়। সেই মামলায় আমাকে ৮ মাস ও আমার মেয়েকে ২৩ দিন জেলে থাকতে হয়েছে। এ দিকে আদালতের মাধ্যমে শিশু আল-আমিনের ভরণপোষনের জন্য ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছে। এ যাবত মোট ১১ লক্ষ টাকা দিয়েছি।

মেয়ে তার মেয়ে রোকেয়া খাতুন ও রেহেনা খাতুন জানান, আমরা ঐ ছেলেকে মেনে নেব না একথা একদিনও বলিনি। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ঐ ছেলেকে নেয়ার বারবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের কাছে ঐ বাচ্চা একদিনও দেয়নি। একটা শিশুকে পুড়িয়ে হত্যার করার মত জঘন্য কাজ আমরা কেন করতে যাবো?

এদিকে শিশু আল-আমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। ভাল হয়ে যাবে-এমন আশ্বাস চিকিৎসক দেয়নি। ফলে তার জীবন এখন অনিশ্চয়তার দিকে রয়েছে। এ ব্যাপারে সাকিরন নেছা মুঠোফোনে বলেন, গ্রামের লোকজনের অভিযোগ মিথ্যা। আমি বাচ্চাটা নিয়ে একবার বাড়ি ফিরি তারপর দেখছি কে,কি বলেছে? তাদেও পক্ষে যেমন লোক আছে, আমার পক্ষেও তেমন লোক আছে।

১০ অক্টোবার, ২০২০ at ১৭:৫০:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমআ/ইইই