গণমাধ্যমে ধর্ষণের খবর ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

কোনো একটা বড় ইস্যু সামনে আসলেই আমাদের গণমাধ্যম তা নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে। যথারীতি শোরগোল পড়ে যায়। সেই খবরের বাজার গরম করে তোলা হয়। মার্কেটিংয়ের জন্য ইনিয়ে বিনিয়ে খবর তৈরি করে অনেকে। সংবাদপত্রে বড় বড় অক্ষরে শিরোনাম হয়। টিভি টকশোর টেবিলে আলোচকদের মধ্যে উত্তেজনার পারদ ছড়িয়ে পড়ে। নতুন করে বড় কোনো ইস্যু সামনে না আসা পর্যন্ত চলমান ইস্যু নিয়ে খবরের ঢেউ বইতেই থাকে। গণমাধ্যমের জন্য এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়ায়। এ রকম বাস্তবতায় সঙ্গত কারণেই এখন চলছে ধর্ষণের খবরের ভরা মৌসুম। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক ঘটেই চলেছে ধর্ষণের ঘটনা। ফেসবুকে স্ক্রল করলেই বারবার শুধু ধর্ষণের খবরই চোখে পড়ছে। হঠাৎ করেই যেন ‘ধর্ষণের দেশে’ পরিণত হয়ে উঠেছে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।

সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ছাত্রলীগ কর্মীদের গণধর্ষণের পৈশাচিক ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। গণমাধ্যমের সুবাদে যা সবারই জানা। এ নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে রীতিমতো খুঁটিনাটি সব খবর আসতে থাকে। বর্বরতম এ ঘটনায় সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। যথারীতি প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়ে ফেসবুকেও। নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তুমুল প্রতিবাদের মুখে পুলিশ ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

এর জের কাটতে না কাটতেই রোববার (৪ অক্টোবর) নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে পাশবিক নির্যাতনের আরেকটি নারকীয় ঘটনা সামনে আসে। অনেকে বলছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন নির্মম পৈশাচিক ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। এ ছাড়া সোমবার (৫ অক্টোবর) কুষ্টিয়ার মিররপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আরো কয়েকটি ধর্ষণের খবর বেরিয়েছে গণমাধ্যমে। মঙ্গলবারও (৬ অক্টোবর) কয়েকটি স্থানের ধর্ষণের খবর প্রকাশ করেছে গণমাধ্যম। অর্থাৎ গত কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, পাশবিক নির্যাতনের খবর আসছে গণমাধ্যমগুলোয়।

এসব ঘটনায় দেশজুড়ে নতুন করে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। গোটা দেশ এখন ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভে একরকমের উত্তাল। বিক্ষুব্ধদের পক্ষ থেকে ধর্ষকদের সরাসরি ক্রসফায়ারের দাবি করা হচ্ছে। ফেসবুক ব্যবহারকারিদের অনেকে তাদের প্রোফাইল ছবি সরিয়ে কালো করে দিয়েছেন। পরের ঘটনাগুলোতেও পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বর্বরচিত এসব ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি কথাবার্তা, প্রতিবাদ চলছে। সুতরাং রীতি অনুযায়ী গণমাধ্যমেও ধর্ষণ কেন্দ্রীক খবরকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এক শ্রেণির পাঠকও এসব খবর পড়ে কেন যেন ‘মজা’ পান। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসব ধর্ষণ ঘটনার পরিসংখ্যান তৈরি করছে।

অন্যদিকে এসব ঘটনায় রাজনীতির গন্ধও পাচ্ছেন রাজনীতিকরা। দেণের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের নেতারা চিরাচরিত নিয়ম অনুসারে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। সবারই মনে আছে নিশ্চয় দিনাজপুরের ইয়াসমিন ধর্ষণের কথা। ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট আলোচিত ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় পুরো দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল। ওই এক ধর্ষণের ঘটনায়ই তৎকালীন বিএনপি সরকারের ক্ষমতার মসনদ কাঁপিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্ত এখন আর সেই দিন নাই। হাজারো ধর্ষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম, হত্যার ঘটনায়ও সরকারকে একটুও টলানোর সুযোগ নাই।

দেশে গণতন্ত্র থাকুক না থাকুক এই সরকার আটঘাট বেঁধে, সবকিছু মজবুত রেখেই দেশ পরিচালনা করছে। তিনবার সরকারে থাকা অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিকে রাজনীতি থেকে পুরোপুরি কোণঠাসা করে দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক কৌশলের কাছে ধরাশায়ী হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার মতো পরিস্থিতি বিএনপির এখন নাই। সরকারের ভিত এখন অনেক মজবুত। চলমান সিরিজ ধর্ষণের ইস্যুকে কেউ কেউ সরকার পতনের অাভাস হিসাবে দেখছেন। কিন্তু এটা তাদের দিবাস্বপ্নের মতোই মনে হচ্ছে। শেখ হাসিনার এই সরকার দুর্বল নয় যে এত সহজেই পড়ে যাবে। বিগত কয়েক বছরে অনেক ইস্যু পেরিয়ে গেছে। এখন আর ইস্যুটিস্যু হাতড়ে লাভ নাই। কিছুদিন আগে করোনার ভরা মৌসুমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পদত্যাগের দাবি উঠেছিল। কোনো লাভ হয়নি। এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। তাতেও কোনো লাভ হবে না। শুধু শুধু এইসব দাবিটাবি তুলে কী লাভ মাথায় আসে না।

যাই হোক প্রাসঙ্গিক কথায় আসি, গণমাধ্যমে হঠাৎ ইস্যুর মাতামাতিতে অপরাপর পেছনের ঘটনা অনেকটাই আড়ালে পড়ে যায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, কোথাও কোথাও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেও ধর্ষণের নোংরা নাটক সাজানো হয়, বেছে নেয়া হয় এই ‘ধর্ষণ অস্ত্র’কে। যদিও সরাসরি ধর্ষণ বলা হলে ডাক্তারি পরীক্ষায় আলামত মেলে না, তাই ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ হিসাবে থানায় অভিযোগ করা হয়। এ ছাড়া প্রেম জিনিসটা বহু মানুষের কাছে শারীরিক মেলামেশার যেন বৈধ প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে বেশ আগে থেকেই। ছেলে-মেয়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠা মানেই দেহভোগের মোক্ষম সুযোগ তৈরি হওয়া।

এ ক্ষেত্রে মেয়েরা প্রতারিত হলে প্রেমিকের বাড়ির সামনে বিয়ের দাবিতে অবস্থান, অনশন করেন। তাতেও কোনো কাজ না হলে শেষমেষ কথিত প্রেমিকের নামে থানায় ধর্ষণের অভিযোগ করেন। অনেকে আবার পারিবারিক, সামাজিক কারণে নীরবেই তা মেনে নিতে বাধ্য হন। কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নেন। তবে এসব ঘটনার শিকার কিংবা ভুক্তভোগী নারীরা এর দায় পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে পারেন না, একটু হলেও তাদের দায় থেকে যায়। তা হলো, সঙ্গী নির্বাচনে ব্যর্থতার দায়। নিজেদের সরলতার দায়। উল্টো দিকে ‘লোভ’ সংবরণ করতে না পারার দায়ও থাকে।

ভার্চুয়ালে প্রেমিকের চাকচিক্যময়তায় সহজেই মুগ্ধ হয়ে যাওয়া, চারিত্রিক বিষয়টাকে খুব একটা আমলে না নিয়ে ‘নিরাপদ ভবিষ্যতের’ কথা বিবেচনা করে কথিত প্রেমিকের অর্থ বিত্তের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া, অতিলোভের বশবর্তী হয়ে নিজের সবকিছু উজাড় করে দেয়া- ইত্যাদি ঘটনার পর যখন তথাকথিত ভালোবাসার মানুষ প্রতারণা করেন, এড়িয়ে যান। তখন সব কূল হারিয়ে সেই সব মেয়েরা প্রতারক প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন। এসব ঘটনায় থানায় ধর্ষণ অথবা ধর্ষণ চেষ্টার মামলা হয়। আর এসব মামলার সূত্র ধরেও গণমাধ্যমে ধর্ষণের খবর তৈরি হয়।

মফস্বলের অপেশাদার গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা ভালো কাভারেজ পেতে কিংবা অন্য কোনো কারণে রঙচঙ মাখিয়ে সেই খবরকে আরো আকর্ষণীয় করেন। খবরের জোয়ারে গা ভাসিয়ে দেন। একপর্যায়ে সেসব খবরে চাহিদার জোয়ারে যখন ভাটা পড়ে, মানুষ আর গ্রহণ করে না, তখন আর সেগুলোকে খুব একটা আমলে নেয় না গণমাধ্যম। সেগুলোকে খবর বলে সেইভাবে গণ্য করা হয় না। তার মানে এই নয় যে, ধর্ষণের ঘটনা ঘটে না, বা ঘটছে না। এটা কিন্তু বলার সুযোগ নাই মোটেও। বরং দেশের কোথাও না কোথাও অহরহই ঘটছে নারকীয় ধর্ষণের ঘটনা।

তবে কিছু ক্ষেত্রে ঘটনা যা ঘটে তার চেয়ে সুযোগ মতো একটু বেশিই রটে। সুযোগ বলতে, গণমাধ্যমগুলোর ভেতরে পাল্লাপাল্লি আর ক্ষেত্র বিশেষে খবর নিয়ে অতিমাত্রায় মাতামাতি। গণমানুষের তথ্য ক্ষুধা বা তথ্যের চাহিদা পূরণ করা গণমাধ্যমের দায়িত্ব। কিন্তু তথ্যের চাহিদা বাড়ানোর জন্য খবর তৈরি করাটা সমীচীন নয়। এর কারণে মানুষের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়। সুতরাং খবর সংশ্লিষ্টদের খবরের জন্ম দেয়ার চেয়ে তারা যা দেখেন, যা ঘটে যায় তাই তুলে ধরার প্রতি আরো বেশি যত্নবান হওয়া বাঞ্ছনীয়। পেশাদার না হলেও সংবাদকর্মীদের মাঝে খবর পরিবেশনে পেশাদারি মনোভাব থাকাটা খুব জরুরি।

কয়েকদিন আগে সাংবাদিক, গবেষক আফসান চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে পারছে না। গণমাধ্যম নিজেকে সংবাদমাধ্যম হিসেবে না ভেবে উপ-রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ভাবছে। তারা অনুসন্ধানী না হয়ে এখন হেডলাইন নির্ভর হয়ে পড়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের সফল হওয়ার চেষ্টা নেই, তারা প্রস্তুত নয়। এমনকি মালিকপক্ষও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয় না। এ থেকে বের হতে না পারলে গণমাধ্যম মুক্ত হতে পারবে না, গণমাধ্যমকর্মীরাও তাদের দায়িত্ব পালনে সফল হবে না।

জনাব অাফসান চৌধুরী যথার্থই বলেছেন। যা আমি নিজের ফেসবুক ওয়ালেও রেখেছি। তার সেই কথাগুলো এখানে টানলাম এই জন্য যে, ইদানীং কিছু গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যমকর্মীরা নানাভাবে প্রভাবিত হওয়ার ফলে প্রকৃত ঘটনা অাড়াল হয়ে যাওয়ার উপক্রম দেখা দিচ্ছে। যদিও আখেরে তা টিকছে না। তবুও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। পাঠককে জোর করে খাওয়াতে বাড়ছে মুখরোচক খবর তৈরির প্রবণতা। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হয়ে পড়েছে অনুমাননির্ভর সাংবাদিকতা। ধর্ষণের খবরের বেলায়ও যে এমন ঘটছে না, তা বলা যাবে না। অন্যদিকে ফেসবুক ব্যবহারকারিরা একদিকে যেমন একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে তেমনিভাবে এই ফেসবুক ব্যবহারকারিদের অনেকে ধর্ষণকে কেন্দ্র করে উসকানি সৃষ্টির প্রয়াস চালাচ্ছেন।

যেহেতু আমি নিজেও মফস্বলের একজন সংবাদকর্মী। এ কারণেে হয়তো কারো কাছে এই লেথাটি স্ববিরোধী টাইপের এবং একই সঙ্গে ছোট মুখে বড় কথার মতো মনে হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে কিছুটা বলার চেষ্টা করলাম। জানি না কে কীভাবে গ্রহণ করবেন। যে যেভাবেই নিক সেটা যার যার নিজস্ব ব্যাপার। এই লেখার মাধ্যমে ঘটে যাওয়া সব ধর্ষণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অভিযুক্ত ধর্ষকদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

রোববার (৪ অক্টোবর) মানবজমিনের শেষ পৃষ্ঠায় প্রধান খবর ছিল গত কয়েক বছরের ধর্ষণের পরিসংখ্যান নিয়ে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল ‘সাড়ে ৪ বছরে ৪৫০০ ধর্ষণ’। সেই হিসাবে বছরে গড়ে ১ হাজার করে ধর্ষণ হচ্ছে। যদিও দীর্ঘ ওই প্রতিবেদনটি দেখেছি। তবুও প্রশ্ন হলো, এ গুলো সবই কী জোরপূর্বক ধর্ষণ। নাকি প্রেমিক-প্রেমিকার সেই ‘সহমতের ধর্ষণ’ও রয়েছে। যেহেতু ধর্ষণের প্রকার ভেদ অাছে। বলা দরকার, শারীরিক মিলনের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কোনো কারণে দ্বিমত বা অসম্মতি থাকার পরেও স্বামী যদি স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিলনে লিপ্ত হন সেটাও ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে। এমন অনিচ্ছার ঘটনায় স্ত্রী চাইলে স্বামীর নামে ধর্ষণের মামলা ঠুকে দিতে পারেন। সে যাই হোক প্রতারণামূলক সম্পর্ক তৈরি করে ধর্ষণ এমনকি গণধর্ষণের ক্ষেত্র তৈরি করার পেছনে অন্যান্য কারণ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেরও একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বহুদিন আগেকার একটা কথা হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেল। তখন ফেসবুক তো দূরের কথা এখনকার মতো আধুনিক মোবাইল ফোনও ছিল না। দুই হাজার সালের আগের কথা বলছি। তখন নিজ এলাকা কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার ওসি ছিলেন সিএ হালিম। তিনি বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। সে সময় এখানে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গিয়েছিল। সীমান্তবর্তী এই উপজেলায় পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে প্রচুর গরু আসতো। দামও ছিল অনেক কম। সীমান্তে গরু আমদানির জন্য কাস্টমস করিডোর ছিল। এখন সেটার কার্যক্রম নাই। ওই সময় একদিন তৎকালীন ওসি হালিম ভাইয়ের অফিসে বসে ধর্ষণের বিষয়ে কথা হচ্ছিল। ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে কেন? এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওসি হালিম ভাই সম্ভবত মজা করেই জবাব দিয়েছিলেন, ‘এই এলাকার মানুষ প্রচুর গরুর মাংস খায়। গরুর মাংস খেলে শরীর গরম হয়, এ কারণেই হয়তো মানুষ ধর্ষণে জড়িয়ে পড়ছে।’

কিন্তু এখন তো গরুর মাংস সহজলভ্য নয়। তাহলে এখন কেন ধর্ষণ এত বাড়ছে। যৌন উত্তেজক ওষুধের নিয়ন্ত্রণহীন বিপণন কিংবা অবাধ ছড়াছড়িকে ধর্ষণের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে দেখছেন সম্প্রতি মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তথ্যবহুল অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশব্যাপী আলোচনায় আসা বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার সাইদুর রহমান রিমন ভাই। এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন তিনি।

না এর বাইরেও আরো অনেক কারণ আছে। এখনকার ছেলে-মেয়েরা হাতের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফেসবুকে যত্রতত্র বিচরণ করছে, অনৈতিক সম্পর্ক গড়ছে, ইন্টারনেটে অবাধে পর্নো সাইটে ঢুকছে, যৌনতায় আকৃষ্ট হয়ে নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে ফেলছে। ফলাফল হিসাবে দাঁড়াচ্ছে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ প্রবণতা। এ ছাড়া অপরাপর কারণেও বিকৃত মানসিকতার লোকজন ধর্ষণে জড়িয়ে পড়ছে। তারা এতটাই মানসিক বিকারগ্রস্ত যে, তাদের কবল থেকে শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। অনেককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটছে। আবারো ধিক্কার জানাই মানুষরূপী এসব পশুদের। উপযুক্ত শাস্তি হোক ধর্ষকদের। তাদের কবল থেকে মুক্ত হোক সবাই। গড়ে উঠুক নিরাপদ বাংলাদেশ এই আমাদের প্রত্যাশা।

❑ লেখক : এস আর সেলিম, সংবাদকর্মী।