গ্রামীণের কর্মকর্তা হত্যায় দুই আসামি গ্রেপ্তার, শিশুর কান্নায় থানার পরিবেশ ভারি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের মাঠ কর্মকর্তা নুরুজ্জামান নান্টু (৩৫) হত্যার ঘটনায় দুই আসামিকে শুক্রবার (২ অক্টোবর) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন, প্রধান আসামি মোমিন দফাদারের স্ত্রী হিরা (৩০) ও পাশের গ্রাম গোলাবাড়িয়ার হাশেম সরদারের ছেলে হেলাল (৩২)। গ্রেপ্তার হিরার কোলে রয়েছে দেড় বছরের শিশু কন্যা। শিশুটির কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে থানার পরিবেশ। মামলার প্রধান আসামি মোমিন এখনো পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।

বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) রাতে উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া গ্রামের একটি বাড়ি থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা নুরুজ্জামান নান্টুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বাড়িতেই তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহত নুরুজ্জামান নান্টু দৌলতপুর উপজেলার হোসেনাবাদে গ্রামীণ ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় ফিল্ড সুপারভাইজার পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি এ উপজেলার খলিসাকুণ্ডি ইউনিয়নের কামালপুর এলাকার মৃত কাজি মোতালেব হোসেনের ছেলে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার সকালে মোটরসাইকেলে করে ব্যাংকের কিস্তি আদায় করতে বের হন ফিল্ড সুপারভাইজার নুরুজ্জামান নান্টু। কিন্তু সন্ধ্যার পরেও ব্যাংকে না ফেরায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা জানতে পারেন ফিলিপনগর ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া গ্রামে মোমিন দফাদারের বাড়িতে নুরুজ্জামানের গলা কাটা লাশ পড়ে আছে। পরে খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল যায়। পুলিশ ওই বাড়ির মূল দরজা ভেঙে টয়লেট থেকে বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাংক কর্মকর্তা নুরুজ্জামান নান্টুর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে থানায় নেয়।

গ্রামীণ ব্যাংক, হোসেনাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন আহম্মেদ জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে নুরুজ্জামান নান্টুর সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। সে সময় পর্যন্ত নান্টু তিনটি বাড়ি থেকে ঋণের টাকা আদায় করে মোমিন দফাদারের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর থেকে নান্টুকে আর ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। ব্যাংকটির হোসেনাবাদ শাখার ফিল্ড সুপারভাইজার নুরুজ্জামান নান্টু সেখানকার ২, ৩ ও ১২ নম্বর ইউনিটের দায়িত্বে ছিলেন।

ব্যাংক ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন আরো জানান, নুরুজ্জামান নান্টুর কোনো সন্ধান না পেয়ে ব্যাংকের লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজে রাতে ফিলিপনগর গ্রামে যান। এ সময় তারা ধারণা করেন, মোমিনের স্ত্রী ঋণ গ্রহীতা হিরা দীর্ঘদিন পর ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে আসায় কিস্তির জন্য নুরুজ্জামান হয়তো তাদের বাড়িতে যেতে পারেন। সেই মোতাবেক তারা মোমিনের বাড়িতে প্রবেশের রাস্তায় গিয়ে পৌঁছলে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাদের নিশ্চিত করেন নুরুজ্জামানকে এই দিকে আসতে দেখা গেছে।

এরপর খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তারা বৃষ্টি ভেজা ওই রাস্তায় মোটরসাইকেলের চাকার দাগ দেখে খানিকটা নিশ্চিত হন নুরুজ্জামান মোমিনের বাড়িতেই আছেন। কিন্তু বাড়িতে কাউকে না পাওয়ায় সন্দেহ বেড়ে যায় তাদের। ওই সময় প্রাচীরের ওপর থেকে বাড়ির ভেতর নুরুজ্জামানের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল দেখতে পেয়ে সেখানে তার যাওয়ার বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে স্থানীয় হোসেনাবাদ পুলিশ ক্যাম্পে খবর দেয়া হয়। মোমিন দফাদার বেশ কিছুদিন ধরে ঋণের টাকা দিতে গড়িমসি করছিলেন। প্রতি সপ্তাহে নুরুজ্জামান নান্টু তার বাড়িতে কিস্তি নিতে গেলে তা না দিয়ে নানা অজুহাতে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হতো বলে ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন জানিয়েছেন।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে মোমিন দফাদারকে প্রধান আসামি ও তার স্ত্রী হিরাকে দ্বিতীয় আসামি করে আরো কয়েকজনের নামে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ ব্যাপক অভিযান চালায়। শুক্রবার হিরাকে তার আত্মীয়ের বাড়ি থেকে এবং হেলালকে নিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিকে গ্রেপ্তার হিরার কোলে থাকা তার দেড় বছর বয়সী শিশু কন্যার কান্নায় থানার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না শিশুটির কান্না। শিশুটির বাবা মামলার প্রধান অাসামি মোমিন এখনো পলাতক রয়েছেন।

দৌলতপুর থানার ওসি জহুরুল আলম সাংবাদিকদের জানান, মোমিনের বাড়ির টয়লেট থেকে নুরুজ্জামানের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে গলা কাটা অবস্থায় তার লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। মোমিনের স্ত্রী হিরার নামে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ নেয়া ছিল। কিন্তু তারা দীর্ঘদিন ধরে কিস্তির টাকা দিতে ঝামেলা করছিলেন বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পুলিশকে অবগত করেন। ঋণের কিস্তির টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।

ওসি আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে প্রধান আসামি মোমিন দফাদার পলাতক রয়েছেন। মোমিনসহ অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মোমিন দফাদার দুর্ধর্ষ প্রকৃতির লোক। তার নামে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তার ভয়ে এতদিন মুখ খোলার সাহস পাননি এলাকার মানুষজন।