চৌগাছায় মাছ শিকারের সরঞ্জাম কিনতে ক্রেতার ভিড়

বর্ষা মানেই খাল বিল, নদ নদীতে থৈ থৈ পানি। একটানা বৃষ্টিতে নদ নদী খাল বিল তার হারানো যৌবন ফিরে পাই। গত কয়েক বছর সে ভাবে বৃষ্টি না হওয়ায় হতাশ ছিল মানুষ। কিন্তু চলতি বছরে তুলনা মুলক বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই খাল বিলে দেখা মিলছে হরেক রকমের দেশী মাছ। খাল বিল থেকে মাছ শিকারের সরঞ্জাম কিনতে চৌগাছার প্রধান বাজারে মানুষের ভিড় বেশ বেড়ে গেছে।

শুক্রবার ছিল চৌগাছা উপজেলা সদরের সাপ্তাহিক হাটের দিন। উপজেলার সর্ববৃহৎ এই হাটে বাঁশ দিয়ে হাতের তৈরী হরেক রকমের মাছ শিকারের সরঞ্জাম নিয়ে এসেছেন বিক্রেতারা। বাঁশের তৈরী বেনে, চারো, ঘুনি, পোলো, আটলে, খুল্লি, আরিন্দা, দোপেনেসহ খেপলাজাল, পাতাজাল, ঠেলাজাল ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে।

গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টিপাত অনেক বেশি এবং মৌসুমের বেশ আগে ভাগেই শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। সে কারনে উপজেলার প্রতিটি এলাকার খাল বিল জলাশয় পানিতে টইটুম্বুর। খাল বিলের পানিতে দেখা মিলছে হরেক রকমের দেশি মাছ। দেশী মাছের স্বাদ অন্য যে কোন মাছের তুলনায়া বেশি, তাইতো এই স্বাদ নিতে মানুষ কিন্তু ভুল করছেনা।

যে যেমন ভাবে পারছে মাছ শিকারের মালামাল কিনে ফিরছেন বাড়িতে। মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে অনেকেই হয়েছেন বেকার। অলস সময় পার করছেন বাড়িতে বসে। ওই শ্রেনীর ব্যক্তিরা খাল বিল থেকে মাছ শিকারে মেতে উঠেছেন। আর কিছু না হোক সময়টা বেশ ভাল ভাবেই পার করতে পারবেন এই নেশায় তারা বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম সংগ্রহ করছেন বলে বেশ কিছু ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে। ক্রেতার উপস্থিতি বেশি হওয়ায় বিক্রেতারা বেশি দামে মালামাল বিক্রি করছেন বলেও অনেকে অভিযোগ করেন।

উপজেলার মাড়ুয়া গ্রামের মাছ শিকারের মালামাল তৈরীর কারিগর মকবুল হোসেন, সবুজ হোসেন, উকিল বিশ্বাস, সেলিম রেজা, ইসলাম, বাবুল আক্তার বলেন, বছরের পর বছর তারা এই ব্যবসা করে আসছেন। মুলত মাছ ধরার সরঞ্জাম বিক্রি করেই তাদের সংসার চলে। এ বছর বেচা বিক্রি ভাল হওয়ায় তারা বেশ খুশি। কারিগররা বলেন, একটি ভাল মানের বাঁশ থেকে কমপক্ষে ৩-৪ টি চারো বা ঘুনি তৈরী করা যায়। আর প্রতিটি চারোর দাম ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা ও ঘুনি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবাদি তারা এই কাজে সময় পার করেন, কিছু কিছু সময় পরিবারের অন্য সদস্যরাও কাজে বেশ সহযোগীতা করেন। তারা বলেন, বাজারে এই সব মালামালের চাহিদা বেশি থাকায় তারা মাঝে মধ্যে যশোরের মনিরামপুর, নড়াইল ও জীবননগর উপজেলার শিয়ালমারী থেকে মালামাল ক্রয় করে বিক্রি করছেন, তবে নিজেদের হাতে তৈরী মালে লাভ হয় বেশি।

সরঞ্জাম কিনতে আসা উপজেলার বড়খাাঁনপুর গ্রামের শফিউদ্দিন বলেন, এ বছর বর্ষায় খাল বিলে যেমন পানি জমেছে, তেমনি ভাবে হরেক রকমের মাছও দেখা যাচ্ছে। তাই মাছ শিকারের জন্য চারো কিনতে এসেছি। কিন্তু দামটা অনেক বেশি।

এছাড়া উপজেলার ছোট বড় পুকুর,খাল,বিলে ছিপদিয়ে মাছ ধরায় ব্যস্ত সময় পার করছে ছোট ছোট স্কুল পড়–য়া ছেলেরা।করোনায় স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় অবসারে তারা ছিপে মাছ ধরছে।মাছ হোক আর না হোক সকাল থেকে দুপুর বসে থাকে মাছের আশায়।একটা ছোট মাছ বাধলেই তারা বিরাট খুশি।

হাট মালিকরা বলছেন, মাছ শিকারের মালামাল বিক্রি মৌসুমী ব্যবসা, বর্ষা হলে ভাল বিক্রি, অন্যথায় বসে থেকেই ব্যবসায়ীদের বছর পার করতে হয়। তারপর বাঁশ, বেতের দামও বৃদ্ধি, সব মিলিয়ে খুব একটা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে এটি বলা যায়না।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম শাহাজান সিরাজ বলেন, এ বছর খাল বিলে দেশি মাছের ব্যাপক সমারোহ ঘটেছে এটি নিঃসন্দেহে একটি ভাল দিক। কেননা দেশি মাছ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। প্রতিটি খাল বিলে দেশি মাছ আমাদের সকলকেই রক্ষা করতে হবে। কোন ক্রমেই কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা যাবে না। এ ধরনের অভিযোগ পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

০২ অক্টোবার, ২০২০ at ২০:১৫:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমআই/এমএআর