করোনাকালেও বেড়েছে রেমিট্যান্স

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী চলমান সংকটের মধ্যেও কয়েক মাস ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থ পাঠানোর পরিমাণ বাড়ছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স আরও তেজি হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ৬৭১ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২১৯ কোটি ডলার বা ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। এর আগে কোনো প্রান্তিকে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি।

করোনাভাইরাসের কারণে কর্মসংস্থান ক্ষতির মুখে পড়ে দেশের মতো প্রবাসীদেরও অনেকে বেকার হয়েছেন। দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। সংক্রমণের মুখে দেশে এসে আটকা পড়েছে একটি অংশ। এর মধ্যেও রেমিট্যান্স বাড়ছে অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি হারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের কেউ কেউ মনে করেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির নানা কারণ রয়েছে। এর অন্যতম হলো অবৈধপথে হুন্ডির চাহিদা একেবারেই কমে যাওয়া। মূলত বিশ্বের সব দেশে সার্বিকভাবে বিনিয়োগ চাহিদা কমে গেছে। যারা হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসীদের বৈদেশিক মুদ্রা কেনেন, তাদের তৎপরতা কমে গেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সরকারের ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা। এতে করে প্রবাসীদের হুন্ডিতে আগ্রহ কমে গেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে ভালো বিনিময় হারও পাচ্ছেন। আবার বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ সীমিত হয়ে পড়ায় এখন নগদে ডলার আসছে খুব কম। এর বাইরে একটা শ্রেণি, যারা করোনার কারণে ফেরত আসতে বাধ্য হচ্ছেন, তারা জমানো টাকা দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এসব কিছুর প্রভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে। ব্যাংকাররা জানান, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রবণতা ব্যাংক খাতে স্বস্তি দিচ্ছে। রেমিট্যান্সের টাকা কোনো না কোনোভাবে আবার ব্যাংকে এসে আমানত বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ২১৫ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এসেছিল প্রায় ১৪৮ ডলার। একই মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬৭ কোটি ৪১ লাখ ডলার বা ৪৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর আগের মাস আগস্টের তুলনায় বেড়েছে ১৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার বা ৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। সেপ্টেম্বরের এই রেমিট্যান্স এযাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের রেকর্ড চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে। ঈদের আগের ওই মাসে প্রবাসীরা প্রায় ২৬০ কোটি ডলার পাঠান। গত অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠান প্রবাসীরা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় রেমিট্যান্স বেশি ছিল ১৭৯ কোটি ডলার বা ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। যদিও করোনাভাইরাস শুরুর দিকে গত মার্চ ও এপ্রিলে রেমিট্যান্স কমেছিল।

রেমিট্যান্স বৃদ্ধির এই প্রবণতার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও প্রায়ই নতুন রেকর্ড গড়ছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার বা তিন হাজার ৯৩১ কোটি ডলার। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে প্রায় ৯ মাসের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। গত বছরের একই মাস শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। এক বছরে রিজার্ভ বেড়েছে ৭৪৮ কোটি ডলার বা ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর গত মার্চ শেষে রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে ছয় মাসে বেড়েছে ছয় বিলিয়ন ডলার।

রাষ্ট্রীয় মালিকানার অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম সমকালকে বলেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে রিজার্ভ বাড়ছে। অর্থনীতির জন্য যা স্বস্তির। তিনি বলেন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হুন্ডি কমে যাওয়া এবং সরকারের ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা। এ ছাড়া প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সহজে রেমিট্যান্স পাঠানো যাচ্ছে। দেশের বাইরে থেকে অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরে বসেই অনেকে সুবিধাভোগীর অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠাতে পারছেন।

করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর আগে থেকেই আমদানি ও রপ্তানির গতি কম ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে তা আরও কমেছে। গত অর্থবছর আমদানি কমেছে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। রপ্তানি কমেছে ১৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এরই মধ্যে রপ্তানি পরিস্থিতির উন্নতি হলেও আমদানি কমছে। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর আমদানি কমেছে ১৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

০১ অক্টোবার, ২০২০ at ২২:৫৮:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সক/এমএআর