রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে আটক করল পুলিশ

‘১৪৪ ধারা’ অমান্য করার অভিযোগে ভারতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশের মধ্যবর্তী মহাসড়ক থেকে তাদের আটক করা হয়। খবর এনডিটিভি ও হিন্দুস্তান টাইমসের।

উত্তর প্রদেশের হাতরাসে গণধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া দলিত নারীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এদিন হাতরাসে যাচ্ছিলেন রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ কংগ্রেস নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল। মাঝপথে দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ হাইওয়েতে গ্রেটার নয়ডায় তাদের কনভয় আটকে দেয় পুলিশ। এরপর স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে হেঁটেই হাথরসের দিকে রওনা দেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা। তাদের সঙ্গে ছিলেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ ও লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীও।

তাদের যেখানে আটকানো হয় সেখান থেকে হাথরসের দূরত্ব প্রায় ১৪০ কিলোমিটার। রাহুল-প্রিয়াঙ্কাদের আটকানোর পর পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এ সময় কংগ্রেস সাংসদ রাহুলকে গলাধাক্কাও দেয় পুলিশ। পরে আটক করা হয় তাকে।

রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, উত্তরপ্রদেশের পুলিশ সদস্যরা তাদের থামানোর পরে যখন তিনি ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী পথে নেমে হেঁটে যাত্রা করেন তখন তাকে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয় এবং লাঠিচার্জ করা হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাকে ধাক্কা দিয়েছে, লাঠিচার্জ করেছে, মাটিতে ফেলে দিয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করতে চাই, কেবল মোদি জিই কি এদেশের রাস্তায় হাঁটতে পারবেন? একজন সাধারণ মানুষ কি হাঁটতে পারবেন না? আমাদের গাড়ি থামানো হয়েছে, তাই আমরা হাঁটা শুরু করেছি।’

আটকের সময় রাহুল গান্ধী পুলিশ কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে প্রতিবাদ করে বলেন, ‘আপনি আমাকে কেন আটক করছেন? আটকের কী কারণ রয়েছে? গণমাধ্যমকে বলুন।’ এ সময় পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তারা তাকে ‘১৪৪ ধারা’ ভঙ্গের জন্য অভিযুক্ত করছেন।

এসময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধীকে পুলিশের একটি সাদা রঙের মাহিন্দ্রা বোলেরো গাড়িতে তুলে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে দ্রুতগতিতে চলে যায় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।

ওই গাড়ির পাশাপাশি ছুটছিল আরও কয়েকটি গাড়ি। সেগুলো কংগ্রেস নেতাদের গাড়ি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সময় কয়েকশ কংগ্রেস কর্মী রাস্তা অবরোধ করে বসে পড়েন। যতক্ষণ পর্যন্ত রাহুলকে ছাড়া না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা অবরোধ তুলবেন না বলে শ্লোগান দিচ্ছিলেন তারা।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাহুল-প্রিয়াঙ্কাকে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে একটি গেস্টহাউসে নিয়ে যাওয়ার কথা। সেখান থেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে কি-না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

বৃহস্পতিবার রাহুল-প্রিয়ঙ্কা হাথরসে যাওয়ার এ কর্মসূচি আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সরকার। কিন্তু কর্মসূচি বাতিল করেনি কংগ্রেস।

করোনার কারণে রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ জারি রয়েছে এবং এ কারণেই রাহুল-প্রিয়াঙ্কার কনভয় আটকানো হয়েছে বলে অযুহাত দেখিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে ১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যে প্রবেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছিল। সেই নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়েছে।

এদিকে হাথরসের জেলাশাসক পি লস্কর সংবাদ সংস্থা এএনআই’কে আগেই জানিয়েছিলেন, রাহুল- প্রিয়াঙ্কার সফরের কোনো খবর তাদের কাছে নেই। ‘অপ্রীতিকর পরিস্থিতি’ এড়াতে জেলার সীমানা সিল করে দেওয়া হয়েছে এবং ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের হাথরসে উচ্চবর্ণের চারজন কর্তৃক এক দলিত নারী গণধর্ষণের ঘটনা শিকার হয় সম্প্রতি। ঘটনার ১৫ দিন পর মঙ্গলবার দিল্লির সফদর জং হাসপালাতে মৃত্যু হয় তার।

এখানেই শেষ নয়, ওই দলিত নারীর ভাগ্যে সৎকারেও জোটেনি বলে অভিযোগ আছে। দিল্লি থেকে জোর করে তার লাশ নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর মধ্যরাতে বাড়ির অদূরে ক্ষেতে তার লাশ সৎকার করা হয়। তবে, পরিবারের অভিযোগ, যথাযথ ধর্মীয় রীতি না মেনেই তড়িঘড়ি করে তার লাশ পোড়ায় পুলিশ।

০১ অক্টোবার, ২০২০ at ১৯:২১:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সক/এমএআর