চৌগাছার বিলের পানিতে ফুটেছে শাপলা, ফুল সংগ্রহে মেতেছে শিশুরা

শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল, অতি পরিচিত এই জলজ উদ্ভিদ এক সময় ব্যাপক ভাবে দেখা গেলেও এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। খাল, বিল, ডোবা, নালা ভরাট করা, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া এর অন্যতম কারণ বলে অনেকে মনে করছেন। তবে এ বছর বৃষ্টিপাত তুলনা মুলক বেশি হওয়ায় খাল বিলে দেখা মিলছে শাপলা। দুরান্ত শিশু কিশোররা বিলের পানিতে মেতে উঠেছে খেলায়, খেলার ফাঁকে ফাঁকে সংগ্রহ করছে শাপলা ফুল।

খাল বিল ঝিল পুকুর ডোবা নালায় যে ফুলটি বেশি দেখা যায় সেটি হচ্ছে শাপলা। দেশে নানা জাতের শাপলা রয়েছে। নীল, লাল, সাদা, নীল-সাদাটে ইত্যাদি। বৃষ্টির পানি বিল খালে জমার পর পরই সেই পানিতে জন্মে শাপলা। বর্ষার পানি বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে শাপলার নরম ফাঁপা কান্ডটি। পানির উপর দন্ডায়মান শাপলা গাছের গোড়া থাকে পানির নিচে কাঁদার ভিতরে। এরা পানির উপর হৃৎপিন্ড আকৃতির এক একটি বড় পাতা মেলে থাকে। অযতœ আর অবহেলা বেড়ে উঠে এই জলজ ফুল গাছটি।

পাঁচনামনা গ্রামের আছের আলী (৬৫) বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকার মত আমাদের চৌগাছায় এক সময় ব্যাপক ভাবে দেখা যেত শাপলা ফুল। বিশেষ করে বাংলা সনের আশি^ন, কাত্তিক মাসে বিল খাল পুকুরে ব্যাপক ভাবে ফুটে থাকত শাপলা ফুল। পানির উপর ভেসে থাকা এই ফুলটি অপরুপ সৌন্দর্য বহন করত। কিন্তু এখন আর সে ভাবে শাপলা ফুল দেখা যায়না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে অনাবৃৃষ্টি। এ বছর তুলনা মুলক বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় দীর্ঘ দিন পরে বিলে কিংবা পুকুরে দেখা যাচ্ছে শাপলা ফুল।

ইছাপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ শামছুল বলেন, গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহমান বুড়ি ভৈরব নদ। ছোট বেলায় দেখেছি এই নদে প্রচুর পুরমানে শাপলা ফুল ফুটত। কিন্তু ভৈরব ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেই ফুল প্রায় বিলুপ্তি হয়ে যায়। নদ খননের পর এখন নদে যথেষ্ঠ পানি আর এই পনিতে দেখা মিলছে শাপলা।

পাঁচনামনা গ্রামের দক্ষিনে বিলে ধারের যেয়ে দেখা যায় বিলের পানিতে সাদা শাপলা ফুল ফুটে এক অপরুপ সৌন্দর্য বহন করছে। বিলের পানিতে বেশ কিছু শিশু শাপলা ফুল সংগ্রহে মেতে উঠেছে। আবার কেউ শাপলা তুলে নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতে। এমনই দুই শিশু হচ্ছে ৪র্থ শ্রেনীতে পড়–য়া আমির হামজা ও ২য় শ্রেনীর ছাত্র সিয়াম হোসেন। তারা জানান, বইতে পড়েছি শাপলা ফুল পানিতে ফুটে, কিন্তু বাস্তবে তা দেখেনি। এ বছর বিলের পানিতে প্রচুর শাপলা হয়েছে তাই শাপলা ফুল তুলতে এসেছি।

উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এদেশে রয়েছে বহু নদী নালা খাল বিল আর হাওড় বাওড়। এর পানিতে যে সব ফুল গাছ জন্মায় সে গুলোর প্রায় সবই বাংলাদেশ আর ভারতের নিজস্ব উদ্ভিদ। এ অঞ্চলের জল হাওয়া আর মৃত্তিকায় এদের উৎপত্তি ঘটেছে। সে কারনে এরা আমাদের একেবারেই নিজস্ব ফুল।

শাপলা ফুলের জীবনকাল প্রায় দুই সপ্তাহখানেক। মজার বিষয় হচ্ছে শাপলা ফুল সব সময় খোলা অবস্থায় থাকেনা। প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় এর পাঁপড়ি। শাপলা ফুল গোলাকার ফল বীজে ঠাসা স্থানীয়রা তাকে ঢ্যাব বলে চেনে। এই ঢ্যাব সংগ্রহ করে তার মধ্য হতে বীজ বের করে রোদে শুকিয়ে ভেজে নিলে সুন্দর খৈ হয়। শাপলার নলের তরকারী বেশ জনপ্রিয়। শহরে রয়েছে এর বেশ কদর।