চৌগাছায় আশংকাজনক ভাবে কমছে ফসলি জমি

গত দশ বছরে কমেছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বিঘা

যশোরের চৌগাছায় আশংকাজনক ভাবে ফসলি জমি কমতে শুরু করেছে। গত দশ বছরে ৫৮৫ হেক্টর ফসলি জমি কমেছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ফসলি জমিতে বাড়ি, মিল কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সড়ক ও ইটভাটা নির্মান করা। এক দিকে জনসংখ্যা বাড়ছে অন্য দিকে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। ফসলি জমি কমে যাওয়া ঠেকাতে না পারলে চরম খেসারত দিতে হবে সকলকে এমনই মনে করছেন সচতন মহল।

সূত্র জানায়, ভারত সীমান্তের গা ঘেষে গড়ে উঠা যশোরের চৌগাছা উপজেলা। এর পূর্বে যশোর সদর ও ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলা, উত্তরে কোটাচঁদপুর, পশ্চিমে মহেশপুর ও ভারতের চব্বিশ পরগনাা এবং দক্ষিনে ঝিকরগাছা উপজেলা অবস্থিত। ১১ টি ইউনিয়ন ১টি পৌরসভা ও ১৬০ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এ উপজেলাতে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের বসবাস।

জনশ্রুতি আছে চৌগাছা থানা পরবর্তীতে উপজেলা হওয়ার পর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। উপজেলা সদরকে নিয়ে ২০০৪ সালে গঠিত হয় পৌরসভা। পৌরসভা গঠনের পর মানুষ এর সুফল ভোগ করতে থাকে। অনেকে চৌগাছাকে ব্যবসা বান্ধব উপজেলা হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন। যে কারনে অল্প সময়ের মধ্যে এখানে সব ধরনের ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। ব্যবসা, বানিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যাতায়াত সব কিছুতেই অভাবনীয় উন্নতি যখন হচ্ছে ঠিক সে সময়ে উপজেলাতে আশংকাজনক ভাবে কমতে শুরু করেছে ফসলি জমি। প্রতি বছরই কোন না কোন কারনে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি মনে করছেন স্থানীয়রা।

উপজেলা কৃষি ও পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলাতে মোট জমির পরিমান হচ্ছে ২৬ হাজার ৯শ ১৯ হেক্টর। এরমধ্যে নীট ফসলি জমির পরিমান ২২ হাজার ৫শ ৬৫ হেক্টর। ২০১০ সালে অত্র উপজেলাতে ফসলির জমির পরিমান ছিল ২৩ হাজার ১শ ৫০ হেক্টর। বর্তমানে কমতে কমতে এসে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৫শ ৬৫ হেক্টরে। গত ১০ বছরে জমি কমেছে ৫৮৫ হেক্টর, যা বিঘায় হিসেব করলে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩শ ৮৭ বিঘা। ২০১১ সালের সর্বশেষ আদম শুমারী হিসেবে উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ২ লাখ ৩১ হাজার ৩৭০ জন। গত দশ বছরে জনসংখ্যা বেড়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হতে পারে বলে অনেকের ধারনা। প্রতি বছর মানুষ বাড়ছে কিন্তু বাড়ছে না ১ ইঞ্চি জমি। অথচ নানা কারনে বিগত দশ বছরে ফসলি জমি কমেছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বিঘা। জমি কমে যাওয়ার অন্যতম কারন হচ্ছে যত্রতত্র বসত বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কলকারখানা নির্মান, ইটভাটা ও সড়ক তৈরী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার প্রধান ৫টি সড়ক, চৌগাছা-যশোর,ঝিকরগাছা,কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও পুড়াপাড়া সড়কের দুই পাশে প্রতি দিনই বাড়ছে বসত বাড়ি ব্যবসা কিংবা মিল কলকারখানা। একই অবস্থা শহর ও শহরতলীর প্রতিটি পাকা কিংবা কাঁচা সড়কের পাশে এমনকি ফাঁকা মাঠের মধ্যেও হচ্ছে বাড়িঘর। সরকার থেকে যখন ঘোষনা আসছে কোন ক্রমেই ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না, জমি রক্ষা করে বসত বাড়ি মিল কলকারখা স্থাপন করুন ঠিক সেই সময়ে চৌগাছাতে এর বিপরীত চিত্র লক্ষ করা যাচ্ছে। শতশত ফসলি জমি দখলে রেখে নির্মান করা হয়েছে অন্তত ২০ টি ইট ভাটা। সাড়ে তিন লাখ মানুষের বসবাসের উপজেলাতে ২০ টি ইট ভাটার কতটুকু যৌক্তিকতা আছে এ নিয়েও সচেতন মহলে রয়েছে প্রশ্ন। সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ কোন কিছুই খোঁজ না নিয়ে ভাটা নির্মানের অনুমতি দিচ্ছেন আর ভাটা নির্মানের ফলে এর কুফল ভোগ করছেন সাধারণ মানুষ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দিন বলেন, ব্যবসা বান্ধব পাশাপাশি বসবাসের জন্যও অত্যান্ত ভাল পরিবেশ হওয়ায় চৌগাছাতে দিন দিন নানা ধরনের স্থাপনা তৈরী হচ্ছে, সেই সাথে বসত বাড়িও তৈরী হচ্ছে। তবে কোন ক্রমেই ফসলি জমি নষ্ট করা যাবেনা।
সচেতন মহল মনে করছেন যে ভাবে ফসলি জমি কমতে শুরু করেছে তার জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মকে চরম মুল্য দিতে হতে পারে। তাই বাড়ি ঘর মিল কলকারখানা নির্মান করবো তবে ফসলি জমিকে রক্ষা করে।