২ সন্তানের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত বিধবা মা ও বোনের সাংবাদিক সম্মেলন

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের মরহুম গিয়াস উদ্দিন মন্ডল এর স্ত্রী মোছাঃ সোহনা বেগম শনিবার শিবগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে নিরুপায় অবস্থায় বাধ্য হয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।

আমি এক অসহায় বিধবা নারী ও মা। আমার গর্ভজাত আপন ২ পুত্রের দ্বারা চরম ভাবে নির্যাতিত লাঞ্চিত ও মিথ্যা মামলায় জর্জড়িত হয়ে আপনাদের মাধ্যমে ন্যায় বিচার ও প্রতিকারের আশায় হাজির হয়েছি। আমার স্বামী মরহুম গিয়াস উদ্দিন মন্ডল গত ৩১/০৩/২০১৭ ইং সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেন।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান ওয়ারিশ হিসাবে রেখে যান। আমার স্বামী, আমার শশুর মরহুম আব্দুল করিম মন্ডলের নিকট থেকে বিগত ২৯/০১/১৯৯৬ ইং তারিখের ৫নং অছিয়ত নামা দলিল মূলে ৩.৮৮ একর স্থাবর সম্পত্তি প্রাপ্ত হন।

উক্ত সম্পত্তির মধ্যে হইতে তিনি গুজিয়া বন্দরে অবস্থিত ইউপি অফিস সংলগ্ন এবং গুজিয়া স্কুলের সামনে পাকা রাস্তার পাশে এনায়েতপুর মৌজার এম.আর খতিয়ান নং-৮৪, ৮৫, আর. এস খতিয়ান নং-৪, সাবেক দাগ নং-২৬, হাল দাগ নং-৫২, জমির পরিমাণ-৬২ শতক। জমির উত্তর ধারে পাকা রাস্তা সংলগ্ন স্থানে প্রায় ১৫৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও আনুমানিক ১৫ ফুট প্রস্থ ও সামনে বারান্দা দিয়ে ১৭টি আধাপাকা ঘর মার্কেট হিসেবে নির্মাণ করেন।

নির্মিত ঘরগুলির মধ্যে হইতে ২টি ঘর যথাক্রমে শরিফুল ইসলাম ও সজীব ইসলামকে নিজে ব্যবসার মূলধন দিয়ে ২টি দোকান করে দেন। বাঁকী ১৫টি ঘরের মধ্যে ১টিতে তিনি স্বর্না ডেকোরেটর নামে ডেকোরেশনের ব্যবসা শুরু করেন বাকী ১৪টি দোকান ঘর বিভিন্ন ব্যবসায়ীর নিকট ভাড়া দেন।

আমার ২পুত্র শিশুকাল থেকে উশৃঙ্খল ও অবাধ্য হওয়ার কারণে অনেক চেষ্টা করেও ভালভাবে লেখাপড়া না করায় কর্মের মাধ্যমে সৎপথে জীবনযাপন করার প্রচেষ্টায় তাদেরকে আমার স্বামী তাদের ব্যবসায় নিয়োজিত করেন। পুত্রদ্বয়কে সু-পথে আনার লক্ষ্যে আমার স্বামীর জীবদ্দশায় তাদেরকে বিবাহ করান।

বিয়ে করার পর থেকেই পুত্রদ্বয় তাদের বউদের প্ররোচনায় আমাদের সঙ্গে অর্থাৎ পিতা-মাতা ও একমাত্র বোনের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ শুরু করে একপর্যায়ে তারা পৃথকভাবে বসবাস করতে থাকে। আমার ২য় পুত্র সজীব তার স্ত্রীকে নিয়ে প্রথমে গুজিয়া বন্দরে ও পরে বগুড়া শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকে।

তারা প্রায়ই গুজিয়া বন্দরের ঐ ৬২ শতক জমির তাদের ২ ভাইয়ের নামে লিখে দেয়ার জন্য আমার স্বামী বা তাদের পিতাকে চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা ধারালো দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র, লাঠি নিয়ে আমার স্বামীকে নির্যাতন করে। কিন্তু আমার স্বামী শত নির্যাতন সত্বেও জীবিত অবস্থায় তাদের নামে কোন জমি লিখে দেন নাই। পুতদ্বয়ের শারীরিক নির্যাতনে বিপর্যস্ত হয়ে অত্যন্ত মর্মাহত অবস্থায় তিনি অকালে মৃত্যুবরণ করেন।

আমার স্বামী জীবিত অবস্থায় দোকান ঘরগুলির ভাড়া উত্তলোন করে এবং দোকানের আয় দ্বারা সংসারের খরচ ও আমাদের একমাত্র কন্যা জান্নাতুল ফেরদৌস স্বর্ণার লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই আমি নিজে দোকান ঘরগুলির ভাড়ার টাকা তুলে অতিকষ্টে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার চালাতাম।

আমার স্বামীর মৃত্যুবরণ করার পর থেকেই পুত্রদ্বয় গুজিয়া বন্দরে জমিতে আমার ও আমার মেয়ের অংশ তাদেরকে লিখে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে তারা আমাকে বেশ কয়েকবার শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে আমার বড় ছেলে শরিফুল আমাকে গত এপ্রিল মাসে বেদম মারধর করে এবং সজোরে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় তার নির্যাতনে আমার কন্ঠার হাড় ফেটে যায়। যাহা এক্সরে করে ধরা পড়ে।

আমার মেয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে ধারদেনা করে অনেক টাকা ব্যয় করে কিছুটা সুস্থ্য করে তুললেও অসহ্য ব্যাথা নিয়ে আমি জীবনযাপন করছি। আমাদের অংশের সম্পত্তি গ্রাস করার লক্ষ্যে পুত্রদ্বয় প্রায়ই প্রতিদিনই শারীরিক ও মানষিকভাবে লাঞ্চিত করে চলেছে।

আমরা প্রতিকারের আশায় শিবগঞ্জ ইউপি চেয়রম্যানসহ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও অন্যান্য মুরুব্বীগণের নিকট অভিযোগ করিলে পুত্রদ্বয় কাহারো কথায় কর্ণপাত না করে আরো নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। নিরূপায় হয়ে আমরা বিগত ০৫/০৭/২০ ইং তারিখে প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের মা ও মেয়ে ন্যায্য প্রাপ্য অংশ আমাদেক বুঝিয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয় হয়।

তারা উক্ত সম্পত্তিতে আমাদের মা ও মেয়ের প্রাপ্য ১৮.৬০ শতক জমি দাগের মাঝামাঝি স্থানের দোকান ঘরগুলি ১ সপ্তাহের মধ্যে বুঝে দেওয়ার অঙ্গীকার করে। তারা প্রশাসনের নিকট থেকে সময় নিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করে। এই ফাঁকে তারা আমাদের সামনের অংশের দোকানসহ দোকান ঘরগুলির পিছনে আমাদের মাঝখানের অংশ পূর্ব ও পশ্চিমে লম্বা আনুমানিক ৪৪ ফুট জায়গায়সহ প্রায় ১৫৬ ফুট লম্বা ও ২০ফুট চওড়া জায়গা দখল করে।

গভীর রাত্রিতে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে এসে তরিঘরি করে প্রাচীর নির্মাণ করে। সংবাদ পাওয়ার পর ২০/০৮/২০ ইং তারিখে আমরা মা ও মেয়ে উক্ত স্থানে যাওয়া মাত্রই আমাদেক অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। আমি তাদেরকে গালিদিতে নিষেধ করা মাত্রই দুই ভাই শরিফুল ও সজীব তাদের হাতে থাকা শক্ত বাঁশের লাঠিদ্বারা আমাদের এলোপাথারী মারধর করতে থাকে।

এক পর্যায়ে তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে লাথি মারতে থাকে এবং আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে পুত্র সজীব মাটিতে ঠেসে ধরে এবং শরিফুল তার ২ হাত দিয়ে সজোরে আমার গলা টিপে ধরে। আমার সঙ্গে থাকা মেয়ে স্বর্ণা সন্ত্রাসী পুত্রদ্বয়ের আক্রমণ থেকে আমাকে রক্ষা করতে এলে তাকেও ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে মারধর করতে থাকে।

ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা লোকজন আমাদেক উদ্ধার করে। এরপর থেকে প্রতিনিয়তই তারা আমাদেক প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে আমার পুত্রদ্বয় আমাদের মা ও বোনের বিরুদ্ধে জেলা বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ও জেলা বগুড়ার শিবগঞ্জ থানা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে গত ১৫/০৯/২০ ইং সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ভুয়া ও মনগড়া অভিযোগে ২টি মামলা দায়ের করে আমাদেক হয়রানী করে চলেছে।

আমার বড় পুত্রবধু নুরানী বিবি প্রায় ১ বৎসর পূর্বে গরুর খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দিয়ে ১টি গরু, গত কোরবানীর ঈদের পুর্বদিনে ১টি গরু এবং গত ২৪/০৯/২০ ইং তারিখে ৭ মাসের গর্ভবতী ১টি গাভী হত্যা করে। বিষক্রিয়ায় গরুগুলি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে স্থানীয় পশু চিকিৎসক পরীক্ষা করে আমাকে জানায় যে, গরুগুলিকে বিষ খাওয়ানো হয়েছে।

আমার স্বামীর অতিকষ্টে অর্জিত সম্পদ গুলো গ্রাস করার জন্য গুজিয়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকার কতিপয় দালাল শ্রেণির লোকজন আমার পুত্রদ্বয়কে ভুল বুঝাইয়া আমাদের বিপক্ষে দাড় করানোসহ এসব অপকর্ম করতে সহযোগিতা করছে। গত আগষ্ট মাস পর্যন্ত আমি নিজে দোকান ঘরের ভাড়া তুলেছি। বর্তমান সেপ্টেম্বর/২০ থেকে আামর পুত্রদ্বয় দোকানের ভাড়াটিয়াদেরকে আমাকে ভাড়া প্রদান করিতে নিষেধ করে।

ফলে উক্ত দোকানের ভাড়া প্রাপ্তি বন্ধ হওয়ার কারণে আমার মেয়ের পড়াশুনা এবং সংসার খরচ চালানো আমার পক্ষে দুঃসাধ্য হইয়া পরিয়াছে। আপনারা সরেজমিনে অনুসন্ধান প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমার জালেম, সন্ত্রাসী পুত্রদ্বয়ের হাত থেকে আমাদের জীবন রক্ষা ও আইন মোতাবেক কথিত সম্পত্তিতে আমাদের ন্যায্য হিসাব পাওয়ার ব্যাপারে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে অসহায় বিধবা নারী ও পিতৃহারা এতিম মেয়েকে সাহায্য করার জন্য প্রার্থনা করছি।

আপনাদের মাধ্যমে আমি প্রশাসন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, মানবাধিকার সংগঠন ও আইনী সহায়তা কেন্দ্র, নারী ও শিশু নির্যাতন বিরোধী সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাহায্যের জন্য আকুল আবেদন করছি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জান্নাতুল স্বর্ণা।

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১৭:৪৬৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএম/এমএএস