পত্রিকায় ‘পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপন দিয়েই ৩০ কোটি টাকা আত্মসাত সাদিয়ার

‘আমি কানাডার নাগরিক। এ দেশে আমার ২০০ কোটি টাকা আছে। এখানে অনেক শীত, তুমি থাকতে পারবা না। তাই ব্যবসা গুটিয়ে আমার টাকাগুলো বাংলাদেশে নিয়ে আসব। এ টাকায় তুমি ব্যবসা করবা। আমিও কানাডা ছেড়ে তোমার সঙ্গেই থাকব।’

এ কথাগুলো সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক প্রতারকের। বিয়ের নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে পুরান ঢাকার ৭০ বছর বয়সী এক ব্যবসায়ীকে ২০০ কোটি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে এক কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাদিয়া (৩৭)। এ ছাড়া আরও একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে একই প্রক্রিয়ায় ২৫-৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শুক্রবার মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলেন এসব তথ্য জানানো হয়।

সিআইডি বলছে, সাদিয়া জান্নাতের বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি ও তার দ্বিতীয় স্বামী এনামুল হাসান মিলে গড়ে তুলেছেন প্রতারক চক্র। শাহরিয়ার, ফারজানা এবং আবু সুফিয়ান নামে আরও তিন ব্যক্তি এই চক্রে যুক্ত রয়েছেন বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। চক্রের প্রধান সাদিয়া বিয়ের জন্য বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করতেন, ‘প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি সন্তানহীন পাত্রীর জন্য পাত্র প্রয়োজন। পাত্রীর ব্যবসার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বয়স্ক পাত্রের অগ্রাধিকার।’ যোগাযোগের ঠিকানা দেওয়া থাকে বারিধারা, গুলশান, ঢাকা। একটি মোবাইল ফোন নম্বরও দেওয়া থাকে যোগাযোগের জন্য।

এ বিজ্ঞাপন দেখে পুরান ঢাকার ওই ব্যবসায়ী যোগাযোগ করেন সাদিয়া জান্নাতের সঙ্গে। কথোপকথন হয় তাদের। কথোপকথনের একপর্যায়ে ১২ জুলাই গুলশান-২ এর একটি থাই রেস্টুরেন্টে দেখা করেন তারা। ব্যবসায়ী দেড় লাখ টাকা ও পাসপোর্ট দেন তার কাছে। পরে সাদিয়া জান্নাত তাকে জানান, কানাডায় তার ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। ওই টাকা দেশে নিয়ে আসবেন। এই টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দেড় মাসে ট্যাপ, ভ্যাট, ডিএইচএল বিলসহ ইত্যাদির খরচের কথা বলে এক কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। ১ সেপ্টেম্বর সাদিয়া জান্নাত যখন ‘ডলারের বাক্স’ বলে তার হাতে এ-৪ সাইজের সাদা কাগজের একটি বাক্স ধরিয়ে দেন, তখনই তিনি প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারেন। এর পরই তিনি সিআইডির কাছে অভিযোগ করেন। অনুসন্ধান চালিয়ে সাদিয়াকে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে তিন ভুক্তভোগীর পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন, সাতটি সিল, অসংখ্য ব্যবহূত সিম ও হিসাবের খাতা জব্দ করা হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর একটি বেসরকারি ব্যাংকে ৪৮ লাখ টাকা জমা দেওয়ার একটি স্লিপও পাওয়া গেছে। তার কাছ থেকে যে হিসাবের খাতা জব্দ করা হয়েছে, তাতে প্রতারণার মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য রয়েছে।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো. রেজাউল হায়দার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাদিয়া জান্নাত মাধ্যমিক পাস করতে পারেননি। পোশাক আশাক এবং কথা বার্তায় আধুনিকতার ছাপ রয়েছে। যে কারণে নিজেকে কানাডা প্রবাসী বলে লোকজনকে সহজেই বিশ্বাস করাতে পারেন। প্রথম স্বামীকে তালাক দিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় স্বামী এনামুল হাসান তার চক্রের সদস্য। দু’জন মিলেই প্রতারণা করে আসছিলেন। তাদের ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ০১:১৪:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/সক/এমএআর