রাণীশংকৈলে কৃষিতে “আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ প্রদর্শনীর” স্থান পরিদর্শন

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে বুধবার দিনব্যাপী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আধুনিক প্রযুক্তি প্রদর্শনী বিষয়ক উদ্বুদ্ধকরণ পরিদর্শন কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে এদিন সকাল ১০ টায় জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি অফিসারের নেতৃত্বে পরিষদ চত্বর থেকে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, এনজিও কর্মি, জনপ্রতিনিধি স্কুুল ও কলেজ শিক্ষক, সফল কৃষক, ও সাংবাদিকরা অংশ গ্রহণ করেন।

প্রথমেই কৃষি অফিস থেকে উপজেলার গোগর চৌরাস্তা গ্রামের এস এম ই কৃষক নজরুল ইসলামের সরিষাবীজ, ডালবীজ, রসুন ও মধু উৎপাদন এবং ভার্মি কম্পোস্ট প্রযুক্তির কলাকৌশল কৃষক নজরুল উপস্থিত পরিদর্শন টিমকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, কৃষি অফিসের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতায় প্রতি বছর প্রায় ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছি। একইভাবে বিরাশি গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেকের ভুট্টা ক্ষেতের সাথে ঝিংগা সবজি আবাদ দেখে পরিদর্শনকারীগণ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ বছর ১.৬৬ একর জমিতে ভুট্টার সাথে ঝিংগা আবাদ করে এ কৃষক প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা ভাল করেছেন বলে জানান।

বলিদ্বারা ব্লকের রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামের কৃষক আনারুলের বাড়িতে কৃষি অফিসের কারিগরি সহায়তায় গোমুত্র সংরক্ষণ করে তিনি বিভিন্ন ফসলে প্রয়োগ করে অতি কম খরচে পোকামাকড় ও রোগ দমন করেন । এতে তিনি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

অপরদিকে বনগাঁও গ্রামের এস এম ই ও জেলার শ্রেষ্ঠ কৃষক পয়গাম আলী বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণসহ ড্রাগন চাষ, বারোমাসি আম চাষ, গ্রীষ্মকালিন পেঁয়াজ চাষে ব্যাপক সাফল্য ও সুনাম অর্জন করেছেন। এছাড়াও তিনি সূর্যমুখী চাষ করে এলাকায় সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং তাকে অনুসরণ করে অনেকেই এখন এ রকম কৃষি আবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

পরিদর্শনের শেষ বিকালে এ টিম করনাইট গ্রামের কৃষক মুকুল হোসেনের মাল্টা বাগান ঘুরে দেখেন। তাঁর মাল্টা বাগানের প্রচুর ফলন, বাজারজাতকরণ ও লাভের কথা শুনে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে যায়। মাল্টার পাশাশাশি তিনি একিই বাগানে বিভিন্ন জাতের উন্নত লেবু ও ড্রাগণ ফল চাষ করেও প্রচুর অর্থ উর্পাজন করছেন। এ প্রসঙ্গে কৃষক মুকুল বলেন প্রথমে যখন মাল্টা বাগান করতে যাই, সবাই আমাকে পাগল বলতেছিল কিন্তু আমার অবিশ্বাস্য সাফল্য ও মুনাফা দেখে এ গ্রামের অনেকেই এখন মাল্টা বাগান করতে ব্যস্ত। পরে কৃষক মুকুলের মাল্টা বাগান চত্বরে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে দিনব্যাপী পরিদর্শনকারীদের নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা কৃষি অফিসার সঞ্জয় দেবনাথের সভাপতিত্বে ও স্বাগত বক্তব্যের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষি অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও- কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শেফালি বেগম, সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক, আবুল কালাম ও সফিকুল ইসলাম মুকুল, পৌর আ’লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম সরকার, প্রেসক্লাব সভাপতি ফারুক হোসেন, প্রভাষক সিরাজুল ইসলাম বুলু প্রমুখ।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল রানা, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহাফুজা বেগম পুতুল, প্রভাষক প্রশান্ত বসাক, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ, কালের কন্ঠ প্রতিনিধি সফিকুল ইসলাম শিল্পী, ইনকিলাব প্রতিনিধি আশরাফুল আলম, আমাদের সময় প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন আকাশ, ডেইলি সান প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির, প্রতিদিনের সংবাদ প্রতিনিধি খুরশিদ আলম শাওন, ইএসডিও (প্রেমদীপ) ম্যানেজার খায়রুল আলম ও স্থানীয় কৃষকেরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় বক্তরা পরিদর্শনে অনুপ্রাণিত হয়ে বলেন, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার সারাদেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে অনেক কৃষি সেবা প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন। তাই দেশ আজ কৃষিতে স্বনির্ভরতা অর্জনসহ বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্যাদি বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম হচ্ছে এবং দেশে ঘটিয়েছে কৃষি বিপ্লব। তারা আরো বলেন, রাণীশংকৈল উপজেলার কৃষি অধিদপ্তরের নিরলস প্রচেষ্টায় বিভিন্ন সাফল্যদায়ক “আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ প্রদর্শনী” ও কৃষককে উদ্বুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া এর বাস্তব উদহারণ।

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১১:২৪:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এইচকে/এমএআর