অল্প সময়ে অধিক অর্থের লোভ: মাদক ও স্বর্ণ পাচারে বাড়ছে নারীদের সংখ্যা

যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে থামছে না পাচার। এই রুটে অনেকটা অপ্রতিরোধ্য চোরাকারবারীরা। এ অঞ্চল ভারত সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় পুরুষের পাশাপাশি নারী পাচারকারীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। সম্প্রতি সময়ে দেখা গেছে মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালানির সাথেও জড়িয়ে পড়েছে নারী চোরাকারবারিরা। অল্প সময়ে অধিক অর্থের লোভে তারা এ পাচারের সাথে জড়িয়ে পড়ছে বলেও জানা গেছে। গত ১৮ দিনে মাদক ও স্বর্ণ পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকায় নয়জন নারী পাচারকারীকে হাতেনাতে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব পাচারকারীরা ধরা পড়লেও গডফাদাররা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আর আটক হওয়া পাচারকারীরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে কয়েকদিন বন্ধি থাকার পর বেরিয়ে এসে আবার জড়িয়ে পড়ে পাচারের সাথে।

আয়েশা (ছন্দনাম) নামের এক নারী পাচারকারী আগে ভারত থেকে জিরা, মসলা, কসমেটিকসহ তৈরি পোষক নিয়ে আসত। কিন্তু অল্প সময়ে অধিক অর্থের লোভে এ চক্রে জড়িয়ে পড়েছে সে। শুধু আয়েশা না এরকম অনেকেই বিভিন্ন ধরণের ভারতীয় পণ্য আনা নেয়া করলেও অধিক অর্থেও লোভে তারা জেনে না জেনে মাদকসহ অন্যান্য অবৈধ নেশা দ্রব্যসহ স্বর্ণ পাচারে জড়িয়ে পড়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বেনাপোল সীমান্তের কায়বা, রুদ্রপুর, গোগা, অগ্রভুলাট, পাঁচভুলাট, শালকোনা, পাকশিয়া, ডিহি, গোড়পাড়া, পুটখালী, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, সাদিপুর, রঘুনাথপুর, ঘিবা ও ধান্যখোলা সীমান্তে পাচারকারীরা অনেক বেশি সক্রিয়। সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় এসব পথ বেছে নিয়েছেন পাচারকারীরা।

পুলিশ ও বিজিবি সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ আগস্ট বেনাপোল পোর্ট থানার সাদিপুর সীমান্ত থেকে ওই গ্রামের দুখে মিয়ার স্ত্রী বানেছাকে ৯ কেজি ২ শ গ্রাম ওজনের ৫৭টি স্বর্ণেরবারসহ আটক করে বিজিবি।

এর আগে, গত ১০ সেপ্টেম্বর বাগআঁচড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ শার্শার রাড়িপুকুর গ্রাম থেকে পানি ভর্তি কলসিতে করে ফেনসিডিল বহনের সময় রিপন হোসেনের স্ত্রী কাকলী বেগমকে আটক করে। একই দিন বেনাপোল পোর্ট থানার গয়ড়া গ্রাম থেকে অভয়নগর থানার গুয়াখোলা এলাকার ইকবালের স্ত্রী পারভীন বেগম বুলু ও কোতোয়ালি থানার নরেন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ খানের মেয়ে রোকেয়া খাতুনকে দুই কেজি গাঁজাসহ আটক করে পুলিশ।

৮ সেপ্টেম্বর শার্শার সাতক্ষীরা-নাভারণ সড়কের আমতলা এলাকা থেকে বাগআঁচড়া তদন্ত কেন্দ্রে পুলিশ সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানার সাতপুর গ্রামের শুভ আহমেদের স্ত্রী জুলেখা বেগম ও একই গ্রামের আব্দুল্লাহর স্ত্রী আকলিমা খাতুন খাদিজাকে ১ শ ১০ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে।
৬ সেপ্টেম্বর সকালে বেনাপোল পৌর এলাকার ভবেরবেড় গ্রাম থেকে বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ যশোর কোতোয়ালি থানার নরেন্দ্রপুর (আমড়াতলা) এলাকার আব্দুল আজিজের মেয়ে মনি ও বাগেরহাট সদরের যাত্রাপুর গ্রামের আইয়ুব আলী শেখের মেয়ে ফাতেমা খাতুনকে তিন কেজি গাঁজাসহ আটক করে।

৫ সেপ্টেম্বর শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া সাতমাইল এলাকার আমতলা থেকে বাগআঁচড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ একাধিক মামলার আসামি রিজিয়া বেগম ওরফে তানিয়াকে সাত বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে।

বেনাপোলের ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বলেন, মাদক বর্তমান সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। নারীদেরও মাদকসহ বিভিন্ন পাচারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক। জেনে হোক আর না জেনে হোক পাচারে জড়িত থাকলে তাদের এই পেশা ত্যাগ করা উচিত। যেন মায়েদের নেতিবাচক প্রভাব তার সন্তানের ওপর না পড়ে।

যশোর ব্যাটালিয়ন (৪৯ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোঃ সেলিম রেজা, পিএসসি জানান, দীর্ঘদিন যাবত কতিপয় পাচারকারীরা মাদক স্বর্ণসহ বিভিন্ন অবৈধ পণ্য পাচার করছে। ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে তারা এ কাজগুলো করে থাকে। চোরাচালানি রোধে সীমান্তে বিজিবি সতর্ক আছে। নারীরা মাদক স্বর্ণ পাচারে ঝুকছে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, মুলত সব সময়ই পাচারাকারীরা নতুন নতুন কৌশলে তাদের কর্মকান্ড করে থাকে। ঝুকি এড়াতে হয়তবা তারা নারীদের ব্যবহার করছে।