আবারও স্ব-মূর্তিতে বেনাপোল সীমান্তের মাদক সম্রাট নেদা

হত্যা চেষ্টা মামলায় জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো স্ব-মূর্তিতে এলাকায় ফিরে ত্রাসের রামরাজত্ব কায়েম করতে চলেছে বেনাপোলের সাদিপুর সীমান্তের বহু অপকর্মের হোতা মাদক স¤্রাট আলী আহমেদ নেদা ও সহোদর আজিবার রহমান ভুট্টো। গত ১২ সেপ্টেম্বর সকালে একটি পারিবারিক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেয়ের জামাই মিলন হোসেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাটখারাপেটা করে মারাত্বক জখম ও দোকান ভাংচুর করে তারা। এসময় এলাকার জনি নামে এক যুবক ঠেকাতে গেলে তাকেও কুপিয়ে মারাত্বক জখম করে ত্রাস নেদা গং। পরে গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়ে বাড়িতে রাখা অবৈধ পিস্তল আনতে গেলে তাদের দুই ভাইকে আটক করে বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ।

রক্তাক্ত জনি মিয়ার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক, তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে প্রথমাবস্থায় শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে যশোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার আগারগাঁও ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল ও খামারবাড়ী চক্ষু হাসপাতাল নিয়ে গেলে নার্ভ কেটে গেছে এবং ডান চোখ নষ্ট হওয়ার পথে বলে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। অর্থাভাবে সে এখন বিনা চিকিৎসায় নিজ বাড়িতে ভুগছে। এ বিষয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় ৪ জনকে অভিযুক্ত করে একটি হত্যা চেষ্টা মামলা হয়েছে। মামলা নং-২১, তারিখ-১২ সেপ্টেম্বর-২০২০।

মামলার আসামীরা হলো- বেনাপোল পোর্ট থানার সাদিপুর গ্রামের আব্দুল মিয়ার ছেলে আলী আহমেদ নেদা (৫৬) ও তার ভাই আজিবার রহমান ভুট্রো, ভুট্রোর ছেলে আবু বাক্কার এবং খোদাবক্সের ছেলে ফারজেল হোসেন।

জনির পিতা দাউদ হোসেন জানান, তার ছেলের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। এদিন স্থানীয় সন্ত্রাসীরা তার ছেলেকে কুপিয়ে জখম করলে প্রথমে নাভারন হাসপাতালে নিয়ে গেলে যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে যশোর থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিলে আগারগাঁও ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল ও পর্যায়ক্রমে খামারবাড়ী চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে নার্ভ কেটে গেছে এবং ডান চোখ নষ্ট হওয়ার পথে বলে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। অর্থাভাবে ছেলে তার বিনা চিকিৎসায় নিজ বাড়িতে ভুগছে।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী খোদেজা বেগম ও হবিবার রহমান বলেন, মিলন ও তার স্ত্রীর সাথে পারিবারিক কলহ হলে স্যালক আবু বাক্কার এসে মিলনকে বাটখারা দিয়ে মাথায় ও বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গে আঘাত করে। এসময় এলাকার মানুষ এসে ঠেকাতে গেলে জনি নামের এক যুবককে কুপিয়ে জখম করে আবু বাক্কার, ফারজেল ও সঙ্গীয়রা। একটি দায়ের কোপ কপালে ঢুকে গেলে টেনে বের করতে কষ্ট হলে তারা স্থানীয় মানুষের ভিড় বেশী দেখে ভারতের দিকে দৌড় দেয়। পরে স্থানীয়রা এসে কয়েকজনে মিলে জনির কপাল থেকে দায়ের কোপ ছাড়িয়ে প্রথমে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পাঠায়।

মিলন এর পিতা ওসামন খোকা বলেন, তার ছেলে ও বৌমার পারিবারিক কলহের জের ধরে স্যালক আবু বাক্কার ও তার সঙ্গীয়রা মারধর করে। এসময় প্রতিবেশী জনি ঠেকাতে গেলে তাকে দা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্বক রক্তাক্ত জখম করে। এ এসময় আবু বাক্কারের চাচা আলী আহম্মেদ নেদা ও বাবা আজিবার রহমান ভুট্রো এসে হুকুম দেয় তাদের গুলি করে হত্যা করার জন্য।

স্থানীয়রা জানান, আলী আহম্মেদ নেদা এলাকার একজন চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী ও সীমান্তের চোরাইঘাট সিন্ডিকেট প্রধান। সে নিজ এলাকায় লাইসেন্স বিহীন পিস্তল নিয়ে ঘোরাফেরাসহ ত্রাসের রাম রাজত্ব কায়েম করে। যশোরের শার্শা উপজেলা ঘেরা উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে দেশের অভ্যন্তরে যতসব মাদক প্রবেশ করে এবং যতসব হুডি ও স্বর্ণেরবার পাঁচার হয় তার অর্ধাংশ পারাপার হয় ত্রাস নেদার অলিখিত মালিকানাধীন সাদিপুর ঘাট দিয়ে। ইতিমধ্যেও যে ঘাট এলাকা সাদিপুর থেকে কয়েকটি বড় ধরনের মাদক ও স্বর্ণের চালান আটক করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যসহ স্থানীয় পুলিশ।

এ বিষয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রোকন বলেন, উল্লেখিত ঘটনায় জনির পিতা দাউদ হোসেন বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামী করে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেছে। যার একজন ভারতে পালাতে গেলে সেদেশের সীমান্তবাসীরা গণপিটুনি দিয়ে তাকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়। পরে তাকে সাদিপুর গ্রামের কে/বা কারা আŸারো মারধর করলে তার অবস্থা বেগতিক দেখে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকেও নাভারন হাসপাতাল, যশোর সদর হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। যেকারণে তাকে বাদে ৩ জন আসামীকে আটক করে আমরা যশোর আদালতে প্রেরণ করেছি। আটককৃত আসামিরা হলো সাদিপুর গ্রামের আব্দুল মিয়ার ছেলে আলী আহম্দে নেদা, তার ভাই আজিবার রহমান ভুট্রো ও ভুট্রোর ছেলে আবু বাক্কার।

এদিকে ফারজেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তার বাবা খোদাবক্স বাদি হয়ে সাদিপুর গ্রামের আক্তারকে আসামী করে থানায় আরেকটি মামলা করেছে বলেও জানান তিনি।

কে এই নেদা? প্রশ্ন থেকে যায়, উত্তর মেলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাদিপুর গ্রামের জনৈক ব্যক্তি বলেন, আলী আহমেদ নেদা একটি দারিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাবার নাম ছিলো আব্দুল ওরফে কুরকুচে বুড়ো। মস্তিস্ক-বিকৃত থাকায় এবং হালচাষের কোন আবাদী জমি না থাকায় খুবই অভাব অনটনের মধ্যে সেভাবেই চলত তাদের সংসার। যেকারণে লেখাপড়া ভাগ্যে জুটেনি। বাল্য জীবনেই জড়িয়ে পড়ে অপরাধ জগতের সাথে। ভারত সীমান্ত ঘেঁষা বেনাপোলের সাদিপুর গ্রাম। খুব বেশিদূর কষ্ট করতে হয়নি। ৮০’র দশকে জড়িয়ে পড়ে অপরাধ কর্মকান্ডের মধ্যে। ভারত বাংলাদেশ অবৈধ ধূঢ় পারাপার দিয়ে জীবন শুরু করে। পরে সামান্য সঞ্চয় নিয়ে ভারত থেকে মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী এনে বাংলাদেশে বিক্রি করে।

পর্যায়ক্রমে সীমান্তের অলিখিত ঘাট মালিক হয়ে হেরোইন, ফেন্সিডিল, গাজা, মদ, নারী-শিশু পাঁচার, হুন্ডি পাচার, স্বর্ণ পাঁচার করে কোটিপতি বনে যায়। পরে জরুরী আইনের সময়ে সে আটক হলেও অবৈধ টাকার ক্ষমতা বলে বেরিয়ে আসে। পর্যায়ক্রমে সরকারের কয়েক দফা ঝটিকা অভিযানে একে একে উড়িয়ে দেয় সবকটি অভিযান। থেমে থাকে কিছুদিন। সরকারের মাদক নিমূল অভিযান শেষ হতে না হতে সে আবার স্বমূর্তি ধারণ করে আবারো সাদিপুর ঘাট মালিক হয়ে অস্ত্র, মাদক, স্বর্ণ, হুন্ডি, নারী-শিশু পাঁচারসহ সকল অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। ছেলে মুরাদ হোসেন লেখাপড়া বেশী না জানলেও একটি সাংবাদিক সংগঠনের খাতায় নাম লেখিয়ে বাবার পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছে নেদা সিন্ডিকেটের সকল ধরণের অপকর্ম।