আজও মেলেনি অনুমতি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ব্যবসায়ীদের মাঝে হাহাকার

মঙ্গলবার হতে শুরু হওয়ার কথা যশোরের চৌগাছার ঐতিহ্যবাহি পীর বলুহ মেলা। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে মেলা শুরুর একদিন আগেও সরকার থেকে অনুমতি মেলেনি বলে জানা গেছে। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে ফেরিওয়ালাসহ হরেক রকমের ব্যবসায়ীরা মেলা চত্তরে আসতে ভুল করেনি। মেলা না হওয়ার খবরে ব্যবসায়ীদের মাঝে হাহাকার দেখা দিয়েছে। শেষমেষ মেলার অনুমতি হবে এমন আশায় আগত ব্যবসায়ীরা ধীর গতীতে হলেও অস্থায়ী দোকান নির্মানের কাজ শুরু করছেন।

উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা গ্রামে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন এ অঞ্চলের প্রখ্যাত পীর বলুহ দেওয়ান (রঃ)। যুগযুগ ধরে তার রওজা শরীফকে ঘিরে প্রতি বাংলা সনের শেষ মঙ্গলবার বসে মেলা, যা অঘোষিত ভাবে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলে। এ বছরও মেলা হওয়ার কথা থাকলেও বাধ সেধেছে মহামারি করোনা ভাইরাস। করোনা ভাইরাসের কারনে মেলা শুরুর এক দিন আগেও সরকার থেকে কোন অনমুতি মেলেনি বলে সংশ্লিষ্ঠদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। তবে মেলা কর্তৃপক্ষ অনুমতির জন্য শেষ চেষ্টা অব্যহত রেখেছেন।

রবিবার দুপুরে মেলা চত্তর হাজরাখানা গ্রামে যেয়ে দেখা যায় গ্রামের চিত্র পাল্টে গেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা হতে হরেক রকমের ব্যবসায়ীরা হাজির হয়েছেন মেলা চত্তরে। কোন মাইকিং, কিংবা চিঠি পত্রের মাধ্যমে দাওয়াত না, প্রত্যেকে নিজ নিজ উদ্যোগে ট্রাক, নছিমন, করিমন যে যেমন ভাবে পেরেছেন মালামাল নিয়ে হাজির হয়েছেন মেলা চত্তরে। তারা মেলা চত্তরে এসে জানতে পারেন সরকার থেকে আজও মেলার অনুমতি মেলেনি। এই খবরে হতাশা দেখা দিয়েছে সকল ব্যবসায়ীদের মাঝে। সব ব্যবসায়ী মেলা হবে এমন ভাবনায় কয়েক দিন বসে থাকার পর শেষ সময়ে এসে অস্থায়ী দোকান ঘর নির্মান করতে শুরু করেছেন।

এ সময় কথা হয় রাজশাহী নওগাঁ থেকে মেলায় শিশু খেলনা নিয়ে আসা ব্যবসায়ী হারুন অর রশিদের সাথে। তিনি জানান, প্রতি বছর এ মেলাতে আসা হয় এবং ভালো ব্যবসা করে বাড়িতে যায়। এ বছরও এসেছেন কিন্তু মেলা হবে কি হবে না তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি। খুলনার রুপসা থেকে আসা প্রসাধনী ব্যবসায়ী বিল্লল মল্লিক বলেন, মেলায় এসে জানতে পারি করোনার কারনে মেলার অনুমতি হয়নি। এখন কি করবো কোথায় যাব কিছুই ভেবে পাচ্ছিনা। তিনি আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, করোনা আসার পর চরম কষ্টে দিন পার করেছি। আশা করে ছিলাম মেলায় বেচা কেনা করে যা রোজগার হবে তা দিয়ে পরিবারের মুখে আবারও ভালো ভাবে খাবার তুলে দিতে পারবো।

কিন্তু মেলার অনুমতি না হলে কি হবে সেই চিন্তায় নির্ঘুম রাত পার করছি। বগুড়া জেলা থেকে আগত খেলনা ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা গরীব মানুষ অতি কষ্টে আমাদের দিন যায় রাত আসে। অনেক আসা নিয়ে এই মেলায় এসেছি, কিন্তু মেলা হবে কি হবে না তা এখনও পরিস্কার না। যদি মেলা না হয় তাহলে কি ভাবে দেশে ফিরবো সেই চিন্তায় খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। যশোরের মনিরামপুর থেকে আসা আসবাবপত্র বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাক ভর্তি করে নানা প্রকার আসবাবপত্র নিয়ে এসেছি, এখন শুনতে পারছি মেলা হবে না। এই ক্ষতি কি ভাবে পুশিয়ে উঠব তা ভেবে পারছিনা।

এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আগত ব্যবসায়ীরা বলেন, করোনা অজুহাতে মেলা বসার অনুমতি হচ্ছে না এমনটিই জানতে পেরেছি, কিন্তু আমাদের প্রশ্ন সরকার যখন দেশের সকল বিনোদন, পর্যটন এলাকা খুলে দিয়েছে তখন মেলার অনুমতিতে বাধা কেন। মেলায় যে সকল ব্যবসায়ীরা এসেছেন তারা সকলেই নিন্ম মধ্যবৃত্ত শ্রেনীর। মেলা যদি না বসে তাহলে অপুরোনীয় ক্ষতির মুখোমুখি হবেন সকলেই। তাই মেলার অনুমতির জন্য তারা সংশ্লিষ্ঠদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে মেলা কমিটির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক বিএম বাবুল আক্তার বাবু এবং সংশ্লিষ্ঠ ইউপি সদস্য ও আ’লীগ নেতা মনিরুজ্জামান মিলন বলেন, করোনার কারনে এ বছর মেলা না হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ব্যবসায়ীরা হাজির হয়েছে মেলা অঙ্গনে। তাদের কথা বিবেচনা করে অনুমতির জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে তবে এখনও অনুমতি পাওয়া যায়নি।

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ২০:১২:০৮ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমআই/এনআফটি