দুই গবেষকের পাট দিয়ে আবিষ্কৃত মুল্যবান কার্বন বিশ্বজুড়ে ব্যবহারের সম্ভাবনা

নানামুখি ব্যবহার উপযোগী করতে পারলে, যে কোন বস্তুর কদর বাড়ে, হয় উজ্জ্বল সম্ভাবনাময়। পাট নিয়ে এ সম্ভাবনাময় কাজটি করেছেন বাংলাদেশের দুই সনামধন্য গবেষক ড. মোঃ আব্দুল আজিজ এবং ড. মোঃ আবুল কাশেম। এছাড়া সহায়তা করেছেন ড. আজিজের পি এইচ ডির ছাত্র সাঈদ শাহিন শাহ। তাঁরা পাট ও পাটখড়ি দিয়ে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সহায়তায়, অত্যাধিক মূল্যবান উপাদান কার্বন তৈরি এবং তার ব্যবহার নিয়ে একটি রিভিউ পেপার লিখেছেন যা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে খ্যাতনামা জার্নাল দি কেমিকাল রিপোর্ট (ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ৬.১৬৩,২০১৯)।

বিশ্ববিখ্যাত উইলি কর্তৃক প্রকাশিত একটি জার্নাল। উল্লেখ্য উইলি এই পেপারটি অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ন মনে করে এটিকে কার্বন, গ্রাফাইট এবং গ্রাফিন (অ্যাডভান্স ম্যাটেরিয়াল) বিভাগে হট টপিক হিসাবে শ্রেণীভুক্ত করেছে।
পাট অর্থকরী কৃষি সম্পদ যা সোনালী আঁশ বলে পরিচিত কিন্তু নানামুখি তথা বিস্তৃত ব্যবহারের ক্ষেত্র তৈরি না হওয়ায়, বর্তমানে তার অতীত ঐতিয্য কিছুটা হলেও হারাতে বসেছে। এমতাবস্তায় প্রকাশিত পেপারটিতে গবেষকগণ পাটের ব্যাপক সম্ভবনার কথা তুলে ধরেছেন। পাট ও পাটখড়ি থেকে তৈরী করা সম্ভব একটিভেট কার্বন বা কার্যকারী কার্বন, গ্রাফিন ও অন্যান্য মূল্যবান কার্বন যা ব্যবহার হয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ।

এই কার্বন তৈরীতে খরচ কম, পদ্ধিতিটা সহজ তাছাড়া পরিবেশ বান্ধব। এছাড়া তৈরীকৃত কার্বনের পৃষ্ঠতলের আয়তন বেশী হওয়ায় কর্মক্ষমতা অনেক বেশী। পৃথিবীব্যাপী বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। দূষিত হচ্ছে পরিবেশের মূল্যবান উপাদান পানি, বায়ু ও মাটি। ব্যাহত হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। আর এই দূষিত বায়ূ, পানি পরিশোধনে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব একটিভেট কার্বন তাছাড়া অধিক মূল্যবান এনার্জি ষ্টোরেজ (শক্তি সঞ্চয় ) ডিভাইসে এবং বহুবিধ সেন্সর তৈরীতে।

পাট থেকে তৈরী কার্বন গবেষকগণ পাঠাতে চান পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে। আর যা নিশ্চিত করবে এর ব্যাপক চাহিদা। যোগ হবে বাংলাদেশের অর্থনীতে এক নুতন মাত্রা। পাট ফিরে পাবে তার অতীত ঐতিয্য, কৃষকগণ তার নির্মল হাসি।
গবেষকগণ হলেন বাংলাদেশের যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার মমিনপুর গ্রামের কৃতী সন্তান বিশিষ্ট রসায়ন বিজ্ঞানী ড. মোঃ আব্দুল আজিজ আর অন্যজন হলেন একই উপজেলার আওয়ালগাঁতী গ্রামের কৃতী সন্তান বিশিষ্ট বায়োসেন্সর ও পরিবেশ গবেষক ড. মোঃ আবুল কাশেম। ড. আজিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করে, উচ্চ শিক্ষার জন্য যান দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখানে পুশান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ন্যানোম্যাটিরিয়াল বেইজড ইলেকট্রো অ্যানালাইটিক্যাল কেমিষ্ট্রিতে পি এইচ ডি, জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাটেরিয়াল কেমিষ্ট্রি বিভাগের ন্যানোম্যাটরিয়াল ল্যাবরেটিতে অক্টোবর ২০১১ সাল পর্যন্ত ২ বছর গবেষণা শেষ করে সৌদি সরকারের আহবানে কিং ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি ওখানে কর্মরত আছেন।

ড. কাশেম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিন থেকে এম এস (প্রথম শ্রেণীতে প্রথম ডিসটিনশানসহ) ডিগ্রী অর্জন করে সেখানে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য জাপানে যান। জাপানের তয়মা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ ডি (ইন্জিনিয়ারিং) ডিগ্রী অর্জন করেন। পরে জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোষ্টডক্টরেট সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি জাপানে কর্মরত আছেন।

সর্বোপরি, উজ্জ্বল সম্ভাবনাটি প্রকৃতপক্ষে কাজে লাগাতে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দৃষ্টি ও মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।

৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ২৩:৪৮:০১ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআরএস/এনআফটি