শতশত কৃষকের রোপা ধান এখন মাছের পেটে

ঝিনাইদাহ জেলার মহেশপুর উপজেলার কতিপয় ব্যাক্তির কারণে যশোরের চৌগাছার অসহায় কৃষকের হাজার হাজার বিঘা জমির ধান এখন মাছের পেটে। একদিকে প্রাকৃতিক দূর্যোগ অন্যদিকে রোপা ধান নিজেদের চোখের সামনে দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাওয়ায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে কৃষকের। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন কাজ হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

চৌগাছা উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম হোগলডাঙ্গা। এই গ্রামটি পাশ্ববর্তী ঝিনাইদাহ জেলার মহেশপুর উপজেলার গা ঘেষে গড়ে উঠা। গ্রামটির পাশে হাজার হাজার বিঘা জমি নিয়ে একটি বিলের অবস্থান। স্থানীয়রা এটিকে দোবিলা বিল হিসাবে চেনে। বিলের প্রায় ১৭শ একর জমি সম্পূর্ণ সরকারী (খাস) যার পুরোটাই মহেশপুর উপজেলার অন্তর্গত।

এ ছাড়া ৩ হাজার একর জমি ব্যক্তি মালিকানা যার অধিকাংশ জমি চৌগাছা উপজেলা বাসিদের। প্রায় ৫ হাজার একর জমির মধ্যে ১৭শ একর জমিতে মহেশপুর উপজেলার আজমপুর গ্রামের আলতাফ হোসেন, সৈয়দপুর গ্রামের মন্টু মিয়া, সামছুল আলম, নওদা গ্রামের আঃ মান্নানসহ বেশ কয়েকজন ব্যাক্তি সরকার থেকে লিজ নিয়ে বছরের পর বছর মাছ চাষ করে আসছেন।

বাকি ৩ হাজার একর জমিতে চৌগাছা উপজেলার চাষিরা ধান চাষ করেন। চাষিদের অভিযোগ প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলে মহেশপুরের ওই মাছ চাষিরা পরিকল্পিত ভাবে পাটাতন উঠিয়ে মাছ সমস্ত বিলে ছেড়ে দেয়। মাছ যখন সমস্ত বিলে চরে বেড়ায় তখন কৃষকের রোপা ধান বিশেষ কার্প জাতীয় মাছে খেয়ে সাবাড় করে দেয়। অন্য বছর গুলোর মত এ বছরও তার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি।

কৃষকের রোপা হাজার হাজার বিঘা ধান মাছে খেয়ে ফেলায় তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। সরেজমিন ওই বিলে যেয়ে ঘটনার সত্য দেখা মেলে। বিলের পাড়ে কৃষকরা বিচ্ছিন্ন ভাবে দাঁড়িয়ে শুধুই হাহাকার করছে। এ সময় কথা হয় হোগলডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, মহেশপুর উপজেলার গুটি কয়েক ব্যাক্তির কারণে প্রতি বছর বর্ষা আমাদের জন্য আর্শিবাদ না হয়ে যেন অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়।

বর্ষা এলে মহেশপুরের বিলের মাছ চাষিরা চৌগাছার শতশত কৃষককে পথে বসায়। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হলেও আজও কোন ফল পাওয়া যায়নি। কৃষক রফিকুল ইসরামের মত ওই গ্রামের কৃষক শহিদ, আবু মুসা, আঃ হাকিম, মশলেম উদ্দিন, আব্দুর রহিম, আলাউদ্দিন, নুুর ইসলাম বলেন, প্রায় ৫ হাজার একর জমি নিয়ে গঠিত এই বিলের অধিকাংশ জমিই মহেশপুর উপজেলার মধ্যে পড়েছে, যার ১৭শ একরই হচ্ছে সরকারী খাস।

এই জমি মহেশপুরবাসি সরকার থেকে লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে আসছে। তাদের সুবিধামত বিলের পানি বের হওয়ার জন্য একটি ব্রিজ নির্মান করেছেন। সরু এই ব্রিজটি বর্ষা এলেই তারা মুখ বন্ধ করে দেয়। যার কারনে দেখতে দেখতে বিলের পানি কয়েকগুন বেড়ে যায়। সেই সুযোগে তারা চাষ করা মাছ পাটাতন উঠিয়ে সমস্ত বিলে চরে বেড়ানোর সুযোগ করে দেয়।

যখন মাছ সমস্ত বিলে চরে বেড়ায় তখন মাছ চাষিরা নৌকায় বিলে টহল দেয়। তখন আমরা আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে নামতে পর্যন্ত পারিনা। কৃষকরা বালেন, ঘর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষতি পুশিয়ে নিতে এ বছর আগে ভাগেই ধান চাষ করেছিলাম। বিঘার পর বিঘা জমির ধান সবুজে সবুজে ভরে যায় এরপর শুরু হয় বর্ষা, তারপর মাছ চাষিরা তাদের মাছ সমস্ত বিলে ছেড়ে দিয়ে চাষিদের অপুরোনীয় ক্ষতি করেছেন।

এ বিষয়ে মাছ চাষি মহেশপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের মন্টু মিয়ার সাথে যোগাযোগের জন্য তার ব্যবহৃত ০১৭৫৮ ৫৫০৬৬০ মোবাইলে বারবার ফোন দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রকৌশলী মোঃ এনামুল হক বলেন, একটি লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সেখানে মৎস্য অফিসার ও স্থানীয় নায়েবকে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে এই সমস্যার একটি সমাধান বের করা হবে বলে তিনি জানান।

১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ২১:০৯:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমআই/এমএএস