চৌগাছায় মাচায় লাউচাষ করে কৃষকের সাফল্য

যশোরের চৌগাছায় মাচায় লাউ চাষ করে কৃষক বেশ লাভবান হয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে আধুনিক চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে বানিজ্যিক ভাবে চাষিরা লাউ চাষ শুরু করেছেন। মাচায় লাউ চাষ করে কৃষক লাভবান হওয়ায় দিনদিন এই চাষের দিকে কৃষক ঝুকে পড়েছেন। নতুন নতুন চাষ পদ্ধতিতে কৃষক যাতে আরও বেশি মনোযোগী হয় সে দিকে নজর দিতে সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সচেতন মহল।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলায় সাড়ে ৪শ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন। ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে দু’একটি ইউনিয়ন ছাড়া বাকি সকল ইউনিয়নের চাষিরা বানিজ্যিক ভাবে লাউ চাষ করছেন। আধুনিক চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে মাচায় লাউ চাষ করে কৃষক অনেক সাফল্য পেয়েছেন। মাচায় লাউ চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শনিবার উপজেলার নারায়নপুর, স্বরুপদাহ, হাকিমপুর, পাতিবিলা ইউনিয়নের বেশ কিছু মাঠ ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ মাঠেই লাউ চাষ করা হয়েছে। দু’বছর আগেও মাঠে এ ভাবে লাউ চাষ দেখা যায়নি। উপজেলার আন্দারকোটা মাঠে লাউ ক্ষেতে কর্মরত কৃষক জিন্নাত মোল্লা বলেন, মাচায় লাউ চাষ ব্যয়বহুল হলেও এই পন্থায় চাষ করলে ফলন বেশি পাওয়া যায়। এ অঞ্চলে এক সময় বাড়ির আঙিনায় ছোট ছোট মাচা করে অথবা ঘরের চালে লাউ চাষ করা হত। সেই লাউ পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয় স্বজন বা বাজারে বিক্রি করা হত। বলাচলে সে সময়ে গৃহিনীরা শখের বশত বাড়ির আঙিনায় লাউ গাছ লাগাতেন। কিন্তু বাজারে লাউয়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষকরা এখন ঘরের অঙিনা থেকে লাউকে নিয়ে গেছে মাঠে। মাঠে মাচা করে বানিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে লাউয়ের।

কৃষক মিঠুম মনোরউদ্দিন, জিন্নাত মোল্লা জানান, লাউ চাষে মাচা করতে মুলত খরচ বেশি। এছাড়া সেচ সার ও কীটনাশক অন্য ফসলের মতই প্রয়োগ করতে হয়। অন্য ফসলের মত খরচ বেশি না হওয়ায় কৃষক লাউ চাষের দিকে বেশি ঝুকছেন। বর্তমানে বাজারে ১টি লাউ খুচরা ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে লাউয়ের ব্যাপক চাহিদা, দামও ভাল সে কারনে লাউ চাষ করে কৃষক এ বছর বেশ লাভবান হয়েছেন। কৃষকরা জানান, বছরের প্রায় পুরো সময় জুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টির কারনে লাউ গাছের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে, তারপরও গাছে যে পরিমান ফল হয়েছে তাতে কৃষক ক্ষতি পুশিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে করছেন।

চৌগাছার প্রধান কাঁচা বাজারের আড়ৎদার কবির হোসেন বলেন, লাউ প্রতিটি পরিবারে এখন জনপ্রিয় একটি সবজি, সে কারনে বাজারে অন্য সবজির তেমন চাহিদা না থাকলেও লাউয়ের বেশ চাহিদা। প্রতি হাটে খুলনা, বরিশাল, ঝালকাটি, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা আসেন এবং লাউ কিনে তারা ট্রাক লোড দিয়ে নিয়ে যান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রউচউদ্দিন বলেন, চৌগাছা অঞ্চলের প্রতি ইঞ্চি মাটি ধান পাটসহ সব ধরনের সবজি চালে অত্যান্ত উপযোগী। এ জনপদের কৃষকরা বর্তমানে বানিজ্যিক ভাবে লাউ চাষ শুরু করেছেন। লালতীর ও হাজারী মুলত এই দুই জাতের লাউ চাষ বেশি হচ্ছে। কৃষক যাতে আরও নতুন নতুন চাষে মনোযোগী হয় সে জন্য কৃষি অফিস কাজ করে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।