চৌগাছার শান্তি সরকারী সহযোগিতা পেলে হবে বেকাদের কর্মসংস্থান

যশোরের চৌগাছা পৌরসদরের বাসিন্দা সামছুল আলম শান্তি (৫৫)। অত্যান্ত পরিশ্রমী এক ব্যক্তি সে। এক সময়ের মুদি ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে পাড়ি জমান সুদুর মালায়েশিয়াতে, এরপর দেশে ফিরে তৈরী করেছেন সুতা দ্বারা দড়ি তৈরীর কারখানা। কারখানায় তার পরিশ্রমের বিন্দুমাত্র কমতি নেই, কিন্তু অর্থ অভাবে সে ভাবে ব্যবসাকে মেলে ধরতে পারেননি। সরকারী সহযোগীতা পেলে ক্ষুদ্র শিল্পকে তিনি কিছুটা হলেও বাড়াতে পারবেন আর সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের এমনটিই মনে করছেন শিল্পের মুল উদ্যোক্তা।

চৌগাছার পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের পূর্ব কারিগরপাড়া মহল্লার বাসিন্দা সামছুল আলম শান্তি। পিতা মৃত খোশদেল বিশ^াস। ১২ ভাই বোনের মধ্যে সামছুল আলম শান্তি মেঝে। ছোট বেলা থেকেই সে একজন পরিশ্রমি মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। একটু আধটু বুঝতে শিখে শুরু করেন ব্যবসা। মুদি ব্যবসায় তার জীবনের লম্বা একটি সময় পার হয়েছে। এরপর ব্যবসা গুটিয়ে পাড়ি জমান সুদুর মালায়েশিয়া। দীর্ঘ ১৪ বছর প্রবাস জীবন পার করে ভালবাসার টানে ফিরে আসেন মাতৃভূমিতে। দেশে এসে তিনি এক দিনের জন্যও অলস সময় পার করেননি। মালায়েশিয়াতে থাকা অবস্থায় তিনি নাইলন সুতা দিয়ে দড়ি তৈরীর কাজটি বেশ ভাল ভাবে শিখে আসেন। দেশে ফিরে নিজ বাড়ির আঙিনায় তৈরী করেছেন ক্ষুদ্র এই কারখানা। সেখানে প্রতিদিন তৈরী হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ কেজি দড়ি। কারখানা থেকেই উৎপাদিত দড়ি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এলাকার বিভিন্ন পাইকারী ব্যবসায়ীরা।

কারখানায় গেলে দেখা যায়, মুল উদ্যোক্তা সামছুল আলম শান্তি ও তার পরিবারের আরও দুই সদস্য দড়ি তৈরীতে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ সময় কথা হয় সামছুল আলম শান্তির সাথে। তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রবাস জীবন পার করে দেশে এসে এই ছোট কারখানাটি প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরী করেছি। অর্থ অভাবে এর পরিধি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

কারখানা বৃদ্ধি পেলে দড়ি তৈরী হবে বেশি আবার এখানে অনেকেরই কর্মসংস্থান হবে। তিনি বলেন, কারও কাছে শিখে বা প্রশিক্ষন না নিয়ে নিজের ইচ্ছা শক্তিতে এই শিল্পকে আমি দাঁড় করিয়েছি। ২০১৮ সালে এর যাত্রা শুরু আজ অবাধি বেশ ভাল ভাবেই চলে আসছে। দড়ি তৈরীর জন্য প্রয়েয়াজনীয় সুতা তিনি ঢাকা নারায়নগঞ্জ থেকে ক্রয় করেন।

একাধিক নাইলনের সুতা মেশিনের মাধ্যমে একত্রিত করে তৈরী করা হচ্ছে শক্ত মজবুদ দড়ি। অত্যান্ত মজবুত এই দড়ি মুলত ট্রাকের মালামাল বাধাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হয়। বাজারে এই সুতার যথেষ্ঠ চাহিদা থাকায় দামও মোটামুটি ভাল। তিনি জানান, প্রতিদিন পরিবারের ৩ জন সদস্য কাজ করি। সারা দিনে ৮০ থেকে ১শ কেজি দড়ি তৈরী করি। বাড়ি থেকেই পাইকারী ১ কেজি দড়ি ১শ টাকায় ক্রয় করে নিয়ে যান। খুচরা বাজারে এর দাম দ্বিগুন বলে তিনি জানান। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে যা থাকে তাতেই বেশ ভাল ভাবে চলে সংসার।

সামছুল আলম শান্তি বলেন, বসত বাড়িতে ১৯ শতাংশ জমির কিছু অংশ নিয়ে তৈরী করা হয়েছে এই কারখানা। সুতা থেকে দড়ি তৈরীর জন্য মুলত ৩টি অত্যাধুনিক মেশিন আর ৩টি বিদ্যুৎ চালিত মটর ব্যবহৃত হয়। এই শিল্প নিঃসন্দেহে একটি লাভজনক ব্যবসা, তবে দরকার যথেষ্ঠ পুঁজি। সরকার থেকে যদি সহজ শর্তে কোন ঋন পাওয়া যেত তাহলে কারখানার পরিধি আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব হত। এ ধরনের ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাকে সরকারের পক্ষ হতে সার্বিক সহযোগীতা দিয়ে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব বলে মনে করছেন উপজেলার সচেতন মহল।