রামগতি উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা শরাফ উদ্দিন আজাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন বরাদ্দকৃত প্রকল্পের কাজ না করা এবং নিজের ইচ্ছেমতো প্রকল্প প্রস্তাব করাসহ প্রকল্পের টাকা উঠিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় তাঁর বিরেুদ্ধে ফুসে উঠেছে উপজেলার অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা।

প্রতিবাদে বুধবার উপজেলার মাসিক উন্নয়ন সভা বর্জন এবং বৃহস্পতিবার তাঁর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। উপজেলার আলেকজান্ডার বাজারে আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে উপজেলার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত সম্মেলনে তাঁর অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রাহিদ হোসেন।

এতে উপস্থিত ছিলেন রামগতি পৌরসভার মেয়র এম মেজবাহ উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ, চর আলগী ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন, চর আবদুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন, চর পোড়াগাছা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন প্রমুখ।
তবে চেয়ারম্যান আজাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো তদন্ত করার দাবি জনিয়েছেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান নিজেই। তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাহিদ হোসেন বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ পরিষেদের প্রত্যেকটি কাজ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়মতান্ত্রিক ও অনৈতিভাবে করে থাকেন। পরিষদের সভায় কোন বিষয় নিয়ে আলেচনা না করে গোপনে তা রেজুলেশন অন্তভূক্ত করেন।

২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রাজস্ব খাতের ২১ লাখ টাকার ৭টি প্রকল্প দেখিয়ে জালিয়াতি করে আত্মসাৎ করেছেন। একই অর্থ বছরে এডিপি’র অর্থায়নে উপজেলা পরিষদের গেট নির্মাণের জন্য ১০ লাখ টাকার টেন্ডার হয়। কিন্তু গেট নির্মাণের এখনো হয়নি। ওই টাকার কোন হদিসও নেই। এছাড়া চেয়ারম্যান ২০১৯-২০ অর্থ বছরে রাজস্ব খাতের ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করেন উপজেলার ডাক বাংলো নির্মাণের জন্য। কিন্তু এ বিষয়ে পরিষদের অন্য সদস্যদের সাথে কোন আলোচনা করেননি তিনি। কোথায় ডাক বাংলো নির্মাণ করা হবে তাও জানেন না সদস্যরা।

ওই অর্থ বছরের এডিপি’র বরাদ্দকৃত ৭৩ টি প্রকল্পের এক কোটি ১২ লাখ টাকার কাজ নিজের পছন্দের লোক দিয়ে নামমাত্র কাজ করে অর্থ উঠিয়ে নিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এডিপি’র তালিকায় দেখা যায় কয়েকটি কাজ সমাপ্ত উল্লেখ করা আছে। কিন্তু প্রকল্প কখন গ্রহণ করা হয়েছে এবং কখন শেষ করা হয়েছে তা জানে না পরিষদের সদস্যরা।

২০১৯ সালে চেয়ারম্যান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামত ও সংস্কার কাজের টাকা থেকে এবং ৮টি সরকারী স্কুল থেকে প্রায় ৩০/৩৬ হাজার টাকা সুপেয় পানির কথা বলে নিয়েছেন। কিন্তু সরকারী নীতিমালায় এক খাতের অর্থ অন্যখাতে নেওয়ার সুযোগ নেই। উপজেলা পরিষদের বৈদ্যুতিক কাজের সংস্কারের নামে বরাদ্দকৃত এক লাখ টাকা হাতিয়েছেন চেয়ারম্যান।

উপজেলা পরিষদ এলাকায় ডোবা বা গর্ত ভবাটের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ হলে চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদের পুকুর থেকে অবৈধভাবে ড্রেজিং এর মাধমে বালু উত্তোন করে গর্ত ভরাট করেন। উপজেলা পরিষদের মধ্যে থাকা সরকারী ১৪/১৫ টি গাছ করে বিক্রি করে সমালোচনার মূখে পড়েন চেয়ারম্যান আজাদ। পরে কয়েকটি গাছের টুকরো উপজেলা প্রশাসন জব্দ করে। তবে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

সর্বশেষ চলতি অর্থ বছরে জাপান-আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) বরাদ্দকৃত ৫০ লাখ টাকা অর্থের ৫টি প্রকল্প দেখান চেয়ারম্যান। বুধবার উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় ওই প্রকল্পগুলোর বিষয়টি উপস্থাপন করেন চেয়ারম্যান আজাদ। এতে ক্ষোভ দেখা দেয় পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে। তারা সভা বর্জন করে চেয়ারম্যানের দুর্নীতির প্রতিবাদ জানান।

ইউপি চেয়ারম্যানরা দাবি করেন, কোন আলোচনা ছাড়াই নিজের ইচ্ছেমোতা প্রকল্প দেখিয়ে জাইকার এ ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। তাদের দাবি, পূর্বের বরাদ্দকৃত প্রকল্পগুলোর কোন হদিস নেই। এমন কিছু প্রকল্পে টাকা বরাদ্ধ করা হয়েছে, টাকার পরিমাণের সাথে কাজের অসংগতি রয়েছে। চেয়ারম্যান আজাদ বিধবা ভাতা, বয়ষ্ক ভাতা, পঙ্গু ভাতাসহ সকল ভাতা প্রদানে তালিকা প্রণয়নে সরকারী নির্দেশনা উপক্ষো করে কৌটা এবং ইউনিয়ন পরিষদের কাজ থেকে পার্সেন্টিজ দাবি করেন।

এছাড়া ভিজিডি, ভিজিএফ, মৎস্যজীবিদের চাল ও সরকারী বরাদ্দকৃত ক্রাণ, গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরও দাবি করেন তিনি। দরিদ্রদের ঘর দেওয়ার কথা বলে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ করেন ইউপি চেয়ারম্যানরা। তার নিজ দলীয় বিএনপি কর্মীদের ঘর দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেন উপজেলা চেয়ারম্যান।

তাঁরা এও অভিযোগ করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় সরকারী কোন অনুষ্ঠানের যোগ দেন না। ১১ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে “অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ শীর্ষক’’ আলোচনা সভায় ইচ্ছাকৃতভাবে যোগ দেননি চেয়ারম্যান। ওই অনুষ্ঠানে তাকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিলো।

এছাড়া, করোনাকালীন সময়ে সরকারী বরাদ্দে ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং অপ্রত্যাশিত খাতের এক লাখ ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন তিনি। উপজেলার সাধারণ জনগণকে করোনাকালীন কোন সহায়তার না করার অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগের তদন্ত দাবি করেন।

তিনি বলেন, তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে কারা দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত। আমি উপজেলা পরিষদের অন্য সদস্য এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে অনিয়মের কথা বলায় তারা এখন আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে। তিনি বলেন, প্রকল্পের কোন অর্থ উত্তোলন করতে হলে ইউএনও এবং উপজেলা প্রকৌশলীর স্বাক্ষর লাগে। তাহলে আমি এককভাবে কিভাবে প্রকল্পের অর্থ উঠিয়ে নেব? যে সব প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে, সেগুলো সঠিক নয়।

দেশদর্পণ/আক/একে/এমএএস