ব্যক্তি অপরাধের দায় সমগ্র পুলিশ বাহিনীর উপর চাপানো হচ্ছে কেন?

এই সেই পুলিশ বাহিনী মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যার রয়েছে গৌরবোজ্জল ইতিহাস। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ট্যাংক, কামান, সাঁজোয়া যান এবং ভারি মেশিনগান এর বিপরীতে পুলিশের থ্রি নট থ্রি রাইফেল গর্জে উঠেছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রথম বুলেটটি ছুড়েছিল রাজারবাগের অকুতোভয় পুলিশ সদস্যরা। দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গের আগে বীরোচিত লড়াই করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল। বাংলাদেশ পুলিশের এই সদস্যরাই আমরা সবাই যখন শান্তিতে ঘুমায় তখন তারা রোদ-বৃষ্টি, ঝড়, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের আরাম এবং শান্তির জন্য তারা অবিরাম তাদের দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে চলে। মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ সদস্যরা সদা জাগ্রত এবং তৎপর। পচা, গলিত দুর্গন্ধযুক্ত, অসনাক্তকৃত লাশ যখন রাস্তায়, কাদার মধ্যে, নর্দমায় পড়ে থাকে তখন কিন্তু কেউ এগিয়ে আসে না, এই অপাংক্তেয় পুলিশ ভাইয়েরাই কিন্তু সেই লাশটি সেখান থেকে তুলে নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তারা রিপোর্ট তৈরি করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করে।

আরও পড়ুন:
এইচএসসি পরীক্ষা হচ্ছে সেপ্টেম্বরে!
নতুন ছবিতে ২০ লাখ চাইলেন মিম!
বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ৭ লাখ ৩৯ হাজার ছাড়াল

কক্সবাজারের ঘটনায় সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, এ ঘটনায় ব্যক্তি জড়িত কোন বাহিনী নয়। তারপরও সমগ্র পুলিশ বাহিনী নিয়ে বিভিন্ন মহল বিদ্বেষমুলক আচরণ করছে। গঠনমুলক সমালোচনা না করে ঢালাওভাবে পুলিশ বাহিনীকে দোষারোপ করা হলে পুলিশ সদস্যরা কাজের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। সমালোচনার পাশাপাশি ভালো কাজের প্রশংসা করুন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করার মন্ত্রে সবার একমত হওয়া উচিত বলে মনে করেন বিষেশজ্ঞরা।

পুলিশের প্রতি কিছু মানুষের এতো বিদ্বেষ কেন? যারা বিদ্বেষ করছে তারা প্রকৃতপক্ষে বহির্বিশ্বের দালাল। তারা বিভিন্ন ধরণের উস্কানিমুলক বক্তৃতা দিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। তাদের দাবার চাল বুঝা কষ্ট। এখানেও দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র আছে। তবে এদেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। মনে রাখবেন দেশের মানুষও বুঝে।

মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে সম্মুখযোদ্ধা হিসাবে লড়াই করছেন বাংলাদেশ পুলিশ। সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখা এবং নিরাপত্তার বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, অসুস্থ রুগিকে হাসপাতালে নেওয়া, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিবার এবং প্রতিবেশীর সুরক্ষায় হোমকোয়ারেন্টাইন নিশ্চত করা, এমনকি করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফনও করেছে পুলিশ। আমরা তো তাই-ই দেখছি।

ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সহ সমগ্র বাংলাদেশের পুলিশকে দেখেছি মৃত্যুকে উপেক্ষা করে জীবনবাজি রেখে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করতে।

ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ করোনাকালে ঈমাম মোয়াজ্জেম, পুরোহিত সেবায়েত, শ্রমিকসহ সকল নিম্নআয়ের মানুষের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। রাতের বেলা খাবার নিয়ে জেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটছেন। অশান্ত জনপদ এখন শান্ত হয়েছে শুধু এই পুলিশেরই কারনে।

করোনাকালে মানুষকে যখন ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে ঠিক সেই সময়ে মানুষকে সেবা দিতে রাস্তায় নেমে এ পর্যন্ত সারাদেশে সাড়ে ১২ হাজার পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন প্রায় অর্ধশত। ঝিনাইদহে শরিফুল ইসলাম নামে একজন টিএসআই ও দলিল উদ্দিন বিশ্বাস নামে একজন এএসআই করোনায় জীবন দিলেন। মানুষের সেবায় রাস্তায় বের না হলে তাদের কিন্তু জীবন দিতে হতো না।

শুধু করোনাকালে নয়-সন্ত্রাস, মাদক, বাল্যবিবাহ, জঙ্গী দমনসহ দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে রয়েছে পুলিশের অনেক অবদান। দেশের যে কোন নাগরিক ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে ২৪ ঘন্টা পুলিশের সেবা পাচ্ছেন। পুলিশ ছাড়া তো কোথাও চলে না। এই তো গত বছর পুলিশে লোকবল নিয়োগ হলো। সেখানে মাত্র ১০১ টাকা খরচে চাকরি হলো । মানবিকতার হাত বাড়িয়ে এ ধরণের অসংখ্য কাজ করায় পুলিশ দেশের মানুষের প্রশংসাও কুড়িয়েছে ব্যপক। পুলিশের একই চিত্র খুলনা বিভাগের ১০ জেলাসহ সারাদেশে। এতো কিছুর পরও দু’একটি ঘটনা নিয়ে সমগ্র পুলিকে দোষারোপ করা হচ্ছে কেন? কেন এতো বিদ্বেষ? এ প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ব্যাংকের টাকা হাওয়া, শেয়ার কেলেংকারিসহ ঘুষবাণিজ্যের ঘটনা ঘটছে, কারোর কিছু হয়না। পুলিশের একটু কিছু হলেই বিভিন্ন মহল উত্তেজিত হয়ে পড়ে। মিডিয়াও লেগে যায়।

এই তো ঝিনাইদহের ৭ অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প রাখা না রাখা নিয়ে ওয়ার্কশপ হচ্ছে। উপকারভোগিরা পুলিশ ক্যাম্প রাখার জন্য হাউমাউ করছেন। পুলিশতো মানুষের যানমালের নিরাপত্তা দিতে সব সময় মানুষের কাছাকাছি থাকে। তাহলে কেন এতো বিষাদগার করেন? টেন্ডারবাজি করে কোটি কোটি টাকার লুটপাট চোখে পড়ে না? যারা ১ কেজি চালের জন্য রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতো, বাইসাইকেল চড়ে বেড়াতো, মাঝে মধ্যে মোটরসাইকেলেও চড়তো, এখন দুর্নীতি করে কোটি টাকার গাড়ি চড়ে বেড়ায় দেখেন না? এতা বড় বড় আলীশান বাড়িও চোখে পড়ে না? যারা জনগণের পাশে থাকেন সবসময় তাদের পিছনে না লেগে আসুন সবাই দুর্নীতির লুটপাটের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।

ব্যক্তি অপরাধ করলে সে দায় ওই ব্যক্তিরই পৌছায়। সারা বাহিনীর নয় …….

লেখক:
এম. রায়হান, গণমাধ্যমকর্মী, ঝিনাইদহ ।

১২ আগস্ট, ২০২০ at ১৭:৩২:২৩ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এম.আর/তআ