কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর মরিচা ডিগ্রি কলেজের সভাপতি পদ থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমনকে বরখাস্ত করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমনের বিরুদ্ধে কলেজ কর্তৃপক্ষের অানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ওই কলেজের ম্যানেজিং কমমিটির সভিপতি পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে পদাধিকার বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সংক্রান্ত একটি চিঠি কলেজটির অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নানের হাতে এসে পৌঁছেছে। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তারের কাছে ওই চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর ড. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত আইএনএস ০২-৪/০০০০৪/২০১৬/১০১৬ স্মারকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত কলেজ/ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের গভর্নিং বডি (সংশোধিত) সংবিধি ২০১৯ এর ৭ ধারা অনুযায়ী গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি এ্যাড. শরীফ উদ্দিন রিমন-এর মনোনয়ন প্রত্যাহার পূর্বক তদস্থলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া-কে সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হলো।’
দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর মরিচা ডিগ্রি কলেজের সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমনের উদাসীনতায় ওই কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা ঈদুল আজহার উৎসব ভাতা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন। এ ঘটনায় কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে সম্প্রতি কলেজটির ৫৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে সভাপতির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
এর আগে ওই কলেজের অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজ সভাপতি অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমন ও কলেজ অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নানের মধ্যে নীতিগত দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। একপর্যায়ে চরম ক্ষুব্ধ হন অ্যাডভোকেট রিমন। তিনি অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নানকে মোবাইল ফোনে গালাগাল করেন এবং সপ্তাহে একদিন করে পেটানোর হুমকি দেন। পরে ওই ফোনআলাপ ফাঁস হয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ আগস্ট এ অঞ্চলের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল দৌলতপুর টোয়েন্টিফোরসহ আরো বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর বের হলে কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমন সাংবাদিকদের ওপরেও প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এর জেরে গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় সাংবাদিকদের নানাভাবে শায়েস্তা করার হুমকি দেয়া হয়।
খবর প্রকাশের চারদিন পর সোমবার (১০ আগস্ট) কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমনের পক্ষে দুই সাংবাদিক ও কলেজ অধ্যক্ষের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (আইসিটি) হয়রানিমূলক মামলা করা হয়। অ্যাডভোকেট রিমনের পক্ষে তার ভাগ্নে ওয়ালিউল আলম শাওন বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন। মামলায় প্রধান সাক্ষী হয়েছেন কলেজ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমন।
আইসিটি আইনের ২৪, ২৫, ২৯, ৩১ ও ৩৫ ধারায় দায়ের করা হয়রানিমূলক এই মামলার আসামিরা হলেন- দৌলতপুর টোয়েন্টিফোরের সিইও সাংবাদিক তাশরিক সঞ্চয়, কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রতিজ্ঞার বার্তা সম্পাদক নাজমুল হোসেন। মামলাটিতে কলেজ অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নানকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আদালত পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে সাংবাদিকদের নামে আইসিটি আইনে দায়ের করা এই উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও হয়রানিমূলক মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দৌলতপুর উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা। মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) বেলা ১২টায় উপজেলার সর্বস্তরের সাংবাদিকরা মামলাটি প্রত্যাহারের দাবিতে উপজেলা পরিষদ বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
এই মানববন্ধন থেকে সাংবাদিকদের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য একদিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়। বুধবারের মধ্যে মামলাটি প্রত্যাহার করা না হলে আগামী শুক্রবার (১৪ আগস্ট) উপজেলা পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের পাদদেশে এখানকার সর্বস্তরের সাংবাদিকদের নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা করা হয়। সেখান থেকে পরবর্তী বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।