বেনাপোল কাস্টমসের লকার ভেঙ্গে স্বর্ণ চুরি: ১০ মাসেও রহস্যের কুলকিনারা হয়নি

যশোরের বেনাপোল কাস্টমসের লকার ভেঙ্গে ১৯ কেজি ৩শ’ ৭৫ গ্রাম স্বর্ণ চুরির রহস্যের কুলকিনারা হয়নি। দীর্ঘ ১০ মাস পার হলেও এখনো পর্যন্ত চুরি হওয়া স্বর্ণগুলো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

তবে এ ঘটনায় আজিবর ও শাকিল নামে দুই জনকে আটক করেছে যশোর সিআইডি পুলিশ। এ দিকে কাস্টমসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরে এখনো বহিরাগতদের দাপট থাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আবারো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে থেকে এ স্বর্ণ চুরির ঘটনায় একেবারে সরকারী নিম্ন শ্রেনীর কর্মচারী বরখাস্থ ও এনজিও কর্মী একজন এবং একজন বহিরাগতকে জেল হাজাতে পাঠালেও রাঘব বোয়ালরা রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে।

অপরদিকে কাস্টমস কমিশনার বেলাল হুসাইন চৌধুরীর আমলে এই স্বর্ণ চুরি হলেও তিনি সম্প্রতি বদলী হয়েছেন। স্বর্ণ চুরির কোন কুল কিনারা তিনি থাকতে যখন রহস্য উন্মোচিত হয়নি। তখন আর কি হবে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।

তবে একটি সুত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই লকারে যারা আগে দায়িত্ব ছিল তাদের ও জিজ্ঞাসাবাদের আওয়াতায় আনলে সব বের হয়ে যাবে। এর মধ্যে বিশ্বনাথ কুন্ডুকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন রয়েছে।

বিষয় নিয়ে সাবেক এআরও বিশ্বনাথ কুন্ডুর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বেনাপোল থাকা কালে আমার পর আরোও তিনজন ওই লকারের দায়িত্ব পালন করেন। আর আমি নিয়ম অনুযায়ী বুঝিয়ে দিয়েছি।

ওই লকারের দায়িত্বে আমি ১৯/০৯/১৭ থেকে ১৬/০৯/১৮ তারিখ পর্যন্ত ছিলাম। এরপর আমি এ আরও মোঃ ওয়ালি উল্লাহকে দায়িত্ব বুঝে দিয়ে ১৩/০১/১৯ তারিখে কাগজপত্র বুঝে নেই। এই ধারাবাহিকতায় পর পর তিনজন এ আরও ওখান থেকে বদলী হয় আমি বেনাপোল থাকা কালে।

এরপর আমি বেনাপোল থেকে বদলী হয়ে ঢাকা চলে আসলে শুনেছি সেখানে সাহবুর সরদার নামে একজন এআরও দায়িত্ব পালন কালে এ চুরি সংঘটিত হয়েছে। এর দায় আমার নয়।

জানা যায়, বেনাপোল বন্দরে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে জব্দ করা স্বর্ণসহ মূল্যবান সম্পদ জমা রাখা হয় কাস্টমস হাউজের লকারে। গত ৯ নভেম্বর লকার থেকে চুরি হয় ১৯ কেজি ৩ শ’ ৭৫ গ্রাম স্বর্ণ। তবে লকারে থাকা আরো স্বর্ণ, বৈদেশিক মুদ্রা ও অন্যান্য সম্পদ অক্ষত অবস্থায় ছিল।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, সিসি ক্যামেরার নিরাপত্তার মধ্যে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এখন তথ্য-প্রযুক্তির সময় প্রশাসন যদি আন্তরিক হয়ে কাজ করে চোর ধরা কোনো কঠিন কাজ হবে না।

বেনাপোলের ব্যবসায়ীরা বলেন, কাস্টমসে অবৈধ প্রবেশ রোধ করতে হবে। প্রয়োজনে রেজিস্টার ও ফিঙ্গার প্রিন্ট সিস্টেম চালু করা যেতে পারে। কাস্টমসের অবহেলার কারণে সরকারের এ সম্পদ চুরির ঘটনা ঘটতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে সরকারের এত বড় সম্পদ এভাবে রাখা উচিত নয়। মূল অপরাধীদের ধরতে না পারলে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে আরো বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার নেয়ামুল ইসলাম বলেন, স্বর্ণ চুরির ঘটনা কাস্টমসের সব অর্জনকে যেন অম্লান করে দিয়েছে। চোরকে দ্রুত ধরা দরকার যেন আর কেউ ভবিষ্যতে সরকারের কোনো সম্পদ চুরি করতে সাহস না পায়।

বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান বলেন, এখন পর্যন্ত চুরি হওয়ার স্বর্ণগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে মামলাটি পোর্ট থানা থেকে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন তারা বিষয়টি দেখছে।

এ বিষয় যশোর সিআইডি ইন্সপেক্টর জাকির হোসেন বলেন, ওই মামলায় দুইজন আটক হয়েছে। তারা জেল হাজতে রয়েছে। আমি বদলী হয়েছি অন্য ইন্সপেক্টর এর কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি।

দেশদর্পণ/আক/এমও/এমএএস