৬০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকা বরাদ্ধ

অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবুর প্রচেষ্ঠায় প্রশস্থ ও সরলীকরণ হচ্ছে কয়রা-পাইকগাছা-বেতগ্রাম সড়ক। ৩৩৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্ধের ৬০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি ইতোমধ্যে একনেক-প্রি একনেক থেকে অনুমোদন হয়ে বর্তমানে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

টেন্ডারের তিন ভাগের প্রথম অংশ ৪ আগষ্ট আহবান করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় সড়কের ৪১ টি বাঁক সরলীকরণ ও দুই পাশে ৩ ফুট করে প্রশস্থ করা হবে। নির্মাণকাজ শেষ হলে এটি হবে অত্র এলাকার মানুষের স্বপ্নের সড়ক। উন্নয়ন প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবুকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সুত্রমতে-আঠারো মাইল (বেতগ্রাম) থেকে কয়রা পর্যন্ত সড়ক ও জনপদ বিভাগের ৬০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। সড়কটি অত্র এলাকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। কয়রা-পাইকগাছা ও তালা উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ জেলা ও রাজধানী শহরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে অত্র সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকে।

অত্র এলাকা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া স্বত্তেও অত্র সড়কটি ছিলো দীর্ঘদিন অবহেলিত। বিগত কয়েকবছর আগে সংস্কারের অভাবে সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ার উপক্রম হয়। সড়ক সংস্কারের দাবীতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন করে এলাকাবাসী।

জনগুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়কটি এলাকার অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। সড়কের বেহাল অবস্থার কারনে দলমত নির্বিশেষে এলাকার সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

সড়কটি সংস্কারের জন্য এলাকাবাসীর প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে তৎকালিন সংসদ সদস্য (সদ্য প্রয়াত) আলহাজ্ব এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হকের প্রচেষ্ঠায় সড়কটি মানসম্মতভাবে সংস্কার করা হয়। সড়কটি সংস্কার করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় প্রশস্থ না হওয়ায় এবং সড়কের অসংখ্য স্থানে বাঁক থাকায় চলাচলে দূর্ভোগ থেকে যায়।

অবশেষে বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবুর প্রচেষ্টায় কয়রা থেকে বেতগ্রাম পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। আওয়ামীলীগের তরুন এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচনী এলাকার পাইকগাছা-কয়রার উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। যার মধ্যে প্রধান সড়ক উন্নয়নের বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়।

সংসদ সদস্যের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ৬০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ৩৫৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বর্ষা মৌসুম শেষে উন্নয়ন কাজ শুরু হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে সড়কটি হবে অত্র এলাকার মানুষের স্বপ্নের সড়ক।

বাস মিনিবাস মালিক সমিতির পাইকগাছা রোড কমিটির সদস্য সচিব মোাঃ আব্দুল গফফার মোড়ল জানান-কয়রা-পাইকগাছা খুলনা রুটে আমাদের ২২০ টি মত বাস রয়েছে। সময়ের ব্যবধানে অন্যান্য যানবাহনও বেড়েছে।

সে অনুযায়ী সড়কটি উপযোগী না হওয়ায় অনেক ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনসহ সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হয়, ফলে প্রতিনিয়ত ঘটে দূর্ঘটনা। সড়কটি প্রশস্থ ও সরলীকরণ হলে যানবাহনসহ সাধারণ মানুষের যাতায়াত নিরাপদ হবে।

পরিবহণ স্ট্যান্ড কমিটির কোষাধ্যক্ষ শাহাজান কবির জানান-ঢাকা রুটে চলাচলের জন্য আমাদের ২২টি পরিবহন রয়েছে সাধারণ বাসের তুলনায় পরিবহন বড় হওয়ায় অত্র সড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় চরম দূর্ভোগে পড়তে হয়।

বিশেষ করে সড়কে এমন কিছু কিছু বাঁক রয়েছে যেখানে সামনে কিছু দেখা যায় না। অনেক ঝুঁকির মধ্যে পরিবহনগুলো চলছে। সড়কটি উন্নয়ন হলে দূর্ঘটনা বহুঅংশে কমে আসবে। পাইকগাছা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর জানান সড়কটি সংস্কারের জন্য এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছি।

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সড়কটি প্রশস্থ ও বাঁক সরলীকরণ হতে যাচ্ছে জানতে পেরেছি। এমন একটি সড়ক আমাদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিলো। উন্নয়ন প্রকল্পটি মানসম্মতভাবে দ্রুত বাস্তবায়ন হোক এমনটাই নাগরিক কমিটির প্রত্যাশা।

নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের দক্ষিনা ল শাখার সভাপতি এএইচএম শফিউল ইসলাম জানান-এক সময় অত্র সড়কটি মরণফাঁদে পরিণত হয়, বহু মানুষের প্রাণ দিতে হয়েছে এ সড়কে, আমরা চাই সড়কের উন্নয়ন কাজ দ্রুত শুরু করা হোক। আর যেন কাউকে মৃত্যুর মিছিলে শামিল হতে না হয়, এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।

সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন-সংসদ সদস্য হিসেবে আমার পরিচয় নতুন হলেও আমি দীর্ঘদিন পাইকগাছা-কয়রার মানুষের সাথে মিশে রয়েছি। এখানকার প্রতিটি জনপদ আমার রাজনৈতিক জীবনের সাক্ষী। অত্র এলাকার সকল সমস্যা আমার জানা রয়েছে।

এলাকার মানুষের সেবা করার প্রত্যয় নিয়ে যেমন দীর্ঘদিন রাজনীতি করছি, তেমনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সেবার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচিত হওয়ার পর একটি আধুনিক পাইকগাছা-কয়রা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এলাকার উন্নয়নে মহা পরিকল্পনা গ্রহণ করি।

যার মধ্যে অত্র এলাকার বেড়িবাঁধ ও যাতায়াতের প্রধান সড়ক উন্নয়ন করা জরুরী মনে হয়েছে এবং সে লক্ষ্যেই বেঁড়িবাঁধ নির্মানে যেমন মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, তেমনি সড়ক উন্নয়নেও প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

কয়রা-পাইকগাছা-বেতগ্রাম সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন শেষে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ৩টি ভাগে এ টেন্ডার আহবান করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় ৬০ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে ৩ ফুট করে প্রশস্থ হবে, এছাড়া সড়কের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৪১টি বাঁক সরলীকরণ করা হবে।

এর জন্য ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ প্রকল্পে ৭২ লাখ টাকা ধরা রয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলে বর্ষা মৌসুম শেষে নির্মাণ কাজ শুরু হতে পারে বলে ধারনা করছি। নির্মাণ কাজ শেষ হলে এটি হবে অত্র এলাকার মানুষের স্বপ্নের সড়ক।