চৌগাছায় উপজেলা চেয়ারম্যানসহ করোনায় আক্রান্ত ১১, মারা গেছেন একজন

যশোরের চৌগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সহ নতুন করে আরও ১১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে একজন রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন। উপজেলায় হঠাৎ করেই করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। তবে ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে এখনও সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে দেখা যায়নি। বাজারে আসা অধিকাংশ মানুষকেই মুখে নেই মাস্ক, কোন ক্রমেই মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এই ভাব অব্যহত থাকলে মানুষকে চরম ভয়াবহ অবস্থা ভোগ করতে হতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ আগষ্ট চৌগাছা থেকে মোট ১৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য যশোরে পাঠানো হয়। ৬ আগষ্ট বৃহস্পতিবার এর মধ্য হতে ১১ জন ব্যক্তির শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে অন্যতম হলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মৃধাপাড়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড.এম মোস্তানিছুর রহমান। বর্তমানে তিনি নিজ বাড়িতে আইসলোশনে আছেন।
এছাড়া আক্রান্ত অন্যরা হলেন চৌগাছা হাসপাতালের ২ জন স্বাস্থ্যকর্মী, চৌগাছা পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের স্বামী স্ত্রী, স্বরুপদাহ ইউনিয়নের এক ব্যক্তি, সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মচারী, চৌগাছায় বসবাসকারী পাশ^বর্তী ঝিকরগাছা উপজেলার ২ ও কেশবপুর উপজেলার ১ জন করোনায় আক্রাস্ত হয়েছেন। আক্রান্ত সকলেই নিজ নিজ বাড়িতে আইসলোশনে আছেন।

এছাড়া ৩ আগষ্ট পৌর এলাকার বিশ্বাসপাড়া মহল্লার নিছার উদ্দিনের ছেলে ফল ব্যবসায়ী আনিছুজ্জামানের (৪৫) নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানোর একদিন পর অর্থাৎ ৪ আগষ্ট তিনি মারা যান। তার শরীরেও করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে বলে হাসপাতাল সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
এ দিকে চৌগাছার সর্বত্রই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। হাসপাতাল থেকে শুরু করে ক্লিনিক, ব্যাংক, বীমা, বিদ্যুৎ অফিস, এনজিও অফিস, হাট বাজারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মাছ বাজার, সবজি বাজারসহ সর্বত্রই স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই নেই।

মানুষ যে যার মত চলছে, গায়ে গা ঘেষে কেনাকাটা ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে দাঁড়িয়ে থাকা, এনজিও এবং বিদ্যুৎ অফিসের টাকা পরিশোধ করতে যেয়ে মানুষ এভাবেই স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করছেন। অধিকাংশ মানুষের মুখে নেই মাস্ক। একই অবস্থা চায়ের দোকান, মিষ্টির দোকান গুলোতে, মানুুষ যাচ্ছে একই টেবিলে একই প্লেট-গ্লাসে খাবার খেয়ে তারা বের হচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না কোন গনপরিবহনে। যাত্রীবাহি বাসগুলোতে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী বসানো হচ্ছে, ইজিবাইক, থ্রিহুইলার, নছিমন করিমন ও ভ্যানের অবস্থা আরও ভয়াবহ। এ সব বাহনের অধিকাংশ যাত্রী এমনকি চালকের মুখে নেই মাস্ক তারা কোন স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বলে জানান স্থানীয়রা। বাহনগুলো প্রতি দিনই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটে বেড়াচ্ছেন।

মানুষের চলাচলের অবস্থা দেখে বোঝার কোন উপাই নেই যে মহামারি করোনা ভাইরাস নামক একটি ব্যাধি সকলের পিছু তাড়া করছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফুন্নাহার নতুন করে ১১ জন আক্রান্ত ও একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে সকলকে সচেতন হওয়ার বিকল্প কিছুই নেই। ঘরের বাইরে এলে মুখে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকলের চলাচলের পরামর্শ দেন তিনি।

যশোরের সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ আবু শাহিন বলেন, করোনা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের সকলকে আরও সচেতন হতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া উত্তম, যারা বাইরে আসব সকলেই মুখে মাস্ক পরবো এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলব। এটি নিয়মিত করতে পারলে আমরা করোনাকে জয় করতে পারব ইনশাল্লাহ।