বীরগঞ্জে দুই শতাধিক গাছ লাগিয়ে নিজেই পরিচর্চা করেন ইউএনও মো. ইয়ামিন হোসেন

শৌখিন মানুষেরা তাদের ঘরবাড়ির আশেপাশে প্রকৃতি আর সবুজকে ধরে রাখার জন্য নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন ঘটান। গাছপালা, শাক-সবজি আর ফুলের বাহারে ভরে তোলেন নিজস্ব আঙ্গিনা। পাখিদের কলকাকলি ছড়িয়ে দেন চারপাশে। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ এর বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইয়ামিন হোসেন তেমনই একজন শৌখিন মানুষ। তিনি তার সরকারি বাসভবনের পেছনের পরিত্যক্ত জায়গায় এমনই এক পরিবেশ গড়ে তুলেছেন, প্রকৃতির আলোতে আলোকিত করেছেন এলাকা।

২০১৯ সালের শেষ দিকে নিজ উদ্যোগে নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরকারি বাসভবন এর পিছনের পরিত্যক্ত পুকুর নতুন করে খনন করে পাড় বাঁধাই করে পুকুরে মাছ ছাড়া, পুকুরের পাড়ে বিলুপ্তপ্রায় ৪২ প্রজাতির গাছ রোপন, ফুলের গাছ রোপন, সবজি বাগানসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে এলাকার চেহারাই পালটে দিয়েছেন। গাছগুলো রক্ষার জন্য বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করেছেন, তৈরি করেছেন সুদৃশ্য পুকুর ঘাট। সময় পেলেই তিনি নিজেই এর পরিচর্যা করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পুকুর পারে বিলুপ্তপ্রায় জাফরান, তমাল, কাঠবাদাম, অশোক, পলাশ, সাদা কাঞ্চন, বেগুনি কাঞ্চন, সোনালু, লটকন, ডেউয়া, ডুমুর, আমলকি, হরতকি, বহেরা, কদবেল, বেল, আমড়া সহ অন্তত ৪২ প্রজাতির প্রায় দুই শতাধিক গাছ রোপন করেছেন ইউএনও মো. ইয়ামিন হোসেন। পুকুরে ছেড়েছেন নানান প্রজাতির মাছ। শখের বশে পুকুরপাড়ে রাজহাস, পাতিহাস আর খরগোশ ও পালন করেন। সবজি বাগানে লাউ, টমেটো, ঢেড়স, কাঁচামরিচ, গাজর, শিম, মিষ্টিকুমড়া, পুই শাক, লাল শাকসহ সম্ভব সব সবজিই ফলান।

শখের বশে করেছেন চা আর কলার বাগানও। সঠিকভাবে দেখাশোনা করা আর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য তিনি পুকুরের চারদিকে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করেছেন। নিয়মিত এগুলো পরিচর্যা করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থাও করেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, আমি কিছুটা স্বপ্নাতুর মানুষ। আমি স্বপ্ন দেখি আমার বাসার চারদিক প্রকৃতির দখলে থাকবে, আমার সন্তান মানুষ হবে প্রকৃতির কোলে। আমি নিজের ভাললাগা থেকেই এ কাজ করেছি।

আমি আশা করি আজ থেকে ১০ বা ১৫ বছর পরে এই পুকুরপাড়ের গাছপালা নিয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা গবেষণা করবে, বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ রক্ষা পাবে, অক্সিজেন এ ভরে যাবে এলাকা, পাখিদের দখলে থাকবে চারপাশ, প্রকৃতি পাবে প্রাণ। আমি হয়তো থাকবো না, আমার স্মৃতিটুকো এর মাধ্যমেই বেঁচে থাকবে।