কলেজ সভাপতির গোমড় ফাঁস করলেন অধ্যক্ষ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর মরিচা ডিগ্রি কলেজের সভাপতির গোমড় ফাঁস করে দিয়েছেন কলেজটির অধ্যক্ষ। ওই কলেজে গত ১০ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমন। ঈদুল আজহায় সভাপতির অসহযোগিতাপূর্ণ আচরণে কলেজটির শিক্ষক-কর্মচারীরা উৎসব ভাতা না পাওয়াকে কেন্দ্র করে উঠে এসেছে সভাপতি শরীফ উদ্দিন রিমনকে নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ।

ঈদের আগে উৎসব ভাতা তোলার জন্য সভাপতির কাছে স্বাক্ষর চাওয়া হলে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেছেন উল্লেখ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক বরাবর একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন পিএম কলেজ নামে পরিচিত দৌলতপুরের এই কলেজটির অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান। চিঠিতে একই সঙ্গে সভাপতির অনিয়ম দুর্নীতির গোমড় ফাঁস করে দিয়েছেন তিনি।

ওই চিঠিতে সভাপতি কর্তৃক দেড় কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যসহ কলেজ কেন্দ্রীক নানা অনৈতিক বাণিজ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে বিভিন্ন সময়ে কলেজের বিভিন্নজনের সাথে অশালীন আচরণ ও হুমকি ধামকি দেয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত ওই চিঠির বর্ণনায়। চিঠিতে স্বাক্ষর সংযুক্তি করা হয়েছে কলেজের ৫৮ জন স্টাফের।

কলেজটির সহকারী অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম, তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের পরিদর্শক শফিউল ইসলামসহ আরো কয়েকজন কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমনের অসহযোগিতার কারণে উৎসব ভাতা না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঈদে উৎসব ভাতা না পাওয়ার ঘটনায় কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা সভাপতির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন। সভাপতি শহরে থাকেন, কলেজের কোনো খোঁজখবরও রাখেন না মন্তব্য করে কলেজ কর্মচারী মিজানুর রহমান সভাপতি শরীফ উদ্দিন রিমনের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণের বিবরণ দেন।

এদিকে অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নানের সাথে সম্প্রতি ফোনআলাপের একপর্যায়ে সভাপতি শরীফ উদ্দিন রিমন অধ্যক্ষকে উলঙ্গ করে সপ্তাহে একবার করে পেটানোর হুমকি দিয়েছেন। ওই ফোনালাপের অডিও রেকর্ডে খবরে ব্যবহার যোগ্য নয় এমন ভাষা ব্যবহার করতে শোনা যায় সভাপতিকে। তবে সুস্পষ্ট হুমকির পরেও এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় না নেয়া প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান জানান, সভাপতি রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাধর হওয়ায় আইনের আশ্রয় নেয়া যাচ্ছে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা।

আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পিএম কলেজের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। এর আগেই সভাপতিকে প্রত্যাহার ও তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন অধ্যক্ষ। আর এ তথ্য গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন অধ্যক্ষ নিজেই।

টানা তিন মেয়াদে কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্বে থাকা অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমন দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। খোদ দলের নেতাকর্মীদের মাঝেও তাকে নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কলেজ সভাপতির দায়িত্বে থেকে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য নেয়ার জন্য দফায় দফায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

আড়াই দশক আগে ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ফিলিপনগর মরিচা ডিগ্রি কলেজে নিয়োগ বাণিজ্যের জনশ্রুতি বেশ পুরনো। বর্তমান অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নানও শরীফ উদ্দিন রিমনের সুসম্পর্কের ব্যক্তি ছিলেন, এমনকি তার নিয়োগেও এই সভাপতির বিশেষ অবদানের কথা ছড়িয়ে আছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। তবে সভাপতির অনিয়ম অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছানোয় এসব নিয়ে এখন অনেকে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

০৬ আগস্ট, ২০২০ at ১৩:৪৫:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআরএস/এমএআর